গত ১০ বছরে বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়লেও প্রতিযোগী অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের তুলনায় এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের ৫৩ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বিদ্যুতের সংকট তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রতিযোগী কম্বোডিয়ার মাত্র ৬ শতাংশ ব্যবসায়ী ও দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশ ভুটানের মাত্র ১২ শতাংশ ব্যবসায়ী নিজ দেশে বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে সমস্যার কথা জানিয়েছেন। ফলে বিদ্যুৎ-জ্বালানির সমস্যা না থাকলে দেশে আরও দ্রুত উন্নয়ন হতো বলে মনে করে জাতিসংঘের শিল্প বাণিজ্য উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাড ও বাংলাদেশের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি করা আঙ্কটাডের প্রতিবেদন প্রকাশকালে এ তথ্য জানায় সিপিডি। বিশ্বের ৪৭টি স্বল্পোন্নত দেশে একযোগে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশের হয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সিপিডি। প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত হতে হলে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের দরকার হবে। গৃহস্থালির তুলনায় শিল্প ও সেবা খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে হবে। সুশাসনের সঙ্গে সুলভমূল্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশকে শুধু সরকারি বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীল না থেকে বেসরকারি খাত ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে মনোযোগ দিতে হবে। প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বাড়ছে। তবে দ্রুতহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এর সুফল মিলছে না। এলডিসির মধ্যে নেপাল ও ভুটান বিদ্যুৎ-জ্বালানি ব্যবহারে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশকে প্রতিবছর ২০-৩০ শতাংশ হারে বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দিতে হবে। ২০১৪ সালের তথ্য ব্যবহার করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছে, যা এশিয়ার এলডিসিগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বাংলাদেশের গৃহস্থালি কাজে ৬১ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহূত হচ্ছে। শিল্পে ব্যবহার হয় মাত্র ২১ শতাংশ। এসডিজি বাস্তবায়ন ও উন্নত দেশে উন্নীত হতে হলে শিল্প ও সেবা খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের মানুষই মূলত বিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করছে। তবুও এটি বিশ্বের গড় বিদ্যুৎ ব্যবহারের তুলনায় কম। পল্লী এলাকার মাত্র অর্ধেক মানুষের বিদ্যুৎ সুবিধা রয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে এলডিসিগুলোর জন্য প্রতিবেদনে থাকা সুপারিশ তুলে ধরে ফাহমিদা খাতুন বলেন, এমনভাবে নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে যাতে, একখাতের নীতিমালা অন্য খাতের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়। কয়লা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিধায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর মধ্যে এমন নীতিমালা নিতে হবে, যাতে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়, সাশ্রয়ী মূল্যে গুণগত মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা যায়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নে কৃষি ও শিল্পনীতির সংযোগ ঘটাতে হবে। উৎপাদিত বিদ্যুতের কতটুকু কোন খাতে ব্যবহার করা হবে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সিপিডির সম্মানীত ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। তাতে বিদ্যুতের প্রাপ্যতা বেড়েছে। তবুও এ খাতে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ বা ২০৪১ সালে উন্নত দেশে উন্নীত হতে হলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত বড় ভূমিকা রাখবে। এসডিজির তিনটি শর্তের মধ্যে রয়েছে, অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তর, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা। সুশাসনের সঙ্গে সুলভ মূল্যে বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করা ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে এই তিনটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন সম্ভব। ২০১৪ সালের তথ্যের ওপর নির্ভর করে আঙ্কটাডের তৈরি করা প্রতিবেদন বাংলাদেশের বর্তমান বিদ্যুৎ পরিস্থিতির সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ— এমন প্রশ্নে ফাহমিদা খাতুন বলেন, অনেকগুলো দেশ নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। সব দেশেরই হালনাগাদ তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই ২০১৪ সালের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা পুরোপুরি তুলে ধরতে পারেনি। তবে প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতেও প্রযোজ্য। কারণ, ২০৩০ সাল সামনে রেখে এসব সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এলডিসিগুলোকে ২০৩০ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ খাতে ১২ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশকে কী পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হবে, এখানে তার উল্লেখ নেই। সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০১০ সালে বিশ্বব্যাংক তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছিল যে, বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ দরকার। এর মধ্যে শুধু বিদ্যুৎ খাতে ১১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছিল। এলডিসিগুলোর মাথাপিছু জ্বালানি তেল ব্যবহারের গড় পরিমাণ ৩৬৪ কেজি। বাংলাদেশে এ হার মাত্র ২২২ কেজি। এ থেকেই স্পষ্ট যে বাংলাদেশ এখনো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে অন্যান্য এলডিসির তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে। ভুটান, কম্বোডিয়াসহ বিভিন্ন এলডিসি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তাদের উৎপাদনশীলতা যে হারে বাড়িয়েছে, বাংলাদেশ তা এখনো পারেনি।
শিরোনাম
- চীন-ভারতসহ ব্রিকস সদস্যদের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি
- এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী
- আফ্রিকা-জিম্বাবুয়ের সঙ্গে যুবাদের ত্রিদেশীয় সিরিজের সূচি ঘোষণা
- গণমাধ্যমকে হুমকি বন্ধে হস্তক্ষেপ কামনা মার্কিন কংগ্রেসের
- বৃষ্টিতে মোংলা পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা, জনজীবন বিপর্যস্ত
- ভিন্নমত দমনের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতারা
- রাজধানীতে দুই বাসের মাঝে চাপা পড়ে একজন নিহত
- একজনের নামে সর্বোচ্চ ১০ সিম, কার্যকর ১৫ আগস্ট থেকে
- চীনে সীসা বিষক্রিয়ায় অসুস্থ ২৩৩ শিশু
- দেশজুড়ে পুলিশি অভিযানে অস্ত্রসহ গ্রেফতার ১৬০৭
- পেদ্রোর জোড়া গোলে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে চেলসি
- ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি, আজও বৃষ্টির আভাস
- অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে দলে ফেরার তাড়া নেই ডেভিডের
- ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার
- দীপিকার ‘৮ ঘন্টা কাজ’ প্রসঙ্গ নিয়ে রাশমিকার খোঁচা!
- জিম্বাবুয়ে হোয়াইটওয়াশ, প্রোটিয়াদের টানা ১০ জয়ের রেকর্ড
- যাত্রাবাড়ীতে ১০ হাজার ইয়াবাসহ দুইজন গ্রেফতার
- শাহজালালে ৮৯৬ গ্রাম সোনাসহ দুইজন আটক
- মুরাদনগরের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা: তদন্তভার ডিবিতে, ঘটনাস্থলে তদন্ত কর্মকর্তা
- ১৮ দিনে ১৫০ কোটির দোরগোড়ায় ‘সিতারে জামিন পার’
বিদ্যুৎ জ্বালানি সমস্যা না হলে দ্রুত উন্নয়ন হতো : আঙ্কটাড
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর