২১ আগস্ট দিবাগত রাতে মধ্যে প্রহর চলে তখন। ঠিক সে সময় একটা খুন হয়। পরদিন সংবাদ পাওয়া মাত্রই যখন ঘটনাস্থলে যাই, এমন কিছু দেখব ভাবি নাই। এতটাই বিভৎস ছিল যে সকালের নাস্তা, এমনকি দুপুরের খাবার খেতে পারি নাই।
একজন আলেম, মাওলানা, ধর্মপ্রাণ মানুষের ক্ষত-বিক্ষত, রক্তাক্ত লাশ! যে মানুষটা ফজরের নামাজের জন্য দাঁড়ানোর কথা ছিল সেই মানুষটাকেই মাঝরাতে নির্মম ভাবে খুন।
৬ দিনপূর্বে সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের মল্লিকপাড়া বাইতুল জালাল জামে মসজিদের ইমাম দিদারুল ইসলামকে নির্মমভাবে জবাই করে হত্যা করা হয়।
একটা নিরপরাধ মসজিদের ইমামের হত্যা রহস্য উন্মোচন করতে বদ্ধপরিকর ছিলাম। নিরপরাধ এই মানুষটার রক্তাক্ত ডেডবডি দেখি ওইদিনই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত যেই হোক, যেখানেই থাকুক। বের করে নিয়ে আসবো। সোনারগাঁও থানা পুলিশ নিয়ে কাজ শুরু করি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশ ক্রমে।
বন্ধু যখন ঘাতক!
ইমাম দিদারুল ইসলামের কাছ থেকে টাকা ধার নেন তার বন্ধু ওহিদুর জামান। পাওনা টাকা না দিতেই লোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ড। নিহত ইমাম দিদারুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরেই তার পাওনা টাকা চেয়ে আসছিলেন। পূর্বপরিকল্পিত ভাবে কোকের মধ্য ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে নিয়ে আসে খুনি। যে কোকে ওষুধ মেশানো ছিল সেটা ইমাম দিদারুল ইসলামকে খেতে দেয়, অপরটি সে খায়। খাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে দিদারুল ইসলাম ঘুমিয়ে পড়লে তার শয়ন কক্ষে রাখা ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে হত্যা করে। গত বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে। মাথা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রেখে দেয়।
খুনি ওহিদুর জামান মাদারীপুর শিবচর এলাকার একটি মসজিদের ইমাম। মসজিদের ইমাম দিদারুল ইসলামকে জবাই করে হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ঘাতককে বুধবার (২৮ আগস্ট) ভোরে মাদারীপুর শিবচর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার ভাষ্যমতে, মতে বুধবার দুপুরে মল্লিকপাড়া মসজিদের পাশের ডোবা থেকে রক্তমাখা লুঙ্গি ও কোকের বোতল আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) মহাদোয় সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর হিসেবে গ্রহণ করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুল্লাহ আল মামুন স্যারকে ও আমাকে নির্দেশ প্রদান করেন তদন্ত দলের সঙ্গে থেকে মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেফতারের। নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপারের নির্দেশ মোতাবেক অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে ক্লু-লেস মামলার আসামি গ্রেফতার করি আমরা।
সোনারগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও এসআই আবুল কালাম আজাদের সাহসী পদক্ষেপ এবং টাইম টু টাইম আপডেট ফলো করে আসামিকে আটক করতে সক্ষম হবার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
লেখক : অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, খ-সার্কেল, নারায়ণগঞ্জ।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত