শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সিলেটে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কাদেরের হুঁশিয়ারি

অর্থমন্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ, চাওয়া হয়েছে লিখিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও সিলেট

সিলেট আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, সে তথ্য কেন্দ্রে আছে। সংসদ নির্বাচনের আগে এই নেতাদের শোধরাতে হবে। নইলে বিপদ। এই হুঁশিয়ারি দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সিলেটে এক দিনের সফরে গিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নানা অনুযোগ-অভিযোগ শোনার সময় এমন হুঁশিয়ারি দেন তিনি। বৈঠকে           কয়েকজন নেতা সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার শোকসভার আয়োজন করে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। সভায় ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ উপস্থিত ছিলেন। শোকসভা শেষে সিলেট সার্কিট হাউসে রাতযাপন করেন এসব নেতা। সেখানেই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় নেতারা। রাত পৌনে ৮টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী চলা বৈঠকে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পরাজয়ের বিষয়টি আলোচিত হয়। বৈঠকসূত্রে জানা যায়, সিলেটের নেতারা পরাজয়ের নানা কারণ তুলে ধরেন। নেতাদের কেউ কেউ একে অন্যের প্রতি ইঙ্গিত করে ব্যর্থতার দায় চাপান। এ সময় অর্থমন্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন কয়েকজন নেতা। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক পদবিধারী নেতা বলেন, ‘নির্বাচনে ভোট দিতে এসে অর্থমন্ত্রী “কামরান ভালো, আরিফও ভালো” এমন বক্তব্য দেন। এতে দলীয় প্রার্থীর ক্ষতি হয়েছে। অর্থমন্ত্রী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক কাউন্সিলর প্রার্থীর নাম ধরে তাকে “গুন্ডি” বলে সম্বোধন করেন। এ বিষয়টি ভালোভাবে নেননি সংখ্যালঘুরা। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে মেয়র নির্বাচনে।’ আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘সিলেটে আমাদের দলীয় কার্যালয় নেই। কার্যালয়ের জন্য আমাদের কোনো জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। কিন্তু মন্ত্রীর এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় নগরীর প্রাণকেন্দ্রে বিশাল জায়গা নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছেন।’ ক্ষুব্ধ আরেক নেতা বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী সিলেট-১ আসনের এমপি। অথচ তার কাছে আমরা যেতে পারি না, সহযোগিতাও পাই না। তিনি নিজ বলয়ের নেতাদের নিয়েই ব্যস্ত থাকেন।’ বৈঠকে নেতাদের বক্তব্য শোনার পর নিজে বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘সারা দেশে সিটি নির্বাচেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মেয়র হয়েছেন। ভিন্ন শুধু সিলেট। সিলেট আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে বিবেচিত হলেও বর্তমানে এখানে আওয়ামী লীগের অবস্থান তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আগে আমরা সিলেট আওয়ামী লীগের অবস্থান নিয়ে গর্ব করতাম, এখন আর তা নেই।’ তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে কোন নেতা কী করেছেন, কারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, সে তথ্য আমাদের কাছে আছে। আরও তথ্য আমরা সংগ্রহ করছি। জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব নেতাকে শোধরাতে হবে। নইলে বিপদে পড়বেন। দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ সূত্র জানায়, বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘নেত্রী সবার খোঁজখবর রাখেন। দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের পেছনে কারা কারা কাজ করেছেন তিনি সব জেনেছেন। সময়মতো আপনাদের কর্মফল পাবেন।’ বৈঠকে জেলা ও মহানগর নেতাদের বক্তব্য লিখিত আকারে দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পাদকের একটি রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। সিটি নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থীকে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কামরান! তুমি আর কাঁদিও না, রাজনীতি কাঁদার জায়গা নয়।’ উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য দেওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ওবায়দুল কাদের সিলেটের ১৩ উপজেলার মধ্যে ৭টিতে এখনো কেন কমিটি দেওয়া হয়নি, এ বিষয়টি জেলা নেতাদের কাছে জানতে চান। দ্রুততার সঙ্গে কমিটি দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগকে চাঙা করার নির্দেশ দেন তিনি। সিলেটে আওয়ামী লীগের কার্যালয় এক মাসের মধ্যে করার নির্দেশও দেন।

 এ বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুত্ফুর রহমানকে দেন তিনি। বৈঠকসূত্র জানায়, কয়েক মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের সব বিভেদ ভুলে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের স্বার্থে কাজ করার আহ্বান জানান সিলেটের নেতাদের। দল যাকে মনোনয়ন দেয়, তার পক্ষে সর্বাত্মকভাবে কাজ করার নির্দেশও দেন তিনি। বৈঠকে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুত্ফুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর