কর্মক্ষেত্রে চাকরি চলে যাওয়ার নানান কারণ প্রচলিত আছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায়। কেউ দেরি করে আসার জন্য, কেউবা সহকর্মীদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করার জন্য চাকরি হারায়। কিন্তু শরীরে ট্যাটু আঁকার জন্যও চাকরি যায় এমন উদাহরণ খুব বেশি একটা নেই। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের কারলা ভ্যালেন্টাইন নামক এক ব্যক্তি ট্যাটুর কারণে চাকরি হারিয়েছেন।
কারলার জবানিতে, ‘আমার শরীরে একটু বেশিই ট্যাটু আঁকা আছে। আমি একটা স্কুলে চাকরি করলাম। শীতকালে পুরো শরীরই যেহেতু কাপড়ে ঢাকা ছিল তাই ট্যাটু নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু গ্রীস্মের সময়ে যখন স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার হাতদুটো দেখলো তখনই বাধলো বিপত্তি। আমাকে স্কুলের ড্রেস কোড বিধি মোতাবেক অভিযুক্ত করা হলো। সেই অভিযোগপত্রে বলা হলো যে, আমার শরীরের ট্যাটু কোনো ভালো উদাহরণ নয়। আমাকে ট্যাটুগুলো ঢেকে আসতে হবে। এক সপ্তাহ পর স্কুলের প্রধানশিক্ষকের কক্ষে আমাকে তলব করা হলো। সেখানেও ট্যাটু নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়। তখন মনে হলো এই বৈষম্য নিয়ে আসলে আমার পক্ষে চাকরি করাই মুশকিল। অথচ স্কুলের বাচ্চাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো ছিল।’
অন্য আরেক ব্যাক্তি অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের স্যাম। তাকেও চাকরিচ্যুত করা হয় তার শরীরের ট্যাটুর কারণে। এমনকি ট্যাটুর কারণে প্রাপ্ত বেতন থেকে একটা অংশ কেটেও রাখা হতো। তবে এক্ষেত্রেও স্যাম যেহেতু একটি চাইল্ডকেয়ারে কাজ করতো তাই ধর্ম এবং শিশুদের ওপর প্রভাব পরতে পারে এই অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় স্যামকে। এরপর একটা সময় চলে যায় তার চাকরি।
শুধু তাই নয়, চাকরির ইন্টারভিউ থেকেও ট্যাটুর কারণে বাদ দেয়া হয় অনেককে। ইউরোপে ট্যাটুর প্রচলন অনেক প্রাচীন হলেও, আধুনিক ইউরোপে ট্যাটুকে এখনও জিপসি কালচার বা পাঙ্ক কালচার হিসেবে দেখা হয়। আর একথা সবাই জানে যে, ইউরোপে জিপসি ও পাঙ্কদের কোন দৃষ্টিতে দ্যাখে। এমনও নজির দেখা যায় যে, ট্যাটু করার কারণে হয়তো চাকরি যায় না। কিন্তু বছরের পর বছর চাকরি করার পরেও তার বেতন বাড়ানো হয় না কিংবা তার পদোন্নয়নও করা হয় না। যেমন যুক্তরাজ্যের অ্যামি পার। অ্যামি একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন। রেস্টুরেন্ট মালিক চাকরির শুরুতে অ্যামিকে বলেছিলেন, যখন অ্যামির বয়স ১৮ পূর্ণ হবে তখন তার পদোন্নয়ন করা হবে। কিন্তু বয়স ১৮ হলেও তার বেতন বাড়ানো এবং পদোন্নয়ন করা হয়নি। শেষমেষ মালিকের দারস্থ হলে, মালিক অ্যামিকে সোজা জানিয়ে দেন, তার শরীরের ট্যাটু খদ্দেরদের ওপর বাজে প্রভাব ফেলছে তাই তারে বেতন বাড়ানো হচ্ছে না।
ট্যাটু নিয়ে এরকম অনেক ঘটনাই পুরো ইউরোপ জুরে প্রচলিত আছে। হাতের ওপরে স্রেফ ছোটো একটু ট্যাটু থাকার কারণে বিয়ের আসর থেকে বিয়েও ভেঙে যাওয়ার রেকর্ডও আছে। তবে আশার কথা হলো, যতদিন যাচ্ছে ট্যাটু কালচার ততই জনপ্রিয় হচ্ছে মানুষের কাছে। কারণ কিছুটা দেরিতে হলেও মানুষ বুঝতে শুরু করেছে ট্যাটু শুধু ফ্যাশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ট্যাটুর রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ইতিহাস।