রবিবার, ৫ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিনিয়োগ ঘুমিয়ে থাকলে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি হবে না

রুহুল আমিন রাসেল

বিনিয়োগ ঘুমিয়ে থাকলে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি হবে না

অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, তাতে হতাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ। তবে টাকার অঙ্কে বাজেটের আকার ঠিক আছে— মন্তব্য করে তিনি বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগ আগের মতো ঘুমিয়ে থাকলে প্রত্যাশিত ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে না।

প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক-অর্থনীতিবিদ ড. আবু আহমেদ বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের টার্গেটকে সরকার নিজেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। প্রত্যাশিত হারে বেসরকারি বিনিয়োগ হচ্ছে না। তারপরও যদি দেশের ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়, তাহলে অবশ্যই সরকার ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত অর্থবছরে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে অর্ধেক। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায় পরিস্থিতিও সন্তোষজনক নয়। সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতির অতীত অভিজ্ঞতাই বলে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের জন্য নির্ধারিত ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হবে না।

ড. আবু আহমেদ বলেন, যারা লবিং করতে পারেন, তাদেরকেই বাজেটে কর সুবিধা দেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারে কোনো প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। মার্জিন লোনে সামান্য কর প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। অথচ পুঁজিবাজারে আরও প্রণোদনা দিয়ে এখান থেকে আরও বেশি অর্থ পাওয়া যেত। সব মিলিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারকে অবহেলা করা ঠিক হয়নি বলে মনে করেন তিনি।

মেগা প্রকল্পের পৃথক বাজেটকে ইতিবাচক উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, মেঘা প্রকল্পে সরকারের খরচ বাড়ছে। তার মানে সরকারের এই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মূলত জনগণেরই খরচ বাড়ছে। জনগণের দেওয়া কর উন্নয়ন প্রকল্পে সঠিক প্রক্রিয়া ও যথাযথভাবে খরচ হচ্ছে— এটা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ মেগা প্রকল্পের সুশাসন খতিয়ে দেখা দরকার। তার মতে, আমাদের দেশে প্রকল্পের কাজ সহজে শেষ হয় না। প্রকল্পের সুফল পেতে হলে নির্দিষ্ট সময় মেনে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। ধাপে ধাপে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো বন্ধ করতে হবে। পদ্মা সেতুর কাজ প্রথম যখন শুরু হয়, তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকা। এরপর ১৮ হাজার, ২২ হাজার ও সর্বশেষ চতুর্থ ধাপে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এসব নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন আছে।

ড. আবু আহমেদ বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যেটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে, তার মান নিয়েও প্রশ্ন থাকতে পারে। তার মতে, বাজেটে এডিপির সাইজ বড় হলে অনেকে খুশি হয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি আসলে খুশি হতে পারি না। কারণ এডিপির আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতিও বড় হতে থাকে। ঋণ করে অর্থ এনে এর সঠিক ব্যবহার হয় না।

সর্বশেষ খবর