মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : জিএমকাদের

জাপার মন্ত্রীরা পদত্যাগ না করলে ব্যবস্থা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জাপার মন্ত্রীরা পদত্যাগ না করলে ব্যবস্থা

জাতীয় পার্টির নবনিযুক্ত কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, দুই বছরে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির মূল্যায়ন শূন্য। সত্যিকার অর্থে জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল হিসেবে জনগণের আস্থা অর্জন করতে জাপার মন্ত্রীদের মন্ত্রিসভা থেকে বের করে আনার উদ্যোগ নেব। মন্ত্রীরা বের হয়ে না এলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্বকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য জি এম কাদের বলেন, দায়িত্বটা একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এই মুহূর্তে জাতীয় পার্টির যে ভাবমূর্তি দেশবাসীর কাছে তা খুব ইতিবাচক বলা যায় না। জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা ধরনের বিভ্রান্তি আছে। রাজনীতির মূল সে াতধারা থেকে জাতীয় পার্টি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জনসমর্থনের দিক থেকেও পার্টি পূর্বের শক্তিশালী অবস্থানে নেই। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জাতীয় পার্টির রাজনীতিকে স্পষ্ট করতে হবে। যেখানে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির ভিতরে ফাটল আছে। জাতীয় পার্টির রাজনীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। এ বিষয়ে আমাকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। জনগণ যেভাবে চায় সেভাবে দলকে এগিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি সামনে সত্যিকারের বিরোধী দল হতে পারে। জনগণের আস্থা অর্জন করা যায় সেসব কাজ করতে হবে। জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সরকারের সত্যিকারের সমালোচনা করব। ভালো কাজের প্রশংসা করব। সংসদের বাইরেও সরকারের গঠনমূলক সমালোচনায় সোচ্চার থাকব। তবে আমরা সহিংস পথে প্রতিবাদ করব না। দাবি আদায়ে আমাদের প্রতিবাদ হবে অহিংস। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যরা বলছেন, আপনাকে যেভাবে কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছে তা দলের গঠনতন্ত্র বিরোধী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পার্টির চেয়ারম্যানকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষমতাবলে চেয়ারম্যান যে কাউকে যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে আনতে পারেন। পরে পার্টির প্রেসিডিয়ামের বৈঠক বা সম্মেলনে তা পাস করতে হয়। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি থেকে যারা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন তারা গঠনতন্ত্র মানেননি। গঠনতন্ত্রে আছে জাতীয় পার্টি থেকে অন্য দলের সরকারে মন্ত্রী হলে দলের প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে আলোচনা করতে হবে এবং পার্টি চেয়ারম্যানের লিখিত নিতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরা না প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে আলোচনা করে হয়েছেন, না পার্টির চেয়ারম্যানের লিখিত নিয়েছেন। এ জন্য গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মন্ত্রীদের দলের প্রাথমিক সদস্য পদ বাতিল হয়ে  গেছে। তিনি আরও বলেন, আমার কো-চেয়ারম্যান হওয়াকে যারা গঠনতন্ত্র বিরোধী বলছেন, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আমাকে যেভাবে কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছে একইভাবে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়েছে। একইভাবে নির্বাচিত মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে জিয়াউদ্দিন বাবলুকে পার্টির মহাসচিব করা হয়। মন্ত্রীরা মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে আসতে না চাইলে কী করবেন, জানতে চাইলে জি এম কাদের বলেন, দলীয়ভাবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটিতে আপনাকে আহ্বায়ক এবং সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। আগামীতে মহাসচিব পদে পরিবর্তন আসতে পারে কিনা জানতে  চাইলে বলেন, পার্টি চেয়ারম্যান যে কোনো সময় মহাসচিব পদে পরিবর্তন আনার ক্ষমতা রাখেন। তিনি বলেন, সম্মেলন হবে। প্রত্যেক জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা আসবেন। জাতীয় পার্টি আবারও ভাঙতে পারে কিনা জানতে চাইলে সাবেক এই মন্ত্রী একটু হেসে বলেন, পল্লীবন্ধু এরশাদ যেখানে সেটাই জাতীয় পার্টি। এর বাইরে আর কোনো জাতীয় পার্টি নেই। বিরোধী দল হিসেবে দুই বছরে জাতীয় পার্টির মূল্যায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, আমার ব্যক্তিগত অভিমত বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির অবদান শূন্য। জাতীয় পার্টি বিরোধী দল নয়। আজ পর্যন্ত কোনো বিলে ‘না’ ভোট দিতে পারেনি। আমরা সংসদে সরকারের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছি। আবার রাজপথে সরকারের বিরোধিতা করছি। মানুষ এসব হাস্যকর বলে মনে করে।

সর্বশেষ খবর