শনিবার, ২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবস

তানিয়া তুষ্টি

ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবস

একাত্তরের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে প্রথম জাতীয় পতাকা তোলা হয়েছিল। সবুজ জমিনের ওপর লাল বৃত্তের মাঝখানে সোনালি মানচিত্র খচিত পতাকা। পতাকা উত্তোলন করেন ডাকসুর সহসভাপতি আ স ম আবদুর রব। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, একদিকে বাঙালির নন্দিত নেতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চলছে, অন্যদিকে বাঙালির স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’।

নিউক্লিয়াসের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলো স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলা হবে ২ মার্চ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্র-জনতার এক বিশাল সমাবেশে মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে আমি পতাকা উত্তোলন করি। জনসমুদ্রের সেই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী। পতাকা তোলার সময় পাশে ছিলেন শাজাহান সিরাজ, আবদুল কুদ্দুস মাখনসহ ছাত্রলীগের নেতারা। আ স ম রব বলেন, ১৯৭০

সালের ৭ জুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইকবাল হলের (বর্তমান জহুরুল হক হল) ১১৬ নম্বর কক্ষে বসে স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খানের পরিকল্পনা ও নির্দেশেই আমরা শাজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমেদ, মার্শাল মণি, হাসানুল হক ইনু ও আমি পতাকা তৈরির পরিকল্পনা করি। কিন্তু আমরা কেউ আঁকতে জানি না। তখন সম্ভবত শাজাহান সিরাজ বললেন কুমিল্লা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শিবনারায়ণ দাশ ভালো আঁকতে পারেন। তাকে আনা হলো। আলোচনা করে পতাকার কাঠামো তৈরি করি। সেই মতে এঁকে ফেলেন শিবনারায়ণ। কামরুল আলম খান খসরুসহ অন্যরা পতাকা বানানোয় জড়িত ছিলেন। পতাকা উত্তোলনের পর  থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে ওঠে ‘স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বেলা ১১টায় সমাবেশ। তবে অভূতপূর্ব জনসমাগমের কারণে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সভামঞ্চ কলা ভবনের গাড়ি-বারান্দার ওপর নিয়ে যাওয়া হয়। সভায় স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে যে কোনো ত্যাগ স্বীকার ও সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। সভাস্থল থেকে মুহুর্মুহু স্বাধীনতার স্লোগান ওঠে। এই ঐতিহাসিক সভার সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী অঙ্গীকার ঘোষণা করেন যে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যাওয়া হবে। সভায় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ, ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ শেষে এক বিশাল মিছিল স্বাধীনতার স্লোগান দিতে দিতে বায়তুল মোকাররমের দিকে যায়। সামরিক সরকার এই দিন ঢাকা শহরে সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করে। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-শ্রমিক কারফিউ ভঙ্গ করে মিছিল করে। ‘সান্ধ্য আইন মানি না’, ‘জয় বাংলা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ ইত্যাদি স্লোগান চলতে থাকে। ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় মিছিলগুলোতে সামরিক বাহিনী গুলি চালায়। নিহত ছাত্রের লাশ কাঁধে নিয়ে মিছিল গভর্নর হাউসের দিকে অগ্রসর হয়। সেই মিছিলেও গুলি চালানো হয়। জাতীয় লীগের এক জনসভায় আতাউর রহমান খান আওয়ামী লীগ, ভাসানী ন্যাপ, ওয়ালী ন্যাপ ও জাতীয় লীগের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে গণআন্দোলনের আহ্বান জানান। এই আন্দোলন ঢাকা থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

সর্বশেষ খবর