বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

সম্প্রচার নীতিমালা ছাড়া দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা যায় না : প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নীতিমালা ছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সম্প্রচার কার্যক্রমের স্বাধীনতা, বহুমুখিতা, দায়বদ্ধতা এবং দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা যায় না। এই উদ্দেশে নীতিমালাটি প্রণয়ন করা হয়েছে।’ আওয়ামী লীগ সরকার সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। তিনি বলেন, সমালোচকরা আজকে যেসব প্রশ্ন উত্থাপন করছেন নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করার সময় তা উত্থাপন করা হয়নি।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে গতকাল প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে নূরুল ইসলাম মিলনের প্রশ্নের লিখিত জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘সরকার জনসাধারণ ও সম্প্রচার মাধ্যমের কল্যাণের জন্য নীতিমালাটি প্রণয়ন করেছে। বিগত কয়েকটি সরকারের আমলে নীতিমালাটি প্রণয়নের জন্য সম্প্রচার সেক্টর থেকে দাবি উত্থাপিত হয়েছিল। এ জন্যই নীতিমালাটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এ নীতিমালার ধারাবাহিকতায় একটি ‘স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন’ গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের কাজ চলছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই যাতে পরামর্শ প্রদান করতে পারেন, যাতে নীতিমালায় কোনো অসম্পূর্ণতা থেকে থাকলে আইনের মাধ্যমে তা পূরণ করা যায়। আমরা বিশ্বাস করি এই নীতিমালা জারি করার ফলে আমাদের গণমাধ্যম অধিক দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে দেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।’ সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সব নাগরিকের চিন্তা ও বিবেক, বাক এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলো মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আদর্শ ও চেতনা এবং বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক,  ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক ঐতিহ্য, মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা সেগুলোও বিচার-বিবেচনা করা প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে সরকারেও দায়িত্ব রয়েছে। এসব বিষয়কে বিবেচনায় সম্প্রচার মাধ্যমের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি সুষম নীতিমালা থাকা বাঞ্ছনীয়। নীতিমালা ছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সম্প্রচার কার্যক্রমের স্বাধীনতা, বহুমুখিতা, দায়বদ্ধতা এবং দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা যায় না। এই উদ্দেশে নীতিমালাটি প্রণয়ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী।’ প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা’র খসড়া প্রণয়নের লক্ষ্যে ২০১২ সালের ১ নভেম্বর ১৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিশিষ্ট সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, এনজিও প্রতিনিধি, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, তথ্য ও  যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এ কমিটি নীতিমালার একটি প্রাথমিক খসড়া প্রণয়নের জন্য একটি উপ-কমিটি গঠন করে। উপ-কমিটি বিবিসিসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নীতিমালা পর্যালোচনা করে একটি প্রাথমিক খসড়া প্রণয়ন করে। এরপর নীতিমালার খসড়াটি ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে সর্বসাধারণের মতামত আহ্বান করা হয় এবং পরবর্তী ২১ দিন পর্যন্ত তা ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয়।
সীমান্তে হত্যা বন্ধের তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর : এদিকে নয়া দিল্লির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সীমান্তে হত্যাকাণ্ড দ্রুততম সময়ের মধ্যে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে ভারতকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিবেশী দেশটির স্বরাষ্ট্র সচিব অনিল গোস্বামী গতকাল দেখা করতে গেলে তিনি বলেন, সীমান্ত হত্যা দ্রুত শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্সের’ কথা ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিবকে জানান। স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠকে অংশ নিতে ঢাকায় আসা অনিল গোস্বামী দুপুরে আনুষ্ঠানিক আলোচনার পর বিকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।
সন্ধ্যায় তিনি যান জাতীয় সংসদ ভবনে, সেখানেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ভূখণ্ড কখনোই কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহৃত হতে দেওয়া হবে না। মাদককে এ অঞ্চলের একটি বড় সমস্যা হিসেবে তুলে ধরে তা পাচার রোধে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মিয়ানমারের যৌথ উদ্যোগের ওপরও জোর দেন তিনি। অনিল গোস্বামী স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। সাক্ষাতের সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের মহাপরিচালক ডি কে পাঠক ও ঢাকায় ভারতের রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ উপস্থিত ছিলেন।

প্রণীত খসড়া নীতিমালার ওপর কমিটির অন্যতম সদস্য আন্তর্জাতিক এনজিও আর্টিকেল-১৯-এর উদ্যোগে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। ওই কর্মশালায় গণমাধ্যমের বিশিষ্ট সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, নারীসমাজের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট অনেকে অংশগ্রহণ করেন। তাদের মতামতের সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে তিনটি সভা করে কমিটি এ নীতিমালার খসড়াটি মন্ত্রণালয় পর্যায়ে চূড়ান্ত করে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘চলতি বছর ১২ জুন তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় নীতিমালার খসড়াটি পর্যালোচনা করা হয় এবং কতিপয় পর্যবেক্ষণসহ নীতিমালাটি অনুমোদনের সুপারিশ করে। স্থায়ী কমিটির ওই সভার পর্যবেক্ষণগুলো বিবেচনায় নিয়ে খসড়া নীতিমালাটি আরও সমৃদ্ধ করা হয়। এরপর রুলস অব বিজনেস-১৯৯৬ মোতাবেক এ নীতিমালার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, অর্থ বিভাগ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা সম্প্রচার নীতিমালার খসড়াটি গত ৪ আগস্ট মন্ত্রিসভা  বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। মন্ত্রিসভা খসড়াটির সামান্য সংশোধনসহ অনুমোদন করে।’

সর্বশেষ খবর