বৃহস্পতিবার, ৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

চারগুণ দামে কেনা হচ্ছে নতুন ইভিএম

ব্যবহার হবে গাজীপুর ও খুলনা সিটির ভোটে

গোলাম রাব্বানী

চারগুণ দামে কেনা হচ্ছে নতুন ইভিএম

আবারও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) দিকে ঝুঁকছে কে এম নূরুল হুদা কমিশন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে একটি ওয়ার্ডে ব্যবহারের মধ্য দিয়ে দেশে ইভিএমের যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালে। এরপর নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এবং নরসিংদী পৌরসভায় পুরো ভোট হয় ইভিএমে। আর সর্বশেষ রাজশাহী সিটির এক কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হলেও ফলাফল নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। এরপর বুয়েট ও ইসির দ্বন্দ্বে ইতি ঘটে ইভিএমের। বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর রংপুর সিটিতে আবারও ব্যবহার শুরু হয় নতুন ইভিএম। এ ছাড়া আসন্ন গাজীপুর ও খুলনা সিটিতে কয়েকটি কেন্দ্রে ব্যবহারের কথা ভাবা হচ্ছে। এখনো কেন্দ্র চূড়ান্ত করেনি ইসি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বরাবরই ইভিএমে ভোট চাইলেও বিএনপি তাতে আপত্তি জানিয়ে আসছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সব স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। পুরনো ইভিএম বাদ দিয়ে ডিসেম্বরে রংপুরে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহূত নতুন ইভিএম সফল বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন। তাই ইভিএমের ব্যবহার ধরে রাখতে আরও আড়াই হাজার মেশিন কেনার প্রস্তুতি চলছে। যদিও প্রাথমিকভাবে ৫৩৫ সেট ইভিএম কেনা হচ্ছে। সোমবার নির্বাচন কমিশন সচিবের সভাপতিত্বে কারিগরি কমিটির সভায় ইভিএম নিয়ে পর্যালোচনা হয় বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান।

বর্তমান কমিশন সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্বল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন ইভিএম কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে প্রায় দুই লাখ টাকায় নতুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার পরিকল্পনা করেছে ইসি, যা ২০১০ সালে প্রথম ব্যবহূত যন্ত্রের দামের প্রায় চারগুণ। ওই সময় প্রতিটি ইভিএমে ৪৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা। নির্বাচন কমিশনের বিশেষজ্ঞ কারিগরি কমিটির সদস্যরা বলছেন, ‘বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) মাধ্যমেই বিদেশ থেকে আমদানি করা যন্ত্রাংশ নিয়ে উন্নত প্রযুক্তির ইভিএম তৈরি হচ্ছে। বিএমটিএফ চিন্তা করছে তৈরি করার; আশা করি তারাও পারবে। দেশে এটা তৈরি শুরু হয়ে গেলে তখন কমিশন যদি মনে করে সারা বিশ্বে প্রযুক্তিটি রপ্তানিও করতে পারবে।’

দামের বিষয়ে তারা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজার বিবেচনা করলেও প্রতিটি ইভিএমের দাম তিন হাজার ডলার পড়ত। আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, এর চেয়ে কম দামে প্রায় ২৪০০ মার্কিন ডলার ব্যয় হচ্ছে।’ সে হিসাবে গড়ে প্রতিটি ইভিএমের দাম ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকার মতো পড়ছে বলে জানান তারা। স্বল্প পরিসরে ব্যবহারের পর আরও বড় পরিসরে গেলে যন্ত্রের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামীতে প্রতিটি ইভিএমের দাম অর্ধেকে নেমে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নতুন ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়ে কমিটির সদস্যরা বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ইসির বর্তমান ইভিএম শক্তিশালী। এ যন্ত্রে কোনোভাবেই কারসাজি করে একজনের ভোট অন্যের দেওয়ার সুযোগ নেই। এখানে অটোমেটিক ভেরিফিকেশন হয়েই ব্যালট ইস্যু হবে। ফিঙ্গার প্রিন্ট অথবা এনআইডি দিয়ে শনাক্ত করে ব্যালট-ভোট ইউনিটে ভোটারকে স্বয়ং উপস্থিত হয়েই ভোট দিতে হবে।

তারা বলেন, ‘আমরা চাইছি এই ইভিএমটা টেকনিক্যালি সঠিক হয় কিনা, ভালনারেবল হয় কিনা। কোনোভাবেই যেন ঝুঁকি না থাকে, তা নিশ্চিত করছি। শিগগিরই আন্তর্জাতিক একটি গ্রুপকেও এটা দেখানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কোনো খুঁত বা ভুল রয়েছে কিনা, তা চ্যালেঞ্জ করতে পারে কিনা, তা দেখব সেখানে।’ ইসির হাতে এক হাজার ২০০টির বেশি পুরনো ইভিএম রয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহায়তায় প্রথমে ১৩০টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৪০০টি এবং সর্বশেষ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সহযোগিতায় আরও ৭০০ ইভিএম পায় ইসি। ওই সময় প্রতিটি ইভিএমে ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা। গত বছর থেকে বিএমটিএফকে নিয়ে নতুন ইভিএমের যাত্রা শুরু হয়। রংপুর সিটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পর গাজীপুর ও খুলনা সিটিতে কয়েকটি কেন্দ্রে ব্যবহারের কথা হচ্ছে। এখনো কেন্দ্র চূড়ান্ত করেনি ইসি।

ইভিএম সংগ্রহে দরপত্র ও মূল্যায়ন কমিটি : ১৬ এপ্রিল ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সিস্টেম ম্যানেজার মো. রফিকুল হক সর্বশেষ ‘আপগ্রেডেড ইভিএম’ সংগ্রহে দর প্রস্তাব পাঠাতে বিএমটিএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে চিঠি দেন। তাতে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে বিএমটিএফ থেকে ইসি ৭০০ ইভিএম নিয়েছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ইসির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে মানোন্নয়ন করে ইভিএমগুলো সরবরাহ করা হয়। ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি নির্বাচনে এই ইভিএম পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে অত্যন্ত সফলতা আসে। ৩০ জানুয়ারি কমিশনের চাহিদামতো আরও উন্নত মানের ইভিএম সরবরাহ করে বিএমটিএফ, যা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যবহারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন, ভোটার এডুকেশন ও প্রশিক্ষণ কাজে ব্যবহারের জন্য সর্বশেষ আপগ্রেডেড ৫৩৫ সেট ইভিএম প্রাথমিকভাবে সরবরাহের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেন এনআইডি উইংয়ের সিস্টেম ম্যানেজার। ইসি সচিবের সভাপতিত্বে এ দরপত্র/প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির সদস্য হলেন ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব, এনআইডি উইং মহাপরিচালক, ইসির একজন যুগ্ম-সচিব, ঢাবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের প্রতিনিধি। এনআইডি উইংয়ের সিস্টেম ম্যানেজার হলেন কমিটির সদস্যসচিব।

সর্বশেষ খবর