আজ পর্যন্ত শেয়ার মার্কেট থেকে টাকা পাচার হবার যত সংবাদ পত্রিকায় পড়েছি, সব টাকা যোগ করা হলে দেশ এতদিনে টাকা শূন্য থাকার কথা। সব সময় শুনি হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। গতকালও দেখলাম একটি পত্রিকা নিউজ করেছে ২৭ হাজার কোটি টাকা নাকি শেয়ার মার্কেট থেকে উধাও হয়ে গেছে।
আমি শেয়ার মার্কেট বুঝি না। যখন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম তখন লোভে পরে ওখানে শেয়ার ব্যবসায় বিনিয়োগ করে কিছু ধরাও খেয়েছিলাম। তাই দেশেও কখনো এই ব্যবসায় ঢুকিনি। যাহা বুঝি না তাহা করিনা এই ব্রততেই এখনো আছি।
যারা শেয়ার মার্কেট ভালো বুঝেন, তাদের বেশ কয়েক জনকে আমি চিনি। আজ তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, আসলে টাকা উধাও হবার বিষয়টা কি। যা বুঝলাম তার মোদ্দা কথা হলো টাকা কখনো উধাও হয় না। বিষয়টি জিনিসপত্রের দাম উঠা-নামার মতোই পরিষ্কার। মনে করেন, কাওরান বাজারে আজ একবস্তা চালের দাম এক হাজার টাকা, কাল এটার দাম ৯০০ টাকাও হতে পারে, আবার এরপর দিন ১২০০ টাকাও হতে পারে। দাম কমে যাওয়ার মানে এই না যে কাওরান বাজার থেকে ১০০ টাকার চাল উধাও হয়ে গেছে। আবার দাম বাড়ার মানে এই নয় যে হাওয়া থেকে কাওরান বাজারে ২০০ টাকার চাল চলে এসেছে।
আসলে শেয়ার মার্কেটের টাকা উধাও ব্যবসার লাভ লোকসানের মতোই। অর্থনীতির ভাষায় এটাকে বলে মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন। অর্থাৎ শেয়ার বাজারের সূচক বাড়লে টোটাল ক্যাপিটাল বেড়ে যায়, সূচক কমলে টোটাল ক্যাপিটাল কমে যায়। গ্রামীণ ফোনের মতো বড় কোম্পানির শেয়ারের দাম ১০ টাকা কমে গেলেই টোটাল মার্কেটে নাকি দ্বিগুণ অর্থাৎ ২০ টাকার মতো দরপতন হয়, অন্যান্য কোম্পানির শেয়ার এর দাম না কমলেও এই দরপতনের সূচক নিয়ে মিডিয়াতে হায় হায় রব উঠে যায়।
সবশেষ একটি গল্প দিয়ে শেষ করি, ১৯২৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে শেয়ার বাজারে একবার ব্যাপক পতন হয়েছিল। সব ব্যবসায়ীরা লোকসান করলেও একজন শুধু লাভ করেছিলেন। তিনি হচ্ছেন জোসেফ কেনেডি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির বাবা। সবাই অবাক হয়েছিলেন, যে উনি কিভাবে লাভবান হলেন। রহস্য হলো, একদিন জোসেফ কেনেডি নিউইয়র্ক স্টক মার্কেটে ঢুকার আগে জুতা পলিশ করাচ্ছিলেন। তখন মুচি উনাকে ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করেছিল স্যার আজ কোন শেয়ারটা কিনলে লাভ করা যাবে। উনি এর কোনো উত্তর দেননি।
সরাসরি মার্কেটে ঢুকলেন এবং নিজের সকল শেয়ার বিক্রি করে সব বিনিয়োগ ফেরত নিয়ে আসলেন। এর মাত্র তিনদিন পরই মার্কেটে ব্যাপক পতন ঘটে। তিনি বলেছিলেন, যে দেশে মুচি ( অর্থাৎ যিনি শেয়ার মার্কেট বুঝেন না) শেয়ার ব্যবসায় টাকা বিনিয়োগ করে, সেখানে শেয়ার ব্যবসা কোনদিন লাভবান হবে না। সফল এই ব্যবসায়ী এরপর আর কোনো দিন শেয়ার ব্যবসা করেননি।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/২৫ জুলাই, ২০১৯/আরাফাত