মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

আলেম-ওলামাদের নিয়ে জঙ্গি রুখতে হবে

—মাওলানা আবুল হাসান

জিন্নাতুন নূর

আলেম-ওলামাদের নিয়ে জঙ্গি রুখতে হবে

বাংলাদেশের আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখদের সঙ্গে নিয়ে বর্তমান জঙ্গিবাদ রুখতে হবে। এ জন্য ওয়াজ মাহফিলে এ বিষয়ে আলোচনা এবং ইমামদের সহযোগিতায় দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বিভিন্ন দরবার ও খানকায় গিয়ে মুসলমান ভাইদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের (কেন্দ্রীয় কমিটি) সাধারণ সম্পাদক আলহাজ কাজী মাওলানা মো. আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী গত সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিন কার্যালয়ে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। মাওলানা আবুল হাসান জানান, জঙ্গিবাদ দমনে ওলামা লীগ দেশের প্রতিটি জেলায় ৩০ থেকে ৪০ জন সদস্য নিয়ে কমিটি গঠন করেছে। এর কেন্দ্রীয় কমিটিতে ২২২ জন সদস্য আছেন। এই সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত করতে প্রতিটি জেলার মাদ্রাসা, মসজিদে মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলছেন। তবে এ কাজ খুব একটা সহজ নয় বলে জানান তিনি। আওয়ামী ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, অনেকেই আমাদের বক্তব্য শুনে আমাদের সহযোগিতা করেন। আবার অনেকেই আমাদের কথা শুনে তাত্ক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে চুপ করে থাকেন। মাওলানা আবুল হাসান বলেন, বাংলাদেশ ওলামা লীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বহনকারী একটি সংগঠন। সংগঠনটি জঙ্গিবাদ ও মওদুদি ধ্যান-ধারণামুক্ত। এ দেশ ওলি-আল্লাহদের আদর্শ ধারণ করে। এখানে জঙ্গিবাদী ধ্যান-ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। ২০০১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ সংগঠন যাত্রা শুরু করে। সেই সময় থেকে শেখ হাসিনা ধানমন্ডি কার্যালয় ও গণভবনে ডেকে নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতেন। বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের পরামর্শ দিতেন। মূলত দেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তিনিই আমাদের দেন। আর দেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত করার লক্ষ্যেই আওয়ামী ওলামা লীগ গঠিত হয়। প্রতি ছয় মাস অন্তর প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে তথা দেশের আলেম-ওলামা ও পীর- মাশায়েখদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেন। তবে বর্তমানে জঙ্গিবাদের সক্রিয় কার্যক্রমের বিষয়টি মাথায় রেখে দেশের আলেমসমাজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বছরে দুবার সাক্ষাৎ করতে চান বলে জানান ওলামা লীগের এই সাধারণ সম্পাদক। জঙ্গিবাদ ও মওদুদিবাদমুক্ত দেশ গঠনের জন্য দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখদের নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে একটি বিশেষ সেল গঠন করতে হবে। তিনি আরও জানান, এ সংগঠনটির জন্মের পর থেকে তারা আওয়ামী লীগের সব কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। সে সময় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা আবদুল জলিল ভূঁইয়া ও মেয়র মোহাম্মদ হানিফ আমাদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখতেন। কিন্তু বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের অন্য কোনো নেতা খোঁজ রাখেন না। এমনকি তাদের প্রাপ্য সম্মানও তাদের দেন না বলে তিনি অভিযোগ করেন। মাওলানা মো. আবুল হাসান বলেন, এখন সুবিধালাভের আশায় আওয়ামী লীগে অনেকে বিভিন্নভাবে ঢুকে পড়ছেন। বিভিন্ন ভুঁইফোড় সংগঠন, যাদের জনসম্মুখে ‘জয় বাংলা’ বলার সাহস নেই তারাও এখন এ দলটির নাম ভাঙিয়ে সুবিধা নিচ্ছে। তবে ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক জানান, আমরা ভারতবিদ্বেষী নই। ভারত আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশটি আমাদের সহযোগিতা করেছে। অন্য কোনো দেশ আমাদের এত সহযোগিতা করেনি। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে। এর জন্য আওয়ামী লীগ বললেই যে ‘হিন্দুদের সরকার’ বোঝায় এ ধারণা ঠিক নয়। বাংলাদেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সব ধর্মের লোকের বসবাস। এখানে সবাই যার যার ধর্ম মেনে কাজ করছে। আমরা চাই সবাই একসঙ্গে কাজ করে সামনে এগিয়ে যাবে। নিজেদের অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে দাবি করা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, মেয়েদের পড়ালেখা করা নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তবে তাদের অবশ্যই শালীনতা মেনে চাকরি করতে হবে। শিক্ষানীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তকে ওলি-আউলিয়া ও আল্লামাদের বক্তব্য সংযোজন করা উচিত।

সর্বশেষ খবর