২৮ নভেম্বর, ২০২১ ১৯:১৭

একজন গর্বিত বাংলাদেশি

সাকি সাজ্জাদীন

একজন গর্বিত বাংলাদেশি

সাকি সাজ্জাদীন

আজ সবাইকে একটি গল্প বলবো, একটি গর্বের, আনন্দের ও বিজয়ের গল্প। আমার এবং আমার পরিবারের কাছের সবাই কম বেশি জানেন বিগত ৪ মাস আমি এবং আমার শিপের বাকি ক্রু রা কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম, কিভাবে একটি এরোগ্যান্ট দেশ আরেকটি বুরোক্রেট দেশের সহায়তায় একজন ক্যাপ্টেন ও তার ক্রুদের পিছনে লাগতে পারে। আজকে আমি সেই দুই দেশের ব্যাপারে কিছুই বলবো না, আজ আনন্দ ও শুকরিয়ার সঙ্গে শুধু বলবো কিভাবে আমার দেশ আমার মত একজন নিতান্ত সাধারণের পক্ষে দাঁড়িয়ে বাইরের দেশে বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে আনলো। হ্যাঁ সত্যিই লড়াই ছিল, কূটনৈতিক লড়াই। 

আমি অনেক আবেগাপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম যখন বাংলাদেশের জাকার্তা দূতাবাস থেকে ডেপুটি হাই কমিশনারের নেতৃত্বে ৪ জন প্রতিনিধি বাতাম আইসল্যান্ডে আমাদের ৩ জন বাংলাদেশির সাথে অফিসিয়াল কনস্যুলার একসেস নিয়ে দেখা করতে আসে। কখনোই ভুলবো না বাংলাদেশ জাকার্তা মিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার কাজী আনারকলি ম্যাডামের সেই বলিষ্ঠ কণ্ঠ, মনমুগ্ধ ভাবে শুধু শুনছিলাম কতটা শক্তিশালী ভাবে তিনি আমাদের জন্যে বাংলাদেশের পক্ষ হতে ইন্দোনেশিয়া সরকার কে প্রশ্ন করে। যখন অফিসিয়াল মিটিং শেষ করে জাকার্তা থেকে অ্যাম্বাসেডর ফোনে আপডেট নিচ্ছিল তখন উনার প্রথম কথাটি ছিল ভিডিও কলে উনি আমাদের ৩ বাংলাদেশিকে একটু দেখতে চান। এই ছোট্ট একটি কথায় খুঁজে পাওয়া যায় উনি শুধুমাত্র উনার ডিউটি পালনে আগ্রহী নয়, উনি খুবই আন্তরিক দেশের মানুষের জন্যে ভালো কিছু করার, সেটা শুধু প্রফেশনালিসম দিয়ে নয়, আন্তরিকতা ও ব্যবহার দিয়েও। অক্টোবর মাস পুরোটাই প্রায় প্রতিদিন উনাদের সাথে কথা হতো। তাদের আন্তরিকতা দেখে মনে হয়েছে আমার পরিবারের কোন সদস্য এরকম পজিশনে থাকলে আমার জন্যে যা করতো উনারা তাই করেছেন। আমাদের দেশের ফরেন মিনিস্ট্রি, বিশেষ তরে ফরেন সেক্রেটারি স্যার, ডিজি স্যার যেভাবে আমাদের ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করেছে সেখানে প্রফেশনালিজমের চেয়ে অনেক বেশি ছিল আন্তরিকতা। নিতান্ত সাধারণ ৩ জন নাগরিকের জন্যে আর আন্তরিকতার সাথে কাজ করলে, বিশেষ করে কারও উপকার করতে চাইলে সফলতা আসবেই। 

এ তো গেল বাংলাদেশ ফরেন মিনিস্ট্রি আর ইন্দোনেশিয়া দূতাবাসের কথা। ইউ কে দূতাবাস কোনভাবেই এই ঘটনায় জড়িত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ইউ কে অ্যাম্বাসেডর মিসেস সাদিয়া মুনা তাসনীম ম্যাডাম এই ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন, তিনি প্রতিদিন অনেকটা রুটিন করেই জাকার্তা দূতাবাস ও অন্যান্য কনসার্ন অথরিটির সাথে মিটিং করে আমার আম্মুকে প্রতিদিন আপডেট দিতেন, আপডেট না বলে বলা উচিত আস্থা ও ভরসা দিতেন। কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশের কোন হাইকমিশন নেই, ব্যাংকক এ্যাম্বাসি সেটা হ্যান্ডবল করে। ব্যাংকক এ্যাম্বাসির কনস্যুলার ইশতিয়াক আহমেদ ভাই প্রতিদিন খবর রাখতেন আমাদের, কল করে ভরসা দিতেন পরিবারকে। অনারেবল সেক্রেটারি অফ ফরেন মিনিস্ট্রি আমাদের কেইস টাকে যেন নিয়েছিলেন উনার ব্যক্তিগত কেইস হিসাবে, উনার আন্তরিকতা দেখেই একথা বললাম।

এতোক্ষণ যাদের কথা বললাম তারা সবাই বাংলাদেশ ফরেন মিনিস্ট্রি কিংবা দূতাবাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা। এখন বলবো একজন জেড এইচ রফিক ভাইয়ের কথা। উনি কম্বোডিয়ায় বসবাসকারী একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। বলা যায় সেখানকার অঘোষিত বাংলাদেশি এ্যাম্বাসেডর, সত্যিই তাই যিনি নিজ গরজে ভিনদেশে নিজের দেশকে রিপ্রেজেন্ট করছে। গত ফেব্রুয়ারি তে পাসপোর্ট রিনিউয়ের ব্যাপারে তিনি হেল্প করেছিলেন। পরবর্তীতে আমরা কম্বোডিয়া-ইন্দোনেশিয়া সমস্যার পরলে তিনি নিয়মিত খবর নিতেন এবং বলতেন কিভাবে এ্যাম্বাসির সাহায্য নিতে হবে, ইনফ্যাক্ট তিনিই প্রথম ব্যাংকক এ্যাম্বাসিকে আমাদের ব্যাপারটি অভহিত করেন। 

BMMOA এর প্রেসিডন্ট ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী স্যারের সাথে আমার কোন পরিচয় ছিল না। কিন্তু আমার মাধ্যমে না হলেও যখন উনি ব্যাপারটি জানতে পারলেন তখন তিনি আর চুপচাপ থাকলেন না। তিনিও নেমে পড়লেন উদ্ধার কাজে, সাহস ও আস্থা দিলেন আমার পরিবার কে।

ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী স্যার ও ক্যাপ্টেন মইন আহমেদ স্যার আম্মুর সাথে সরাসরি কথা বলেছেন এবং আস্থা ও অভয় দিয়েছেন।

সঙ্গত কারণে নাম উল্লেখ না করেই একজন বড় কর্মকর্তার একটি কথা উদ্ধৃতি করছি, It’s an victory of Bangladesh over Cambodia in a diplomatic war. সত্যিই তাই, যে দেশের এ্যাম্বাসিগুলো ৩ জন নিতান্ত সাধারণ নাগরিকের জন্যে এতো আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে সেই দেশ ডিপ্লোমেট ওয়ারে জিততে বাধ্য। আগে ভাবতাম ইউরোপ আমেরিকার নাগরিকেরই শুধু ভিনদেশে তাদের এ্যাম্বাসির সাপোর্ট পায়, কিন্তু যখন সঙ্গত পরিস্তিতিতে নিজেই পড়লাম তখন বুঝলাম আমার দেশ তাদের থেকেও সেরা। এতোসব এ্যাম্বাসির ইনভোল্ভমেন্ট দেখে নিজেকে হঠাৎ ভিআইপি মনে হতে লাগলো। সত্যিইতো আমি ভিআইপি। আমি একজন সাধারণ বাংলাদেশি - আর এই পরিচয়টাই আমাকে ভিআইপি মর্যাদা দিয়েছে বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে - শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা তাদের সবার প্রতি ও আমার দেশের প্রতি। 

ভারতীয় বন্ধুদের সাথে কাজ করার সময় মনে হতো আমি ভারতীয় হলে মনে হয় অনেক আগেই ক্যাপ্টেন হয়ে যেতে পারতাম, আমাদের পাসপোর্টের মান ভালো না, অনেক দেশ ভিসা নিয়ে সমস্যা করে ইত্যাদি ইত্যাদি - কিন্তু আজ খুব আনন্দের সাথে চিৎকার করে বলছি।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর