সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

এখনো খোলা আকাশের নিচে সাঁওতালরা

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

এখনো খোলা আকাশের নিচে সাঁওতালরা

কলাপাতার অস্থায়ী ঘর। খোলা আকাশের নিচে চলছে রান্না-বান্না। গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার এলাকা থেকে গতকাল তোলা ছবি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের সাঁওতালদের ওপর হামলা, লুটপাট ও বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের দুই সপ্তাহ পরও উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতালরা খোলা আকাশের নিচে রয়েছেন। তারা মাদারপুর মিশন গির্জাসংলগ্ন খোলা মাঠ, গাছগাছালির আড়াল এবং পরিত্যক্ত ঘরের বারান্দায় বসবাস করছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উদ্বাস্তু হয়ে পড়া সাঁওতালদের অনেকে শীতে এবং কুয়াশার ভিতর অতিকষ্টে কলাগাছের পাতা দিয়ে ঘর বানিয়ে থাকছেন। সেখানেই চুলা বানিয়ে রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করছেন। কেউ কেউ আবার ঘর বানানোর উপকরণ জোগাড় করতে না পেরে রয়েছেন স্রেফ খোলা আকাশের নিচে। প্রতিদিন বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে যে রিলিফ দেওয়া হচ্ছে তা দিয়েই তারা জীবনধারণ করছেন। তারা জানান, সাঁওতাল পরিবারগুলোর হাতে নগদ টাকা এবং বসতবাড়ি না থাকাটাই এখন মূল সমস্যা হয়ে উঠেছে।

নতুন আতঙ্ক : গত শনিবার আখ খেতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এ ঘটনায় সাঁওতালদের মধ্যে নতুন করে মামলা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সহ-সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, আখ খেতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি পক্ষ সাঁওতালদের দোষারোপ করতে- তাদের উচ্ছেদকৃত বসতি এলাকার আখ খেতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। সাঁওতালদের ধারণা তাদের নতুন করে ফাঁসাতেই মিল কর্তৃপক্ষের লোকজন পরিকল্পিতভাবে আখ খেতে আগুন লাগিয়েছে। তবে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. আবদুস সামাদ জানান, এ ঘটনায় আদিবাসীদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আখে আগুনের ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। মামলা বা পুলিশি অভিযানও চালানো হয়নি। তদন্ত করে দেখা হবে এ ঘটনায় কারা জড়িত।

আরও দুজন গ্রেফতার : সাঁওতালদের ওপর হামলা, লুটপাট ও বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা স্বপন মুরমুর মামলায় আরও ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাসিরাবাদ গ্রাম থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন নাসিরাবাদ গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে জনি মিয়া (২৮) ও নাজিম উদ্দিনের ছেলে রানা মিয়া (৩২)। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করা হলো।

কাদের সিদ্দিকীর পরিদর্শন : কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল অধ্যুষিত মাদারপুর ও জয়পুরপাড়া পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি বলেছেন, নাসিরনগরের চেয়েও জঘন্যতম ঘটনা ঘটেছে সাহেবগঞ্জ সাঁওতাল পল্লীতে। এ জঘন্যতম ঘটনার বিচার না হলে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগকে পস্তাতে হবে। আওয়ামী লীগের একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য।

রবের পরিদর্শন : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ. স. ম. আবদুর রব গতকাল দুপুরে গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লী পরিদর্শন করেছেন। তার সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এম. এ গোফরান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, যুগ্ম সম্পাদক আশিষ সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক আমির উদ্দিন এবং জেলা জেএসডি সম্পাদক লাসেন খান রিন্টু। এ সময় রব ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালদের পৈতৃক জমিতে পুনর্বাসনের দাবি জানান। একই সঙ্গে তিনি সংঘটিত ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।

পুনর্বাসনের সুযোগ নেই : গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গতকাল জেলা প্রশাসন ও পুলিশের যৌথ আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বলা হয়, সংবাদ মাধ্যমে পরিবেশিত খবরগুলোতে এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিষয় প্রকাশিত না হওয়ায় পুলিশ বাহিনীর প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার দিন কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়নি। বরং সরকারি সম্পদ ও জানমাল রক্ষা এবং মামলার আসামি ধরতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। আর আদিবাসীদের দাবি অনুযায়ী, চিনিকলের জমি তাদের দেবার বা সেখানে পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ নেই। জেলা প্রশাসক মো. আবদুস সামাদ বলেন, আদিবাসীদের উচ্ছেদের জন্য কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়নি। সে দিন ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, সরকারি জানমাল সম্পত্তি ও অস্ত্র রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

এক সাঁওতালের জামিন : পুলিশের উপর হামলার মামলায় কারাগারে থাকা সাঁওতাল মাঝি হেমব্রম গতকাল বিকালে গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। তিনি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার রাণিগঞ্জ ভেলান গ্রামের বাসিন্দা।

সর্বশেষ খবর