শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

উন্নয়ন কাজে মানুষের ক্ষতি যেন না হয় : প্রধানমন্ত্রী

মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম প্রকল্পের উপস্থাপনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

উন্নয়ন কাজে মানুষের ক্ষতি যেন না হয় : প্রধানমন্ত্রী

দেশব্যাপী চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে মানুষের জীবন ও জীবিকা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর দিতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, উন্নয়ন মানুষের জন্য। তাদের ক্ষতি করে যেন এই উন্নয়ন না হয়।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম প্রকল্পের উপস্থাপনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের এই পরামর্শ দেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য লেখক মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। মহেশখালী-মাতারবাড়িতে স্থাপিত প্রকল্পের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম হলে শুধু ওই অঞ্চলেরই নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সেটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একটা সময় কক্সবাজারে কিছুই ছিল না। পুরো কক্সবাজারে লবণ ও পান চাষ হতো। সেখানে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। কক্সবাজারের জনগণের মতামত নিয়েই এই উন্নয়ন কাজ চলছে। অনষ্ঠানে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, প্রকল্পের জন্য মানুষের জমি অধিগ্রহণ করতে হয়। তারা যেন সময় মতো জমির যথাযথ মূল্য পায়, তাতে দৃষ্টি দিতে হবে।

কক্সবাজারের বিরাট সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলকে পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সেখানে ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেন চালু হবে। বিমানবন্দরের উন্নয়নও করা হচ্ছে।  তিনি বলেন, কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী নিয়ে বড় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। জাপানের সহায়তায় মাতারবাড়িতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ এই পরিকল্পনার অংশ। এ ছাড়া সেখানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলও হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের কারণে গোটা কক্সবাজারের সামাজিক ও প্রাকৃতিক সমস্যা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা আলাপ করে যাচ্ছি, একটা চুক্তিও করেছি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকেও বলছি, রোহিঙ্গাদের যেন তাদের নিজের দেশে ফেরত নিয়ে যায়। এর ফলে আমাদের স্থানীয় মানুষরা কষ্ট পাচ্ছে। তাদের চাষ উপযোগী জমি নষ্ট হচ্ছে, বন নষ্ট হচ্ছে, প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ৪০ হাজার ছোট্ট শিশু জন্ম নিয়েছে। এরা ক্যাম্পে কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লার জেটি এবং একটি এলএনজি টার্মিনাল মাতারবাড়িতে গড়ে তোলা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম অংশীদার চীন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ সময় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানেও চীনের সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।

গণভবনে গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী সঙ তাউয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ আহ্বান জানান।

একই সঙ্গে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। এ ছাড়া ১৯৫২ ও ’৫৬ সালে বঙ্গবন্ধুর চীন সফরের কথাও স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিস রাইটার নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার জন্য চীন কাজ করছে এবং মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছে।’ এ সময় টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান তিনি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন। একই সঙ্গে চীন সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে চীন সফরের আমন্ত্রণও জানান। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন সঙ তাউ। এ সময় প্রতিনিধি দলের নেতা আওয়ামী লীগ ও সিপিসি- এ দুই দল এবং সরকার ও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর স্পিস রাইটার। পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) দুই দলের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

সর্বশেষ খবর