বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

দেশে ফিরে নেতা-কর্মীদের সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী

জ্বালানিতে সমন্বিত অংশীদারিত্ব গড়বে বাংলাদেশ-ব্রুনাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে ফিরে নেতা-কর্মীদের সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী

শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলায় মারা গেছে নাতি। ব্রুনাই সফর শেষে দেশে ফিরে ফুফাতো ভাই শেখ সেলিমকে সান্ত্বনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ব্রুনাই সফর শেষে ঢাকায় ফিরেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলায় নাতি হারানো দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় দুই ভাই-বোন (শেখ হাসিনা- শেখ সেলিম) মুখোমুখি হয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। শেখ ফজলুল করিম সেলিমের কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনা দেন শেখ হাসিনা। শেখ সেলিমকে সঙ্গে নিয়ে সোজা গণভবনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। অপরিচিত কাউকে দেখলেই বা কারও গতিবিধি সন্দেহ হলে নিকটস্থ থানায় অবহিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, সেটা মনে রাখতে হবে। সেটা মনে রেখেই আমাদের চলতে হবে। সব সময় মনে করতে হবে আমাদের একটা বৈরী পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে এগিয়ে যেতে হবে। গণভবনে উপস্থিত একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এমন তথ্য জানিয়েছেন। গণভবনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, কেন্দ্রীয় সদস্য মির্জা আজম, এস এম কামাল, আমিরুল আলম মিলন প্রমুখ।  উপস্থিত নেতা-কর্মীরা জানান, শ্রীলঙ্কায় নজিরবিহীন সন্ত্রাসী হামলার পর দেশে ফিরে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন সতর্কবার্তা বিশেষত্ব বহন করে। গতকাল রাতেই বিভিন্ন জেলা নেতাদের কাছে দলীয় সভানেত্রীর বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

জ্বালানিতে সমন্বিত অংশীদারিত্ব গড়বে বাংলাদেশ-ব্রুনাই : বাসস জানায়, জ্বালানি খাতে সমন্বিত সহযোগিতার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ব্রুনাই। গতকাল দেশ দুটির এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্বার্থে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদার জোগান দিতে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহসহ সরকার-টু-সরকার (জিটুজি) চুক্তির আওতায় দুই দেশ জ্বালানি খাতে সমন্বিত সহযোগিতার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সম্মত হয়েছে বলে  যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, পেট্রোকেমিক্যাল, সমুদ্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান, কারিগরি সহযোগিতা ও সক্ষমতা উন্নয়নের মতো খাতে দুই দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত সহযোগিতায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়া সম্মত হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, দুই নেতা বিনিয়োগের সম্ভাবনার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থে বিশেষ করে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, জ্বালানি, আইসিটি, জাহাজ নির্মাণ, ম্যানুফ্যাকচারিং, পর্যটন অবকাঠামো এবং পাটশিল্পের মতো খাতে পারস্পরিক বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সম্মত হয়েছেন। ব্রুনাই দারুস সালাম বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের সুযোগ নিয়ে বিশ্বব্যাপী ‘হালাল ফুড মার্কেটে’ প্রবেশের সুযোগ কাজে লাগাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। হালাল ফুড শিল্পে ব্রুনাইয়ের দক্ষতা প্রমাণিত। পারস্পরিক চুক্তি অনুযায়ী উভয় পক্ষ প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়নে স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা আরও জোরদার করবে। বিশেষ করে প্রশিক্ষণ, হেলথ কেয়ার প্রফেশনাল নিয়োগ ও ওষুধ উৎপাদন এবং বাণিজ্যের পাশাপাশি বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবায় সহযোগিতায় সম্মত হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগে কার্যকর সুযোগ-সুবিধা দিতে আর্থিক কার্যক্রম জোরদারে দুই দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রতি উভয় পক্ষ জোর দিয়েছে। অভিন্ন স্বার্থ এবং সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, পরিবেশগত সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জাতিসংঘ, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), কমনওয়েলথ এবং আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহযোগিতা আরও জোরদারে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। আসিয়ানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে অব্যাহত চেষ্টার প্রতি দুই নেতা সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং এই সম্পর্কোন্নয়নে পারস্পরিক লাভবান হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে তারা সম্মত হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেওয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের মানবিক সহযোগিতা প্রদান এবং তাদের প্রত্যাবাসন উদ্যোগের প্রতি ব্রুনাই দারুস সালাম সমর্থন দিয়েছে। এতে আরও বলা হয়, রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরণ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বতঃস্ফুর্ত প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টার জন্য ব্রুনাই বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য সুলতানের সরকার এবং কক্সবাজারে ফিল্ড হাসপাতালে জরুরি ওষুধ ও স্বাস্থ্য উপকরণ সরবরাহ এবং আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য ইয়াং ডি পারতুন অব ব্রুনাই দারুস সালামের প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবৃদ্ধি লাভ এবং সামাজিক খাতে অসামান্য সাফল্য অর্জন করায় ব্রুনাইয়ের সুলতান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন।

সর্বশেষ খবর