শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

কাঁদছে কৃষক পুড়ছে ধান

ক্ষোভে দুঃখে রাস্তায় ধান ফেলে প্রতিবাদ মানববন্ধন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

কাঁদছে কৃষক পুড়ছে ধান

রংপুরে গতকাল রাস্তায় ধান ফেলে প্রতিবাদ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ধানের ভান্ডার বলে খ্যাত শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ীর হাকাম হীরা খুব আশা নিয়ে ১০ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। এতে তার খরচ হয়েছিল ৪ লাখ টাকা। ওই জমি থেকে তিনি মোট ৬৫০ মণ ধান পেয়েছেন। এই ধান বিক্রি করেছেন ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। বোরো মৌসুমে তার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। এর বাইরে জমির ভাড়া হিসেবে আরও এক লাখ টাকা যোগ করলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় পৌনে দুই লাখ টাকা। নিজের পরিশ্রম তো আছেই। দুঃখে-ক্ষোভে এখন সীমান্তবর্তী উপজেলার এই গৃহস্থ বলছেন, তিনি আর কোনো দিনও ধান চাষ করবেন না। শুধু নালিতাবাড়ী নয়, সারা দেশেই ধানের দাম নিয়ে কৃষকের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। কৃষকরা বলছেন, বাজারে এক লিটার পানির দাম ১৫ টাকা, আর এক কেজি ধানের দাম ১০ থেকে ১২ টাকা। এক মণ ধান বিক্রি করেও কৃষক এক কেজি খাসির মাংস কিনতে পারছেন না। একটি ইলিশ মাছ কেনার জন্য একজন গৃহস্থকে দুই মণ ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। অবস্থাটা এমন যে, বাজারে এখন সবকিছুই দামি, কেবল ধানের দাম পানির চেয়েও কম। রোদে পুড়ে  দেশের মানুষের মুখের খাদ্য তুলে দেওয়া দুর্ভাগা কৃষক উৎপাদিত পণ্যের দাম না পেয়ে হতাশা-ক্ষোভে-কষ্টে নিজের খেতের ধানে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন। টাঙ্গাইলে ধানের দাম কম হওয়ায় দিশাহারা হয়ে কালিহাতীর এক কৃষক সম্প্রতি তার নিজের পাকা ধানখেতে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। পার্শ্ববর্তী উপজেলা বাসাইলেও দাম না পেয়ে গত সোমবার নিজের ধানের খেতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে কাঁদতে থাকেন কৃষক নজরুল ইসলাম। সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ২৩ টাকা। তার অর্ধেক দামও পাচ্ছে না কৃষক। শুধু যে ধানের দাম কম তাই নয়, কৃষকের দুর্ভাগ্য আরও আছে। ধান কাটার শ্রমিকও মিলছে না সহজে। অনেক জায়গায় শ্রমিকের জন্য এক মাস আগেই চুক্তি করতে হচ্ছে। যদিও শ্রমিক মিলছে তাকে দৈনিক ভিত্তিতে মজুরি দিতে হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা। এর ওপর সকালের নাস্তা আর দুপুরের খাবার রয়েছে। ধান কাটার পরপরই পরিশোধ করতে হচ্ছে মজুরি।

বিভিন্ন জেলায় কৃষক ও ধান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকের উৎপাদিত ধানের দাম না পাওয়ার পেছনে ভুল নীতি ও ফড়িয়া-মধ্যস্বত্বভোগীর সিন্ডিকেট কাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা যে কারণগুলো জানিয়েছেন সেগুলো হচ্ছে; কৃষকরা ধান বিক্রি করলেও সরকারিভাবে খাদ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়নি; সরকার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান না কিনে, মিল মালিকদের কাছ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে; এতে কৃষকের লাভ হয় না।

সমাধান কি নেই? কৃষি অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর ড. এম এ সাত্তার ম-ল মনে করেন এ সমস্যা সমাধানে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, সরকার-ধান চালের একটা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে, কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে কৃষক যখন ধান বিক্রি করছে সরকার তখন কিনছে না। এ কারণে কৃষক দাম পাচ্ছে না। সরকারের উচিত হবে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ক্রয়প্রক্রিয়া শুরু করা। 

বাড়ছে ক্ষোভ : ধানের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে। বরিশালে হয়েছে মানববন্ধন। বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের উদ্যোগে এ মানববন্ধন করা হয়। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার দাবিতে দুপুরে রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ সাতমাথা এলাকায় রংপুর-কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট মহাসড়কে ধান ফেলে বিক্ষোভ করেছেন কৃষক। কৃষক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে বিক্ষোভে শত শত কৃষক অংশ নেন। কৃষিতে সর্বোচ্চ ভর্তুকি নিশ্চিতের দাবিতে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কে মানববন্ধন করেছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

 বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী হাবিপ্রবির সামনে মহাসড়কে এ মানববন্ধন করেন তারা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর