রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, নিহত ২

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন ইমান আলী (৩৫) নামে ও শাহাবুদ্দিন (৫৫)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। এলাকায় ইউপি নির্বাচন নিয়ে বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সদর উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের মাঝপাড়া গ্রামে গতকাল ভোর ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ জানায়, জুনে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঝাউদিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তৎকালীন চেয়ারম্যান বখতিয়ার হোসেন। ওই নির্বাচনে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কেরামত আলী বিশ্বাস বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর থেকে কেরামত ও বখতিয়ারের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে গত সপ্তাহে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়। বেশ কিছু বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্তরা এর জন্য কেরামত সমর্থকদের দায়ী করেন। এর জের ধরে গতকাল ভোর ৬টার দিকে কেরামত সমর্থিত মাঝপাড়া ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসলাম মণ্ডলের নেতৃত্বে কাশীনাথপুর, বৈদ্যনাথপুর ও ঝাউদিয়া গ্রামের কয়েকশ লোক জোটবদ্ধ হয়ে মাঝপাড়া গ্রামে ঢুকে বখতিয়ার সমর্থিত মজিদ মেম্বারের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। মজিদ মেম্বারের লোকজন তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দও শোনা যায়। এ সময় মাঝপাড়া গ্রামের মৃত কিতাব আলীর ছেলে ইমান আলী গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনায় গুরুতর আহত ছয়জনকে দ্রুত কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান সকাল ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বৈদ্যনাথপুর গ্রামের মৃত মকসেদ আলীর ছেলে শাহাবুদ্দিন। নিহত দুজন কেরামত আলীর সমর্থক বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী হারুন জানান, নিহত ইমান আলীকে কয়েক মাস আগে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান কেরামতের শেল্টারে ছিলেন। সকালে ইমান আলীসহ অন্যদের বাড়িতে তুলে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে কেরামতের লোকজন জোটবদ্ধ হয়ে এলাকায় ঢোকে। মজিদের নেতৃত্বে মাঠের মধ্যে কয়েকশ মানুষ অবস্থান নেয়। অপর পক্ষও একই স্থানে অবস্থান নেয়। এ সময় মুখোমুখি সংঘর্ষে ইমান আলী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইমান আলীর লাশ সামনে রেখে আহাজারি করছেন স্বজনরা। আশপাশের রাস্তায় পুলিশ ও র‌্যাবের সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। মাটির ঘরে দেয়ালে রক্তের দাগ লেগে আছে। এ ছাড়া গ্রামের একটি ঘরের বারান্দায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে ছিল। ঘরে আশ্রয় নেওয়া কয়েকজনকে বারান্দার ওপরই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয় বলে বাড়ির লোকজন জানান। সেখানকার বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিলেও এভাবে দুটি প্রাণ ঝরত না। তারা বলেন, এক সপ্তাহ ধরে কেরামত আলী বিশ্বাসের লোকজন হাতিয়া, আলীনগরসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে তাণ্ডব চালাচ্ছিল। দোকানপাট ও বাড়িঘরে লুটপাটসহ বেশ কিছু বাড়ির টিনের চাল ও বেড়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে কেরামতের ক্যাডাররা। অনেকে প্রাণভয়ে এলাকা ছেড়েছেন। এলাকার মানুষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানাসহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানালেও পুলিশ সে সময় তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশ যদি সে সময় কেরামত সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত তাহলে এভাবে রক্ত ঝরত না। ঝাউদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বখতিয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, কেরামত আলী স্থানীয় জামায়াত ও বিএনপির সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে তার (বখতিয়ার) লোকজনের ওপর অত্যাচার করছে। এর জের ধরেই গতকাল এলাকায় এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটেছে। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। এ ব্যাপারে কেরামত আলী বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাজনীতি ও ভোটের কোনো সম্পর্ক নেই। মজিদ মেম্বার ও ইসলামের লোকজনের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়েছে। আমার লোকজন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।’ পুলিশের গাফিলতির ব্যাপারে জানতে চাইলে ঝাউদিয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই দিলীপ বিশ্বাস বলেন, ‘অনেক ব্যস্ত আছি। আপনার সাথে বকবক করার সময় নেই।’ এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম জানান, পরিস্থিতি এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের গাফিলতির কথা তিনি অস্বীকার করেন।

সর্বশেষ খবর