শনিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রকাশ্যে এলো গোয়েন্দা নথির বঙ্গবন্ধু

যে নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল সে নাম মুখে মুখে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

যে নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল সে নাম মুখে মুখে : প্রধানমন্ত্রী

গণভবনে গতকাল ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গে তাঁর কন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল সে নাম আজ বিশ্বের মানুষের মুখে মুখে। সত্যকে কখনো মুছে ফেলা যায় না, ইতিহাস থেকে বাদ দেওয়া যায় না। জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ আজ বিশ্বের অন্যতম ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক বইটির প্রথম খণ্ডের প্রকাশনা উৎসবে তিনি এসব কথা বলেন। 

ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিচালক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারি, হাক্কানী পাবলিশার্সের প্রকাশক গোলাম মোস্তফা, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’-এর সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান। প্রধানমন্ত্রী বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। বইটির প্রথম খণ্ড ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত ডকুমেন্টের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত হলেও এ খণ্ডে ১৯৪৭-এর দেশ বিভাগের আগেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার বিবরণ পাওয়া যায়। ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামী জীবনের প্রথমদিকের জানা-অজানা অনেক তথ্যের সন্নিবেশ ঘটেছে এ খণ্ডটিতে।

বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধাদের। উৎসর্গ পত্রে লেখা আছে- ‘বঙ্গবন্ধু তাঁর সংগ্রামী জীবনের সকল সহযোদ্ধাদের প্রতি...’। বইটি প্রকাশ করছে হাক্কানী পাবলিশার্স। প্রচ্ছদ করেছেন সমর মজুমদার। ৫৮২ পৃষ্ঠার প্রথম খণ্ডের মূল্য ৯০০ টাকা।

অনুষ্ঠানে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার একেএম নুরুল হুদাসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই বইটিতে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষণ আন্দোলন সম্পর্কিত অনেক অজানা তথ্যের সন্ধান মিলবে। যা সঠিক ইতিহাস জানতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কারণ, এটা জাতির পিতার বিপরীত চিন্তার মানুষের কাজ। অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ (ইবি) ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু যেসব রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞ করেছেন। ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক শ্রমিক তথা মেহনতি মানুষের কল্যাণে তিনি কী কী করেছেন, মানুষের মুক্তির জন্য তিনি দেশব্যাপী কী কী কর্মসূচি করেছেন ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ লিপিবদ্ধ করে।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই রিপোর্ট তো জাতির পিতার বিরুদ্ধে, তবে কেন আমরা প্রকাশ করতে গেলাম। খুব স্বভাবতই এমন প্রশ্ন আসতে পারে। আমি এজন্যই করেছি যে, বিরুদ্ধ মতের মানুষেরা বঙ্গবন্ধুকে কীভাবে নজরদারিতে রেখেছে, তাদের দৃষ্টিতে জাতির পিতা কোন কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। কী কী আন্দোলন করেছেন। এটা পড়ার পর কোনো মানুষের মনে সংশয় থাকবে না।

তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে এমন নজির নেই যে, বিরুদ্ধ পক্ষের তথ্য দিয়ে বই রচনা করে। আমি মনে করি, এই বইটি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস রচনায় আকর গ্রন্থ হিসেবে কাজ করবে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পরম সতীর্থ সাহিত্যিক বেবী মওদুদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি আমার বন্ধু বেবী মওদুদ মিলে দীর্ঘদিন ধরেই এ কাজটি করছিলাম। ১৯৯৬ সালে প্রথম যখন ক্ষমতায় আসি তখন যখন এসবি-র ডিআইজি সামসুদ্দিন সাহেবকে বলেছিলাম এসবি সংগ্রহশালায় এমন রত্নভাণ্ডার আছে তা যেন তিনি সংরক্ষণ করেন। পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী তখন এসবির দায়িত্বে ছিলেন। তিনি তার ২২ জন সদস্য নিয়ে নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে এ কাজটি করে যান। আমি দেখেছি এরা এ কাজটি করতে গিয়ে কীভাবে মগ্ন হয়ে যান। কত কষ্ট করে এই নথিগুলো উদ্ধার করে কাজটি সম্পাদন করেন। তাদের এ আন্তরিকতার জন্য তিনি খুশি হয়ে বইটির সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার সঙ্গে ছবি তোলেন এবং পরবর্তী ১৪ খণ্ড দ্রুততার সঙ্গে প্রকাশের জন্য বইটির প্রকাশক হাক্কানী পাবলিশার্সের কর্ণধারকে বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে ববীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, আমি যখন খবর পাই যে, স্পেশাল ব্রাঞ্চের সংগ্রহশালায় এমন নথি আছে তখন সেখানে যাই। দেখি কী অবস্থায় আছে এসব নথিগুলো। তখন আমার সহকর্মীরা বলেছিল, স্যার এটা বোধহয় করা সম্ভব হবে না। কারণ ময়লা ধুলাবালি আর কাগজের স্তূপ। আমি আমার সহকর্মীদের নিয়ে মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে কাজে হাতে দেই। একপর্যায়ে গিয়ে একটা বান্ডেল পাই। তিনি বলেন, কী পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যে নথিগুলোকে উদ্ধার করি তা বলে বোঝানো যাবে না। কাগজে হাত দেওয়ার পর বিস্কুটের মতো ভেঙে যেত। আর্কাইভের স্পেশালিস্টদের যুক্ত করি এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে কাজটি করি।  সভাপতির বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, জীবনে অনেক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছি কিন্তু আজকের মতো এমন দুর্লভ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন এই প্রথম করলাম। এত পরিশ্রম করে এমন অপূর্ব বই পৃথিবীর আর কোথাও হয়েছে বলে আমার জানা নেই।  বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, এই বইটি পাঠ করার পর শুধু বঙ্গবন্ধুর নয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস স্পষ্ট হবে। বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি পূর্ণ জীবনী গ্রন্থ রচনা করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বইটির তত্ত্বাবধানের কাজে ছিলেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠানে তিনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

সর্বশেষ খবর