বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সৌদি জোট সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা নেই

জুলকার নাইন

সৌদি জোট সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা নেই

মেজর জে. আবদুর রশিদ (অব.)

সৌদি আরবের উদ্যোগে ৩৪টি দেশের সন্ত্রাসবিরোধী যে জোটে বাংলাদেশ যোগ দিয়েছে তা সক্রিয় কোনো জোট হবে না বলে মনে করেন নিরাপত্তা ও সামরিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, হঠাৎ করেই এমন জোট তৈরি হওয়াটা সবার জন্যই বিস্ময়ের। এর গঠন প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে সহজেই উপলব্ধি করা যায় এটি কোনো সক্রিয় জোট হবে না। গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে মুঠোফোনে এসব কথা বলেন সাবেক এই শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তা। মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ বলেন, ইসলামী দেশগুলোর এই জোট তৈরির পিছনে মূল যে বিষয় কাজ করেছে বলে আমার ধারণা তা হলো— ইসলামী ফোবিয়া দূর করা। বর্তমান সময়ে ইসলামকে ব্যবহার করে যে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার ফলে ইসলামী রাষ্ট্র ও মুসলমানদের প্রতি ভিন্ন ধর্মীদের এক ধরনের বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে। এই ধারণার ফলে সৃষ্ট পরবর্তী প্রতিক্রিয়াগুলো রোধ করতে মুসলিম দেশগুলোর এই জোট মনস্তাত্ত্বিকভাবে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, সামরিক জোট হিসেবে সৌদি নেতৃত্বাধীন এ জোটের কার্যকারিতা দেখার খুব একটা আশা আমি করছি না। কারণ, ৬৫ দেশের সমন্বয়ে মার্কিন যে আইএস বিরোধী জোট আছে সেখানেও অনেক নিষ্ক্রিয় দেশ সদস্য হিসেবে আছে। এক্ষেত্রে পরিবেশ, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক এবং আইএসের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে এই হটারোজিনিয়াস বা অসমসত্ত্ব জোট তৈরি হয়েছে। এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, অনেকে মনে করছেন, আইএস বিরোধী জোটে যোগ দেওয়ার ফলে বাংলাদেশ আইএসের আক্রোশে পড়ে কিনা। কিন্তু এই জোটের কারণে এ ধরনের আক্রোশে পড়ার তেমন কোনো ঝুঁকি আমি দেখছি না। তিনি বলেন, জোটের গঠন, রূপরেখা ও কর্মপরিধি কিছুই আমাদের জানা নেই। বাংলাদেশের ভূমিকা কী হবে তা নিয়েও কোনো বিতর্ক বা আলোচনা এদেশে হয়নি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শুধু সৌদি আরবে একটি সেন্টার স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। এতেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের এতে তেমন কোনো সক্রিয় ভূমিকা থাকবে না। তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক জোটের চেয়েও সামরিক জোট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘ তর্ক-বিতর্কের প্রয়োজন হয়। কে জোট পরিচালনা করবে, কোন প্রক্রিয়ায় সৈন্য সংগ্রহ করা হবে, রসদ ও অর্থায়ন করবে কারা এগুলো নিয়ে সুস্পষ্ট আলোচনা প্রয়োজন। কিন্তু নতুন এই জোট নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তেমন কোনো আলোচনা আমরা দেখিনি। এসব কারণেই সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটকে কার্যকরি বা আলোর মুখ দেখতে আরও অনেক সময় প্রয়োজন আছে, ততদিন এটি নিষ্ক্রিয়ই থাকবে। প্রসঙ্গত, সৌদি আরব, বাহরাইন, বাংলাদেশ, বেনিন, চাদ, কোমোরোস, আইভরি কোস্ট, জিবুতি, মিসর, গ্যাবন, গিনি, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালি, মরক্কো, মৌরিতানিয়া, নাইজার, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, কাতার, সেনেগাল, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, সুদান, টোগো, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেনকে নিয়ে ৩৪ দেশের একটি সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সামরিক জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়াসহ আরও ১০টি মুসলিম দেশ এই জোটকে সমর্থন করেছে। এই জোটে নিজেদের নাম দেখে গতকাল বিস্ময় প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। সেখানকার পররাষ্ট্র সচিব আইজাজ চৌধুরী বলেছেন, জোট গঠনের বিষয়ে পাকিস্তানের পরামর্শ নেওয়া হয়নি।

সর্বশেষ খবর