মঙ্গলবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
নির্বাচনী কৌশলে দুই দল

বিএনপির হেভিওয়েট কেন্দ্রীয় টিম মাঠে

কাল সিলেট যাবে ড. কামালের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট

মাহমুদ আজহার

বিএনপির হেভিওয়েট কেন্দ্রীয় টিম মাঠে

আগামীকাল বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণায় নামছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা যাবেন সিলেটে। সেখানে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.) ও  মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে ধানের শীষের পক্ষে ভোট প্রচারণা শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে সড়কপথে সারা দেশে প্রচার চালাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। পৃথকভাবে বিএনপি  নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের পক্ষে আরেকটি নির্বাচন পরিচালনা টিম গঠন করা হচ্ছে। সংসদীয় এলাকাগুলোতে দুই জোটের পক্ষ থেকেই পৃথকভাবে প্রচারণা চালানো হবে। এতে অংশ নেবেন উভয়জোটের কেন্দ্রীয় নেতারা। এদিকে আসন্ন ভোটকে সামনে রেখে বিএনপির হেভিওয়েট ‘জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে ১৮টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নাম ও পদবি ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। জানা যায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে। এ ছাড়া ওই কমিটিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাবেক সচিব মোফাজ্জল করীমসহ দলের একঝাঁক কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক আমলারা রয়েছেন। উপকমিটির মধ্যে রয়েছে, নির্বাচন কমিশন সমন্বয়, পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, মিডিয়া, অর্থ, প্রচার, রাজনৈতিক, শৃঙ্খলা, প্রশাসন, পেশাজীবী সমন্বয়, আন্তর্জাতিক এবং সাংস্কৃতিক-সামাজিক ও ক্রীড়া,  টেলিভিশন মনিটরিং কমিটি ইত্যাদি। বিএনপি প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলের  চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সিলেটে গিয়ে মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু করতেন। এবার তিনি কারাগারে থাকায় ড. কামাল হোসেনের  নেতৃত্বে সিলেটে মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করবে ঐক্যফ্রন্ট। পরে পর্যায়ক্রমে সারা  দেশে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেবেন শীর্ষ নেতারা। সিলেটে বুধবার মাজার জিয়ারতে যাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন ড. কামাল হোসেন নিজেই। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি জানান, ‘আমরা ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বুধবার সিলেটে মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করব। দেশবাসীর দোয়া চাই, ধানের শীষে ভোট চাই।’ জানা যায়, প্রতিটি সংসদীয় আসনে কেন্দ্রভিত্তিক একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে এই কমিটি সমন্বয় করবে। প্রতিটি আসনেই দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, ১০ বছরে সরকারের নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে একটি লিফলেট তৈরি করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হলে পাড়ায় মহল্লায় প্রতিটি ঘরে ঘরে এই লিফলেট পৌঁছে দেওয়া হবে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি উপকমিটিগুলো গঠনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। যে কোনো সময় ঘোষণা করা হবে। ভোটের  শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কীভাবে টিকে থাকা যায় সে বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। এ নিয়ে  ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পোলিং এজেন্টদের করণীয় নিয়ে ১১ দফা নির্দেশনার একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সময়মতো তা জানিয়ে দেওয়া হবে।’ এদিকে গতকাল থেকেই অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু হয়েছে। গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহানসহ ধানের শীষের প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দের পর নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় অনানুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ করে প্রচারণা শুরু করেন। কেউ কেউ পারিবারিক মাজার জিয়ারত, মিলাদ মাহফিলও করেন। আজ নিজ নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে প্রচারণা শুরু করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমি কালকে ঠাকুরগাঁও যাব। সেখানে ভোটের প্রচারে অংশ নেব। এরপর বগুড়াও যাব। দুই দিন থেকে ঢাকায় ফিরে আসব।’ একাদশ নির্বাচনে মির্জা ফখরুল ঠাকুরগাঁও-১ ও বগুড়া-৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচনের প্রচার শুরু হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে কোনো সমতল ভূমি নেই। আমরা  দেখছি  যে, না আছে মিডিয়ার মধ্যে, না আছে সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে, না আছে প্রচারের মধ্যে। এমনকি আমাদের  নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায়, ভৌতিক মামলায় এখনো গ্রেফতার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা হচ্ছে। জামিনের জন্য তারা বার বার পিছিয়ে দিয়ে এমন একটা অবস্থা তৈরি করেছে, আমাদের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কারাগারে আটক রয়েছেন। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাব, সবাই যাতে প্রচারণা চালাতে পারে, কাজ করতে পারে তার পরিবেশ তৈরি করুন।’ জানা যায়, ড. কামাল সিলেটে মাজার জিয়ারতের পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে ঢাকার বাইরে নাও যেতে পারেন। তবে তিনি ঢাকা মহানগরীর নির্বাচনী এলাকায় প্রচারে অংশ নেবেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি ও সমন্বয় কমিটির নেতারা সারা দেশে প্রচারণা চালাবেন। সিলেটসহ সারা দেশে প্রচারের জন্য ইতিমধ্যে সম্ভাব্য তারিখসহ একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এ নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। তবে দুই জোটের শীর্ষ নেতাদের প্রচারে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল  বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি চূড়ান্ত হয়েছে। এর প্রধান হচ্ছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। আমরাও এই কমিটিতে থেকে ধানের শীষের প্রার্থীকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব।’

সর্বশেষ খবর