হঠাৎ করেই ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি আতঙ্ক শুরু হয়েছে। প্রায় প্রতিটি জায়গায় ঘটনাগুলো প্রায় একই রকম। কেউ/কারা এসে একজনকে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন করে। তিনি ঘাবড়ে যেয়ে এলোমেলো উত্তর দেন। এরপর ছেলেধরা বলে চিৎকার শুরু করে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলছে কিংবা মারাত্মকভাবে আহত করছে। যেন 'মগের মুল্লুক'। এটা যে ফৌজদারি অপরাধ, সেটাও মাথায় ঢুকছে না।
চোখের সামনে ছিনতাই হচ্ছে, গাড়ি চাপা দেওয়া হচ্ছে, মানুষ পোড়ানো হচ্ছে, নানা অপকর্ম হচ্ছে, কেউ প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসে না। আর সন্দেহের বশে গণপিটুনি দেওয়ার জন্য মানুষ এগিয়ে আসছে। কি বীরপুরুষ জাতি! সব জোর নিরীহ মানুষের উপর দেখাতে আমার দারুণভাবে পারদর্শী।
আমি সহজভাবে যতটুকু বুঝি, কেউ যদি সত্যি চুরি করতে আসে, সে তো প্রস্তুতি নিয়েই চুরি করতে আসবে। এত বড় অপরাধ করতে এসে সামান্য প্রশ্নের উত্তর দিতে যেয়ে অন্যের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। আর সন্দেহ সৃষ্টি হলে ৯৯৯ ফোন করুন কিংবা পুলিশে ফোন দিন। মানুষ মারার আপনি কে/ আপনারা কারা?
প্রকাশিত তথ্য মতে, গত ২২-০৭-২০১৯ ও ২১-০৭-২০১৯ তারিখ দুই দিনে ছেলেধরা নিয়ে যেসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে কয়েকটির শিরোনাম হচ্ছে:
১। ঘুরতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার ৪ বন্ধু, পিকআপে আগুন।
২। সৈয়দপুরে ছেলেধরা সন্দেহে চারজনকে গণপিটুনি।
৩। চট্টগ্রামে ছেলেধরা সন্দেহে ৫ জনকে গণপিটুনি।
৪। সাভারে ছেলেধরা গুজবে দম্পতিকে গণপিটুনি।
৫। কুষ্টিয়ায় ছেলেধরা সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে গণপিটুনি।
৬। ছেলেধরা সন্দেহে নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন।
৭। ছেলেধরা গুজবে নারায়ণগঞ্জে ২ জনকে গণপিটুনি।
৮। কুমিল্লায় ছেলেধরা সন্দেহে নারীসহ ৪ জনকে গণপিটুনি।
৯। ছেলেধরা সন্দেহে প্রতিবন্ধী বৃদ্ধাকে গণপিটুনি।
১০। ছেলেধরা সন্দেহে ধাওয়া করে ধরে ৬ জেলেকে গণপিটুনি।
১১। রাজশাহীতে ছেলেধরা সন্দেহে দুই যুবককে গণপিটুনি।
১২। এবার ছেলেধরা সন্দেহে ফুল ব্যবসায়ীকে গণপিটুনি।
১৩। মৌলভীবাজারে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে অজ্ঞাত ব্যক্তি নিহত।
গত দু্ই দিনে এ রকম ঘটনা আরো থাকতে পারে। অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, এখন তো নিজের অবুঝ বাচ্চা নিয়েও বাইরে বের হবার অবস্থা থাকছে না। যদি রাস্তায় আপনার বাচ্চা কোন কারণে কান্নাকাটি শুরু করে আর আপনি যদি টার্গেট হয়ে যান, তাহলে গণপিটুনি খাবার আগে আপনি বাচ্চাটির বাবা কিংবা মা, সেটা প্রমাণ করার সুযোগ নাও পেতে পারেন। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ নেই। কাউকে সন্দেহ হলে আইনের আওতায় আনুন। প্রত্যাশা একটাই, ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি আতঙ্ক দূর হোক।
লেখক: উপ-পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব