সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
আ- মরি বাংলা ভাষা

বায়ুদূষণের মতোই ক্ষতিকর ভাষাদূষণ

মারুফ রায়হান

বায়ুদূষণের মতোই ক্ষতিকর ভাষাদূষণ

বাঙালি পরিবারের সন্তান হলেই যে জন্মসূত্রে আমরা বাংলা ভাষার কেউকেটা হয়ে যাব— এমনটি  ভাববেন না। পরিবারের সদস্যদের সান্নিধ্যে কানে শুনে শুনে শিশু প্রাথমিক বাংলা বোল রপ্ত করে বটে, কিন্তু মাতৃভাষাটা শুদ্ধরূপে লেখা ও পড়ার জন্য অবশ্যই ভাষা শিক্ষা জরুরি। তাই বাঙালি হয়ে জন্মেছি বলে বাংলা আমার মজ্জাগত হলেও মগজে তার রূপ সুষ্ঠুভাবে প্রোথিত করতে আর পাঁচটা ভাষার মতোই নিজের ভাষাটাও শিখে নিতে হবে। আর ভাষার প্রতি ভালোবাসা না থাকলে তার প্রয়োগে বিকৃতি চলে আসতেই পারে। ভাষা শুধু ভালোবাসার বিষয় নয়, এটির জন্য দায়িত্ব ও অঙ্গীকারবোধ থাকতে হয়। বাংলা বর্ণ যখন আমরা ব্যবহার করি তখন আমাদের মনে রাখা চাই, একেকটি বর্ণ আমার শহীদ ভাইয়ের রক্তে পরিশুদ্ধ। সেই ভাষাকে অশুদ্ধ করার কোনো অধিকার কি আমার আছে? যদি আমি তা করি তবে অন্যায়, অন্যায্য এবং অপরাধই করি। আর সজ্ঞানে যারা এটা করেন তারা বিলক্ষণ জ্ঞানপাপী। যে যত বেশি ‘শিক্ষিত’ ও ‘বিশিষ্ট নাগরিক’, তার তত বেশি সুযোগ রয়েছে ভাষাকে বিনষ্ট ও বিকৃতির দিকে ঠেলে দেওয়ার। আমাদের চারপাশে এমন মানুষের সংখ্যা কি দিন দিন বাড়ছে? ভাষা শিক্ষা পরিবার থেকে শুরু হলেও বিদ্যালয় এবং জীবনের পাঠশালায় সেটি পরিমার্জিত ও বিস্তৃত রূপ লাভের প্রয়াস পায়। আপনি নিজে যেমন সারা জীবন ভাষা শিখছেন এবং তা লালন করছেন, একই সঙ্গে আপনিও ভাষাকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি করছেন। তাই ভাষা ব্যবহার কখনো হেলাফেলার নয়। কথা বলতে গিয়ে আপনি একটি বাক্যের মধ্যে যদি একাধিক ভাষা ব্যবহার করেন, মানে কিছুটা বাংলায় ও কিছুটা ইংরেজি বা হিন্দিতে বলেন তবে নিশ্চিতরূপেই আপনি ভাষা সচেতন নন। আবার বাংলা ভাষায় বলতে গিয়ে উচ্চারণে যদি অন্য ভাষার স্বরভঙ্গি প্রকাশ পায় তাহলেও বাংলা ভাষার বিকৃতি ঘটবে। আমরা বায়ুদূষণ সম্পর্কে জানি, অথচ বিশেষ গুরুত্ব দিই না। বাতাস ছাড়া আমাদের এক মুহূর্ত চলে না, অথচ সেই বাতাস যদি বিষাক্ত হয়ে ওঠে তারপরও তার ভিতর থেকে শ্বাস গ্রহণ করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি। আমাদের ফুসফুস তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আমাদের ব্যাধিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফুসফুসকে যদি প্রাণের প্রতীক ধরি তবে আমাদের স্বীকার না করে উপায় নেই মাতৃভাষার দূষণও ফুসফুসকেই আঘাত করে। বায়ুদূষণের ক্ষতি যেমন আমরা সঙ্গে সঙ্গে টের পাই না, তেমনি ভাষাদূষণের বিপদও আমরা বুঝে উঠতে পারি না। অথচ তা আমাদের জীবনসত্তাকে অনেকটা উন্মুল করে দেয়। অনেক রোগ সংক্রামক, যেমন ভাষাদূষণের রোগও সংক্রামক। চারপাশের মানুষের মধ্যে অনেকটা অজান্তেই সেই রোগ অনেকে ছড়াচ্ছেন। দুর্বল দেহ যেমন সংক্রামক রোগে কাবু হয়, ভাষা চর্চাকারীও ঠিক একইভাবে অশুদ্ধ, বিকৃত ও দূষিত ভাষার সংস্পর্শে এসে সংক্রমিত হয়। এটা মারাত্মক। তাই বাঙালি মায়ের গর্বে যদি হয় আমার জন্ম— তবে আজ থেকেই সতর্ক-সচেতন হব। মায়ের অসম্মান করব না, মায়ের ক্ষতি হতে দেব না। মায়ের ভাষা সম্বন্ধেও একই কথা। মায়ের নাম যেমন কখনই ভুল বানানে লিখি না, তেমনি মায়ের ভাষাও কখনই ভুল বানানে লিখব না। এই হোক প্রতিজ্ঞা। লেখক : কবি

সর্বশেষ খবর