বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

আমাদের কথা বলার অধিকার নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমাদের কথা বলার অধিকার নেই

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আমাদের কথা বলার অধিকার নেই। কথা বলার জায়গা নেই। কোথাও সভা-সমাবেশ করতে চাইলে মাঠ দেওয়া হয় না। আমাদের ওপর হামলা-নির্যাতন চালানো হয়। একটি গণতান্ত্রিক দেশে এটা হতে পারে না। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এ মন্তব্য করেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে দলটি। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচি পালিত হয়। অবশ্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচির শেষের দিকে বিএনপি মহাসচিব যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখনই পুলিশের গ্রেফতারের ভয়ে নেতা-কর্মীরা চলে যেতে শুরু করেন। তবে অনুষ্ঠান শুরুর আগেই মানববন্ধন সমাবেশে রূপ নেয়। এতে ঢাকা মহানগরী বিএনপি ছাড়াও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তিই এখন বিএনপির লক্ষ্য। আমরা জানি, এ সরকার কেন দেশনেত্রীকে আটকিয়ে রেখেছে। এর একটি মাত্র কারণ, তারা (সরকার) খুব আতঙ্কিত যদি খালেদা জিয়া বাইরে থাকেন তাহলে গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনকে কোনোমতেই প্রতিরোধ করতে পারবে না। তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকতে পারবে না। আজ এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ থাকা। আমরা বলতে চাই, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে। আমরা মুক্তি চাই, অবশ্যই তাকে মুক্ত করে আনতে হবে। তার মুক্তি আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।

নয়াপল্টন সড়কের অতীশ দীপঙ্কর গলি থেকে পল্টন মসজিদ পর্যন্ত কার্যালয়ের পাশের সড়কে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ফুটপাথ ও সড়কের সামনে দাঁড়িয়ে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। নেতা-কর্মীরা ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে, তারেক রহমানের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে ২২ এপ্রিল বিএনপি সাত দিনের যে কর্মসূচি শুরু করেছে এটি তার তৃতীয় দিনের কর্মসূচি। আগামীকাল বাদ জুমা হবে ঢাকাসহ সারা দেশের মসজিদে দোয়া মাহফিল। মানববন্ধনের এ কর্মসূচির কারণে সকাল থেকে বিএনপি কার্যালয়ের আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। রায়টকার, জলকামান, সাদা মাইক্রোবাসসহ সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল নোমান, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

মানববন্ধনে মো. শাহজাহান, আবদুল মান্নান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শিরিন সুলতানা, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, এ বি এম মোশাররফ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অঙ্গসংগঠনের নেতাদের মধ্যে মহানগরী দক্ষিণের হাবিবুর রশীদ হাবিব, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, যুবদলের মোরতাজুল করীম বাদরু, মাহবুবুল হাসান পিঙ্কু, স্বেছাসেবক দলের ইয়াসীন আলী, জাসাসের শাহিনুল ইসলাম শায়লা, ছাত্রদলের মামুনুর রশীদ, আকরামুল হাসান, ওলামা দলের এম এ মালেক, শাহ নেসারুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা দেশনেত্রীকে মুক্ত করার জন্য, দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হই। আমরা সরকারকে জানাতে চাই, যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সরকার নির্বাচনের কথা বলছে। নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে, নির্বাচন করতে হলে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে, নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিতে হবে, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। নির্বাচন করতে হলে আগেই সংসদ ভেঙে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। তাহলেই লেভেল প্লেয়িং ফিন্ড তৈরি হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য আগামী সংসদ নির্বাচনে দেশনেত্রীকে বাইরে রেখে, বিএনপিকে বাইরে রেখে ২০১৪ সালের মতো একটি পাতানো খেলা করা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে জনগণকে প্রতারণা করা হয়েছে। এ রকম প্রতারণা আর করা যাবে না। আগামী নির্বাচন অবশ্যই নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে সংসদ ভেঙে দিয়ে করতে হবে। এর আগে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। দেশনেত্রীকে ছাড়া আগামী কোনো নির্বাচন এ দেশে হতে দেওয়া হবে না। মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকার নিপীড়নমূলক, ফ্যাসিবাদী আচরণ করে যাচ্ছে। এ সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। গণজোয়ারে এ সরকার ইনশা আল্লাহ ভেসে যাবে।

বিভিন্নস্থানে বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে গতকাল দেশের বিভিন্নস্থানে বিএনপি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

রাঙামাটি : রাঙামাটিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সকালে সংগঠনটির উদ্যোগে শহরের কাঁঠালতলী এলাকায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে তারা পুলিশি বেষ্টনীর মধ্যে এ মানববন্ধন করেন। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে বিএনপির নেতা-কর্মী, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।

নাটোর : কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মানববন্ধন করার জন্য পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী সকাল ৯টার আগে থেকেই দলীয় এবং অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা নাটোরের আলাইপুর বিএনপি অফিসের সামনে জড়ো হতে থাকেন। সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া পুলিশ মানববন্ধনের কোনো অনুমতি না থাকায় তাদের সবাইকে অফিস থেকে বের হয়ে চলে যেতে বাধ্য করে। পরে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে শহরের হাফরাস্তায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানববন্ধন করেছে জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। সকালে শহরের বৌবাজার এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বগুড়া : মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বগুড়া জেলা বিএনপি। কর্মসূচিতে দলের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেন। সকাল ১১টায় বগুড়া শহরের নবাববাড়ী রোডে জেলা বিএনপির উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

সর্বশেষ খবর