শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

ধর্মীয় ব্যক্তিদের একই কায়দায় খুন

ধর্মীয় ব্যক্তিদের একই কায়দায় খুন

দেশে একের পর ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও উদ্ঘাটন হচ্ছে না এর কোনোটিরই রহস্য। চাঞ্চল্যকর এসব মামলার তদন্ত ফাইল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও গোয়েন্দা বিভাগের হিমাগারে জমা হয়ে আছে বছরের পর বছর। আশ্চর্য হলেও সত্য, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতার রূপ একই। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কোনো আসামি গ্রেফতার কিংবা নেপথ্যের ঘটনা উদ্ঘাটিত না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষতার বিষয়ে আঙুল তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। অপরাধ-বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিহত ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের প্রত্যেককেই খুন করা হয়েছে একই কায়দায়। একই গোষ্ঠীর ঘাতকদের হাতে তারা খুন হয়েছেন বলে ধারণা তাদের। ঘাতকদের স্টাইল অনেকটাই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থিদের মতো, এমন কথাই বলছেন তারা। তবে তাদের পেছনেও অবশ্যই কাজ করেছে কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উচিত বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা। নইলে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড আরও বাড়তে পারে। তবে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক জানান, ‘মোহাম্মদপুরের পীর চিশতী, গোপীবাগের সিক্স মার্ডার এবং সর্বশেষ রাজাবাজারের মাওলানা ফারুকের হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে, তারা পেশাদার ও একই মতাদর্শের বলে আমাদের ধারণা। এরা কোনো ধরনের ক্লু রেখে যায়নি। তবে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত পুলিশ আন্তরিকতা এবং সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে করছে।’ ২০০০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেরশাহ্ সুরী রোডের বাসায় নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয় পীর আলহাজ মুজিবুর রহমান চিশতী (রহ.)-কে। ওই হত্যাকাণ্ডের বাদী হয়েছিলেন ময়মনসিংহ ভালুকার সাবেক সংসদ সদস্য আমান উল্লাহ চৌধুরী। বিশেষ করে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত বেনজির ভুট্টো ১৯৯১ সালে জয়পুরহাট সদরে ওই পীরের গ্রামের বাড়িতে সাক্ষাৎ করার জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন। এর পর থেকেই ওই পীরের নাম দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তা-ই নয়, ওই পীরের অন্যতম ভক্ত ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তবে গত ১৪ বছরে আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডের কোনো সুরাহা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনরা। বর্তমানে মামলাটি সিআইডিতে তদন্তাধীন। গত বছর ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর গোপীবাগের ৬৪/৬ রামকৃষ্ণ মিশন রোডের বাসায় কথিত ইমাম মাহ্দী পীর লুৎফর রহমান এবং তার ছেলেসহ ছয়জনকে গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তবে এত দিনেও হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গোপীবাগ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া খুনিরা নিহত লুৎফর রহমান ও তার তিন সার্বক্ষণিক সঙ্গীর পূর্বপরিচিত ছিল। আগেও একাধিকবার ঘাতকরা ওই বাসায় গিয়েছিল। লুৎফরের ধর্মীয় মতবাদের অনুসারী হওয়ার জন্য তারা দরবারকক্ষে বসে বিভিন্ন সময় কথা বলেছিল।  গত বছর ৮ আগস্ট ঈদুল ফিতরের আগের দিন খুলনার খালিশপুরে তৈয়াবুর রহমান (৭০) ও তার ছেলে নাজমুন মনিরকে (১৩) গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল দুই অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত। ঘাতকরা ভক্ত হিসেবেই ওই বাসায় প্রবেশ করেছিল। তৈয়াবুর রহমান মুসলিম উম্মাহ নামের একটি ধর্মীয় সংগঠনের প্রধান ছিলেন।
ওই সংগঠনের সদস্যরা শনিবার জুমা ও প্রতিদিন তিন ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। ১০টি রোজা রাখতেন। নিজেকে মুমিনদের নেতা দাবি করতেন তৈয়াবুর।
এর আগে গত বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার আহমেদ হায়দার শোভন হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, এ ঘটনা ধর্মীয় উগ্রপন্থিরাই ঘটিয়েছে।

সর্বশেষ খবর