সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা সংস্কার আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। গত বছর আজকের এদিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণা করেছিল ‘সর্বাত্মক বাংলা ব্লকেড’। কর্মসূচি সফল করতে অনলাইন-অফলাইনে সারা দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গণসংযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি আজকের এদিনে ঢাকাসহ দেশের অনেক জেলায় পালিত হয় ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন দেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মহাসড়ক।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে নীরব প্রতিবাদ সমাবেশ করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। হাই কোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে ওইদিন নিজ উদ্যোগে আবেদন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী।
৯ জুলাই, বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ১০ জুলাই সকাল-সন্ধ্যা ‘সর্বাত্মক বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালিত হবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ এর আওতাভুক্ত থাকবে। দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী সড়ক অবরোধ করা হবে।
সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সবদিক পর্যালোচনা করে ৫ শতাংশ কোটার যৌক্তিকতা খুঁজে পেয়েছি। কেবল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা প্রযোজ্য হতে পারে। এই তিন ক্ষেত্র বাদে বাকি যেসব কোটা রয়েছে তা বৈষম্যমূলক। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে ১০ মিনিটের নীরব সমাবেশের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। লিখিত এক বিবৃতিতে মেধার মূল্যায়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে দ্রুত রায় দেওয়ার জন্য আদালতের প্রতি আহ্বান জানান। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দেন লাগাতার অবরোধের।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী।
কোটা সংস্কারের দাবিতে সমন্বিত আন্দোলনের ডাক দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে রাবি শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন চলাকালে সেখানে শোডাউন দেন বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের রাবি শাখার নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের নেতৃত্বে সেই শোডাউনে অংশ নিতে দেখা যায় শতাধিক ছাত্রলীগ কর্মীকে।
কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে তাদের এ অবরোধ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কারের দাবিতে হবিগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
পরদিন ১০ জুলাই সর্বাত্মক বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি সফল করতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) গণসংযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের সামনের সড়ক অবরোধ করেন বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা। মহাসড়কের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) গেটের সামনের সড়ক অবরোধ করেন ববি শিক্ষার্থীরা। দুপুর থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তাদের অবরোধ কর্মসূচি। দিনভর মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদী গান-কবিতা আবৃত্তি করেন তারা। সন্ধ্যার পর মশাল মিছিলের মধ্য দিয়ে অবরোধ তুলে নেন তারা।
এদিকে জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে একাধিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। আজ বিএনপি নেত্রী ফারজানা পুতুল ও ‘মায়ের ডাকের’ সানজিদা তুলির তত্ত্বাবধানে সেমিনার করবে বিএনপি। জুলাই শহীদ ও আহত পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, মতবিনিময় ও দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।