রবিবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাকিস্তানি শেয়ার বিক্রি করে দিতে চায় রূপালী ব্যাংক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

পাকিস্তানের করাচিতে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের একটি শাখা স্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু এখন সেখানে এই নামে কোনো ব্যাংকের শাখা খুঁজে পাওয়া যাবে না। রূপালী ব্যাংকের পরিবর্তে এখন সেখানে ‘সামিট ব্যাংক লিমিটেড’ নামটি শোভা পাচ্ছে। আর্থিক ব্যবস্থাপনার মারপ্যাঁচে দীর্ঘ ৪২ বছরে সামিট ব্যাংকে একীভূত হয়ে গেছে ‘রূপালী ব্যাংক লিমিটেড’ নামের শাখাটি। আর কয়েক বছরের লোকসানে শেয়ার কমতে কমতে সামিট ব্যাংকে থাকা রূপালী ব্যাংকের ৩২ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার এখন ৮ কোটি ২৯ লাখ টাকায় নেমে এসেছে।

করাচি স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী গত ২০ মার্চ সামিট ব্যাংক লিমিটেডের প্রতিটি ১০ পাক রুপি মূল্যের শেয়ার বিক্রি হয়েছে কমবেশি আড়াই পাক রুপিতে।

এ পরিস্থিতিতে যেটুকু শেয়ার রয়েছে সামিট ব্যাংকে সেগুলো প্রত্যাহার করে সব পাওনা আদায় করতে চাইছে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক। এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত চেয়ে সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে ব্যাংকটি। গত ২০ মার্চ পাঠানো ওই চিঠিতে ব্যাংকটির এমডি ও সিইও মোঃ আতাউর রহমান প্রধান বলেন, পাকিস্তানের সামিট ব্যাংক থেকে রূপালী ব্যাংক লিঃ আয় হিসেবে দীর্ঘদিন কোনো নগদ লভ্যাংশ কিংবা বোনাস শেয়ার পাচ্ছে না। ব্যাংকটি পুনরায় কবে নগদ লভ্যাংশ প্রদানে সক্ষম হবে সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এমতাবস্থায় সামিট ব্যাংক থেকে রূপালী ব্যাংক লিঃ-এর সব শেয়ার প্রত্যাহারসহ যাবতীয় পাওনাদি আদায় করার বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ব্যাংক সূত্র জানায়, এর আগেও ২০১৫ সালে রূপালী ব্যাংকের শেয়ার তুলে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। ওই সময় ব্যাংকের ডিজিএম পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়। তবে এরপর আর এ বিষয়ে পরে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। এখন শেয়ারের দাম তলানিতে ঠেকায় তা প্রত্যাহার করতে চাইছে রূপালি ব্যাংক। এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, শেয়ার বিক্রির বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত থাকতে হবে। সরকারের পক্ষে পরিচালকরাই ব্যাংকের নীতি নির্ধারণী বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।

যেভাবে লুপ্ত হলো করাচির রূপালী ব্যাংক : ১৯৭৬ সালে পাকিস্তানের করাচীতে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড নামে যে শাখা খোলা হয়, তা দীর্ঘদিন ধরে লাভজনকভাবে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। ২০০০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান একটি সার্কুলার জারি করে যে, ওই দেশে পরিচালিত সব সিডিউল ব্যাংক এবং বিদেশি ব্যাংকের শাখার ন্যূনতম মূলধন ১০০ কোটি রুপি থাকতে হবে। ২০০৪ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরেক নির্দেশনায় ওই মূলধনের পরিমাণ ২০০ কোটি রুপিতে উন্নীত করতে হবে বলে জানিয়ে দেয়। এ পরিস্থিতিতে রূপালী ব্যাংকের করাচি শাখা নির্দেশনা মেনে ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণের শর্ত পূরণ করতে না পারায় ২০০৬ সালের ৪ আগস্ট ১০০ কোটি রুপি পরিশোধিত মূলধন নিয়ে দেশটির উদ্যোক্তা মেসার্স আরিফ হাবিব সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নতুন করে একটি ব্যাংক গঠন করে। যৌথ মালিকানাধীন এই ব্যাংকের নাম হয় ‘আরিফ হাবিব রূপালী ব্যাংক লিমিটেড।’ ওই যৌথ মালিকানাধীন ব্যাংকটিতে তখন রূপালী ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ২৯ কোটি ৫০ লাখ রুপি। এরমধ্যে সম্পদমূল্য ২১ কোটি ৫০ লাখ রূপী এবং প্রিমিয়াম মূল্য ধরা হয় ৮ কোটি পাকরূপী। এই সম্পদের বিপরীতে রূপালী ব্যাংকের ১০ টাকা পাক রুপি মূল্যমানের ২ কোটি ৯৫ লাখ শেয়ার ছিল। অর্থাৎ যৌথ মালিকানাধীন ব্যাংকটিতে রূপালী ব্যাংকের শেয়ার ছিল ২৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। পরবর্তীতে আরিফ হাবিব রূপালী ব্যাংক লিমিটেড-এর পরিচালনা পর্ষদ তার বিদ্যমান নামটি পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০৭ সালের ২৪ জুলাই আরিফ হাবিব রূপালী ব্যাংক লিমিটেড নাম পরিবর্তন করে ‘আরিফ হাবিব ব্যাংক লিমিটেড’ করা হয়। ২০১০ সালের ১৮ আগস্ট আবারও নাম পরিবর্তন করে ‘সামিট ব্যাংক লিমিটেড’ করা হয়। এর ফলে রূপালী ব্যাংকের নাম হারিয়ে যায়। তবে নাম না থাকলেও ব্যাংকটিতে রূপালী ব্যাংকের শেয়ার অপরিবর্তিত থাকে। পরে যা লোকসানের কারণে বছর বছর কমতে থাকে। রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, এ ধরনের নাম পরিবর্তনে সায় ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের। জানা গেছে, রূপালী ব্যাংকের করাচি শাখাটি একীভূত হয়ে আরিফ হাবিব রূপালী ব্যাংক লিমিটেড হওয়ার পর ২০০৮ সালে ১০ পাকি রূপী মূল্যের ৩২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৫০টি বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে রূপালী ব্যাংকের আয়প্রাপ্য হয়। ফলে ওই সময় রূপালী ব্যাংকের মোট শেয়ার দাঁড়ায় ৩ কোটি ২৭ লাখ ৭৭ হাজার ৪৫০টি, ১০ টাকা প্রতি শেয়ার হিসেবে যার মোট মূল্য ছিল ৩২ কোটি ৭৭ লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ পাক রুপি। এরপর ২০০৮ সাল থেকে লোকসান দিতে থাকে সামিট ব্যাংক লিমিটেড, যা এখনো পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। আর ব্যাংকটিতে থাকা রূপালী ব্যাংকের শেয়ারের মূল্যও কমতে থাকে। কয়েক বছরে লোকসানে ওই শেয়ার এখন প্রতিটির মূল্য নেমে এসেছে ২ দশমিক ৫৩ পাক রুপির কাছাকাছি।

 

সর্বশেষ খবর