১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৬:৫৬

ফিনল্যান্ডে থাকা পরিচিত এক বাংলাদেশি লিখেছেন

আমিনুল ইসলাম

ফিনল্যান্ডে থাকা পরিচিত এক বাংলাদেশি লিখেছেন

'ফিনল্যান্ডে না আসলে হয়ত জাতিগত ভাবে অন্য জাতির কাছে আমাদের অবস্থান কতটা উপরে বা নিচে তা বুঝতেই পারতাম না। ১৭ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আমার দেখা মতে একমাত্র সোমালিয়ারাই আমাদের সম্মানের চোখে দেখে। একমাত্র ওদের কাছেই নিজের লেভেলটা উঁচু উঁচু মনে হয়। আমার কাছেও ওরা অনেক আপন!'

আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলা যাক। এই দীর্ঘ প্রায় ১২ বছরের প্রবাস জীবনে কতো ধরনের মানুষের সাথে যে পরিচয় হয়েছে। সেবার প্রথম যখন বিদেশে আসি পড়তে, এক বাংলাদেশি যিনি অনেক দিন ধরে বিদেশে আছেন তিনি বললেন, ভুলেও বাংলাদেশিদের সাথে মিশবেন না!

অথচ তিনি ভুলে বসে আছেন, তিনি নিজেই কিন্তু বাংলাদেশি!

প্লেনে করে দেশে যাচ্ছি, দুবাই ট্রানজিট থেকে অনেক বাংলাদেশি উঠেছে। এদের বেশীরভাগই শ্রমিক। তো আমার পাশে বসে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বলে বসলেন, দেখবেন এখন এদের জ্বালায় টেকাই মুশকিল হয়ে যাবে!

অথচ এই শ্রমিকরাই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে!

সুইডেনে তখন গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করছি। বাংলাদেশি এক নামকরা ব্যবসায়ি, যিনি পরবর্তীতে মন্ত্রীও হয়েছেন; তার সাথে পরিচয় হয়েছিলো। ওই সময়টায় তিনি সুইডেনে থাকছিলেন, কারণ সরকার পরিবর্তন হয়েছে মাত্রই! কোন এক বিচিত্র কারণে এই ভদ্রলোক আমাকে প্রচণ্ড পছন্দ করতেন। তার এই পছন্দের সংজ্ঞা আমার পক্ষে এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তো একদিন খুব ভোর বেলা তিনি গাড়ি নিয়ে আমার বাসায় উপস্থিত হয়ে বললেন, চলো এক সাথে ব্রেকফাস্ট করি।

আমি রাজি হয়ে গেলাম। দুজন মিলে এক দোকানে ব্রেকফাস্ট করলাম। যে দোকানে গিয়েছিলাম, সেখানে একজন বাংলাদেশি কাজ করতো। ওই বাংলাদেশি গিয়ে পুরো বাংলাদেশি কমিউনিটিকে বলেছেন- আমি নাকি রাজনীতিতে নামতে যাচ্ছি!

অথচ ওই ভদ্রলোকের সাথে আমি এই জীবনে রাজনীতি বিষয়ক একটা বাক্য পর্যন্ত বিনিময় করিনি!

আপনি যদি মেয়ে হয়ে থাকেন, আর বিদেশে একা পড়তে এসেছেন! তাহলে তো কথাই নেই। এক বড় আপু, যিনি আমার সাথেই পড়তেন। পড়াশুনায় আমি বরাবরই মোটামুটি ভালো ছিলাম। তো তিনি মাঝে মাঝেই আমার কাছে বুঝতে আসতেন। এই নিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষজন যে কতো গল্প বানিয়েছে তার কোন হিসেব নেই। অথচ আমি এবং ওই আপু নিজে খুব ভালো করে জানতেন, আমার পক্ষে এই ধরনের সম্পর্কে জড়ানো অসম্ভব!

আমার এখানকার বাংলাদেশি ছাত্রদের আমি প্রতিমাসে একবার করে আমার বসায় দাওয়াত দিচ্ছি গত তিন মাস ধরে। প্রথমবার তারা যখন আমার বাসায় আসলো-দেখলাম কি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই না আড্ডা দিচ্ছে। দ্বিতীয় মাসে দেখি তাদের স্বতঃস্ফূর্ততা খানিক কমে গেছে। এই মাসে দেখি-আড্ডা তেমন জমছেই না! কেউ মোবাইল গুতচ্ছে, কেউ অন্য দিকে তাকিয়ে আছে! অর্থাৎ সময় যত গড়াচ্ছে সম্পর্ক গুলো তত বিভক্ত হচ্ছে! অথচ হওয়ার কথা উল্টো!

আজ বিশ্ব অভিবাসী দিবস। পৃথিবীর নানান প্রান্তে যারা প্রবাসে বাস করে তাদের জন্য আলাদা করে এই দিবস। বাংলাদেশিরা যারা বিদেশে থাকি, আমরা নিজেরা যদি নিজেদের সম্মান করতে না শিখি, অন্যরা এসে তো আমাদের নিজ থেকে সম্মান করবে না! এক জনের সাথে আরেকজনের মিলতে নাই পারে, মনোমালিন্য হতে পারে; এটাই তো হিউম্যান রিলেশন। কিন্তু তাই বলে তার সাথে মুখ দেখাদেখি বন্ধ করে বসে থাকা, ইচ্ছে মতো যা ইচ্ছে তাই বলে বেড়ানো মোটেই কাজের কথা না। যেটা আমরা বাংলাদেশিরা লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক; রোম থেকে সিডনি কিংবা দুবাই থেকে আবুধাবি'তে বসেও নিয়মিত করে যাচ্ছি! এভাবে আর যাই হোক, অন্য জাতির কাজ থেকে সম্মান পাওয়া সম্ভব না।

লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

বিডি-প্রতিদিন/১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬/সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর