বৃহস্পতিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

খেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের তালিকা চেয়েছে হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

গত ২০ বছরে ব্যাংকিং খাতে ১ কোটি টাকার ওপরে খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়েছে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে ঋণের সুদ মওকুফসংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়েছে আদেশে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে এ প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। গতকাল এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেয়।

রুলে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে আর্থিক দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা বন্ধে কমিশন গঠন করে সে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন, ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ, সিটি ব্যাংক এন এ বাংলাদেশের সাবেক সিইও মামুন রশিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থ পাচার রোধে কেন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব; প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের সচিব; অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দুই সচিব; আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব; বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর; সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে দাখিল করা রিটের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে তিন দফা নির্দেশনা দিয়ে আদালত বলেছে, ‘দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকিং খাতে অর্থনৈতিকভাবে একটি নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা উধাও হয়ে গেছে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু কোনো সিকিউরিটি মানি নেই। যারা লোন নিচ্ছে তাদের ঠিকানায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো চরম দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে।’ আদালত শুনানিতে বলে, ‘এই পরিস্থিতি খুব দ্রুত কাটিয়ে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’ আদালত বলেছে, সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকে নিয়ম-নীতি মেনে ঋণ প্রদান করার কথা ছিল। যদি তা না মানা হয়, যারা ঋণ নিয়েছেন এবং অর্থ পাচার করেছেন তাদের তালিকা করে আদালতে দাখিল করতে হবে। এ ছাড়া আত্মসাতের অর্থ দেশ কিংবা বিদেশের যেখানেই থাকুক না কেন, তা ফিরিয়ে আনতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে- তাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের প্রতি তিন দফা নির্দেশনায় আদালত বলেছে, যারা কোটি টাকার ওপরে ঋণখেলাপি তাদের নাম, ঠিকানা, তালিকা আদালতে দাখিল করতে হবে। অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে কী কী ব্যবস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে এবং এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে সে বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এবং ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে যে অনিয়ম চলছে, তা বন্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- সে বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। আদেশের পর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার মধ্যে যেসব অনিয়ম-ত্রুটি আছে সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উকিল নোটিস পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু জবাব না পেয়ে জনস্বার্থ বিবেচনায় এইচআরপিবির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন করেছিলাম। তার ওপর শুনানি নিয়েই আদালত রুল জারিসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের প্রতি তিনটি নির্দেশনা দিয়েছে।’ এক প্রশ্নে মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আদালত যে তালিকা চেয়েছে সে তালিকা এলেই বোঝা যাবে কারা লোন নিয়েছেন, কারা লোন নিয়ে পরিশোধ করেননি, কারা মানি লন্ডারিং করেছেন বা করছেন। এগুলোর বিষয়ে শুনানির সময় আমরা পরবর্তী নির্দেশনা চাইব।’ অর্থ পাচার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে কিছুদিন অগে একটা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকা থেকে। সেখানে কিন্তু বলা হয়েছে কত হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে। যেসব দেশে অর্থ যায় তাদেরও কিন্তু রিপোর্ট আছে। এসব রিপোর্ট ব্যাংকের গভর্নরকে কালেক্ট করে আদালতকে জানাতে হবে। রুল শুনানির সময় কী কী স্টেপ নেওয়া যায় আদালত তখন বলবে।’

সর্বশেষ খবর