শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে হাই কোর্ট

চাকরি দরকার কী, ঘরে গিয়ে রান্না করুন

বিএসটিআই পরীক্ষা করা আরও ৯৩ পণ্যের প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানহীন ৫২টি খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার ও জব্দে উচ্চ আদালত যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা বাস্তবায়ন না করায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট। সংস্থাটির আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আদালত বলেছে, ‘ইস্কাটনের অফিসের পাশে ১৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশ মিলে একটি পণ্যও জব্দ করতে পারলেন না? আপনাদের অফিস রাখার দরকার কী? ঘরে গিয়ে রান্নাবান্নার কাজ শুরু করে দেন। নতুবা ব্যাংকে গিয়ে কেরানির চাকরি করতে বলেন।’ গতকাল ৫২ পণ্য প্রত্যাহার ও জব্দ বিষয়ে

আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি-সংক্রান্ত শুনানিতে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করে।

শুনানি শেষে আদেশ বাস্তবায়ন না করায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার কার্যক্রম শুরু করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছে আদালত। একই সঙ্গে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে আগামী ১৬ জুন তাকে সশরীরে হাজির হতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি বিএসটিআই ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে, যার মধ্যে ৫২ পণ্য মানহীন বলে প্রতিবেদন দেয়। বাকি ৯৩ পণ্যের পরীক্ষার ফলও জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। ১৬ জুনের মধ্যে তা আদালতে দাখিল করতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। ভোক্তা অধিকারের পক্ষে ছিলেন কামরুজ্জামান কচি। প্রাণ অ্যাগ্রোর পক্ষে ছিলেন এম কে রহমান। এসিআইর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। সান চিপসের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম। বাঘাবাড়ী ঘির পক্ষে মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী এবং বিএসটিআইর পক্ষে ছিলেন সরকার এম আর হাসান। গতকাল ধার্য তারিখে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম ও ভোক্তা অধিকারের পক্ষে আইনজীবী কামরুজ্জামান কচি পৃথক প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালত নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের দাখিল করা প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট হতে পারেনি।

শুনানির সময় হাই কোর্ট নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেছে, ‘পণ্য জব্দ ও প্রত্যাহার করতে আদেশ দেওয়া হয়েছিল। আপনারা একটি মশলার প্যাকেটও জব্দ করতে পারেননি। ভদ্রতার একটি সীমা আছে। ভদ্রতাকে দুর্বলতা মনে করবেন না। আপনারা চিঠি দিয়েছেন, অনুরোধ করেছেন, কিন্তু পণ্য জব্দ বা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেননি। ইস্কাটনের অফিসের পাশে ১৭ জন (মোট জনবল) ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশ মিলে একটি পণ্যও জব্দ করতে পারলেন না? আপনাদের অফিস রাখার দরকার কী? ভয় পাচ্ছেন? বড় বড় ব্যবসায়ী (পণ্য উৎপাদনকারী) কী করে ফেলেন বা কী করবেন। এমনটি হলে চাকরি করার দরকার কী?’

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলে, ‘ঘরে গিয়ে রান্নাবান্নার কাজ শুরু করে দেন। নতুবা ব্যাংকে গিয়ে কেরানির চাকরি করতে বলেন। বসে বসে টাকা গুনবেন, টাকার হিসাব রাখবেন।’

আদালত বলেছে, ‘হাই কোর্টকে কি হাই কোর্ট দেখাচ্ছেন? আমরা এগুলো বুঝি। বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সোজা না বলে বাঁকাভাবে বলছেন।’ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী জানান, তিনি রাতে নির্দেশনা বাস্তবায়নবিষয়ক প্রতিবেদন পেয়েছেন। এই আইনজীবীকে আদালত বলে, ‘আরেকটা অজুহাত দিলেন।’ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কার্যক্রম-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আদালত বলেছে, ‘আমরা আশা করব, বছরজুড়ে প্রতিষ্ঠানটি এমন কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।’ ভোক্তা অধিকারের আইনজীবী দেশের বিভিন্ন জেলায় মানহীন ওই সব পণ্য জব্দ ও প্রত্যাহার এবং জরিমানা করার তথ্যাদি আদালতে তুলে ধরেন।

সর্বশেষ খবর