মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

উপজেলা ভোটে গিয়ে বিএনপির ১৭৩ নেতা বহিষ্কার, বিজয়ী ৬

মাহমুদ আজহার

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচনে ভোট করায় এ পর্যন্ত ১৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। মাঠপর্যায়ের এসব নেতা দলীয় প্রতীকে ভোটে অংশগ্রহণ করেননি। লড়েছেন স্বতন্ত্রভাবে। তাদের দোষ শুধু উপজেলা ভোটে অংশ নেওয়া। এ নিয়ে দলের ভিতরে বাইরে-সমালোচনার ঝড় বইছে। ঠুনকো ঘটনায় দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও বাদ দেওয়াকে বিএনপির বড় একটি অংশ ভালোভাবে দেখছেন না। তারা বলছেন, দলে এখন চরম দুঃসময় চলছে। এর মধ্যে তৃণমূল নেতাদের বহিষ্কার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। রাজনৈতিক বড় বড় ভুল সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় নেতারা নিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কথায় কথায় শুধু তৃণমূল নেতাদের বহিষ্কার করা ভালো নজির নয়। কারণ ওয়ান-ইলেভেনসহ বিগত দুঃসময়ে তৃণমূল নেতারাই বিএনপি ও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আগলে রেখেছিলেন। তাদের পুরস্কৃত না করে বহিষ্কার খুবই দুঃখজনক।

এদিকে কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার করলেও কয়েকজন নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা সভাপতি ফারুক আহমেদ, বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় মো. আবুল কালাম, হবিগঞ্জের মাদবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম শাহজাহান, রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান নূরুজ্জামান, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়া এবং নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকসানা পারভীন প্রমুখ। এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, ‘দল থেকে বহিষ্কার হলেও দলের নেতা-কর্মীরাই আমাকে ভোট দিয়েছেন। স্বপদে ফিরতে আমি মহাসচিব বরাবর আবেদন করব। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে। আশা করি, দলে ফিরতে কোনো সমস্যা হবে না।’ নড়াইল সদর উপজেলা থেকে নির্বাচন করেন নড়াইল জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বাবু অশোক কুমার কু্ন্ড। সম্প্রতি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানান, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তবে শুরুতে শুনেছিলাম, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা যাবে না। তাই আমি স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছি। আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।’ তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির সবারই জানা, শেখ হাসিনার অধীনে কী ধরনের নির্বাচন হতে পারে। তারপরও তৃণমূলের কিছু নেতা দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এটা আমরা প্রত্যাশা করিনি। তাই বিএনপি তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।’ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, তৃতীয় ধাপ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপির মাঠপর্যায়ের ১৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সামনে আরও দুই ধাপ নির্বাচন আছে। সেখানেও কিছু নেতা অংশ নিতে পারেন। এক্ষেত্রে তাদেরও বহিষ্কার করা হবে। তবে যেসব নেতা দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা ভোটে অংশ নিচ্ছেন, তাদের বহিষ্কার করছে না বিএনপি। যারা স্বপদে থেকে ভোটে অংশ নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ উদ্যোগের পক্ষে যুক্তি তুলে তারা বলেন, এটা দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত। বিএনপির সবাইকে এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। নইলে শাস্তির খড়গ আসবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলের সিদ্ধান্ত ছিল, এই সরকারের অধীনে বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে যাবে না। এই বার্তা তৃণমূলেও পৌঁছে দেওয়া হয়। কিন্তু তৃণমূলের কিছু নেতা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তাই দলের নীতিনির্ধারকরা তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

সর্বশেষ খবর