আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, লুটেরাদের সংগঠন বিএনপির ওপর জনগণের কোনো আস্থা নেই। এ দলটি হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল। ক্ষমতায় থাকাকালে তারা শুধু নিজেদের পকেট ভারি করেছিল। তিনি বলেন, উন্নয়নের সুফল ধরে রাখতে আগামী নির্বাচনেও জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করবে। গতকাল সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে তাকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণের একটি ভবনকে কারাগার ঘোষণা করে সেখানে তাকে রাখা হয়। পরের বছর ১১ জুন মুক্তি পান শেখ হাসিনা। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ এই দিনটি শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের সংগ্রাম-আন্দোলন এবং দলের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে চলেছে। জনগণই বার বার ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে। দলটির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয় না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানমর্যাদা বৃদ্ধি পায়। জনগণ কিছু পায়। আর অন্যরা ক্ষমতায় আসে শুধু নিজেদের আখের গোছাতে। সেই দুঃসময়ের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলের বউয়ের অপারেশন। মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা ছিল। সেজন্য আমি দেশের বাইরে যাই। অথচ এরপর আমাকে দেশে আসতে দেবে না। মামলা দিবে। ওয়ারেন্ট ইস্যু করবে। এই খেলাই তারা খেলতে চেয়েছিল। তিনি বলেন, সবাই মামলার ভয়ে পালায়। আমি সেখানে যাচ্ছি মামলা মোকাবিলার জন্য। নির্দেশ ছিল কেউ যেন বিমানবন্দরে না যায়। তারা সংখ্যা বেঁধে দিয়েছিল। ১০/২০ জন বা তার বেশি যেতে পারবে না। সব বাধা উপেক্ষা করে কৌশলে বিমানবন্দরে হাজার হাজার দলীয় নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিল। তাদের যেটা উদ্দেশ্য ছিল, হাজার হাজার মানুষ থাকায় তারা সেটা করতে পারেনি। কারাগারে থাকাকালীন কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে আমাকে রাখা হয়েছে ১১টি মাস। দোতলার নিচে পর্যন্ত নামতে দিত না। এমনকি অসুস্থ হলে ডাক্তারও দেখায়নি। কিন্তু আমি কখনো মনের জোর হারাইনি। বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, লুটেরাদের সংগঠন বিএনপির ওপর জনগণের কোনো আস্থা নেই। যদিও বিএনপি দাবি করে তারা তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন ছিল। কিন্তু এটা সত্যি যে, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনে তারা কিছুই করেনি। তারা সন্ত্রাস ও ভয়-ভীতির রাজত্ব কায়েম করে কেবল নিজেদের ভাগ্য গড়ায় ব্যস্ত ছিল। যারা নিজেদের জন্য ক্ষমতায় আসতে চায়, তাদের ওপর এদেশের জনগণের আস্থা নেই। বিগত দিনের মতো আগামী নির্বাচনেও জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশকে যে উন্নত করা যায় আমরা তা প্রমাণ করতে শুরু করি। আসলে একটা সরকার যদি ধারাবাহিকভাবে না চলে তাহলে উন্নয়নটা দেখা যায় না। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। তার কারণ আমি দেশের স্বার্থ বিক্রি করতে চাইনি। তিনি বিএনপির সঙ্গে বিদেশি গোষ্ঠীর সে সময় দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি হয় অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রি করতে হবে আর তার বিনিময়ে ক্ষমতায় থাকতে হবে। এই রাজনীতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে করে না। তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে চলবে। রাজনীতিবিদদের জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা।
সম্পর্কের রোডম্যাপ ঘোষণা করবে বাংলাদেশ-সুইডেন : সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্তেফাল লোফভেনের আমন্ত্রণে দুই দিনের দ্বিপক্ষীয় সফর উপলক্ষে আগামীকাল সুইডেনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের কোনো সরকার অথবা রাষ্ট্রপ্রধানের এটাই হবে প্রথম দ্বিপক্ষীয় সুইডেন সফর। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা স্টকহোম যাওয়ার পথে লন্ডনে যাত্রাবিরতি করবেন। ১৫ ও ১৬ জুন সুইডেন সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী স্তেফান লোফভেনের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবেন। সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন সুইডেনের রাজা ষোড়শ কার্ল গুস্তাফের সঙ্গে। এ সফরে বাংলাদেশ-সুইডেন ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে একটি যৌথ ইশতেহার কিংবা ঘোষণাপত্র সই হবে। এ ছাড়া বাণিজ্যবিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, এই সফর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বাংলাদেশ ও সুইডেনের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এজেন্ডা ২০৩০) অর্জন এবং দুই দেশের মধ্যে অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করবে। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে ইউরোপ ও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। দুই নেতার শীর্ষ বৈঠক শেষে বাংলাদেশ-সুইডেন যৌথ ইশতেহার কিংবা ঘোষণাপত্র সই হবে। সুইডেন ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ৫৫৬.৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ-সুইডেন বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরামের বৈঠকে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া সুইডেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী, ভারপ্রাপ্ত স্পিকার এবং বিচার ও অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। সফরকালে সুইডিশ বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহযোগিতা জোরদারে সুইডেন-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল (এসবিবিসি) এবং নর্ডিক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এনসিসিআই, ঢাকা) মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী সফরকালে ৪৭ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। সুইডেনে তিন দিনের এই সফর শেষে তিনি ১৬ জুন ঢাকার উদ্দেশে স্টকহোম ত্যাগ করবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন।