শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

অর্জনের ইতিহাসে উজ্জ্বল আওয়ামী লীগ : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্জনের ইতিহাসে উজ্জ্বল আওয়ামী লীগ : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের ৭০ বছরে অর্জনের ইতিহাস উজ্জ্বল মন্তব্য করে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, আমরা অহমিকায় নয়, মাটির সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে মিশে চলব। যাতে দেশের মানুষের কল্যাণ হয়। বাংলাদেশের মানুষ যেন আন্তর্জাতিকভাবে মাথা উঁচু করে মর্যাদা নিয়ে সম্মানের সঙ্গে চলতে পারে। গতকাল বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বাংলা স্বাধীনতা হারায়। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই আওয়ামী লীগই বাংলাদেশকে স্বাধীন করে। তিনি বলেন, জনগণের জন্য কাজ করে বলেই আওয়ামী লীগের ওপর বার বার আঘাত এসেছে। তবু ৭০ বছর ধরে আওয়ামী লীগ টিকে আছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল, যতবারই যারা ষড়যন্ত্র করে ভেঙেছে-যেমন, হীরার টুকরা যত কাটে তত উজ্জ্বল হয়, আওয়ামী লীগ ঠিক সেটাই হয়েছে। 

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিনিয়তই শক্তিশালী হচ্ছে। আওয়ামী লীগের শিকড় বাংলাদেশের মাটির সঙ্গে এমনভাবে প্রোথিত যে কেউ উপড়ে ফেলতে পারবে না। আওয়ামী লীগ আরও যেন শক্তিশালী হয় সে লক্ষ্যে নেতা-কর্মীদের কাজ করতে হবে। দলীয় নেতা-কর্মীদের জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু বলে গেছেন মহৎ অর্জনের জন্য মহান ত্যাগের প্রয়োজন। তাই সবাইকে বড় অর্জনের জন্য আত্মত্যাগ করতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আমরা জনগণের জন্য কাজ করি। আমাদের দল ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের মানুষ অন্তত কিছু পায়। বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার কারণেই বার বার নির্যাতনের পরও শক্তিশালী হয়েছে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। সেই আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই পরবর্তী সময়ে দেশের স্বাধীনতা এসেছে। আওয়ামী লীগকে গড়ে তুলতে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর মন্ত্রীর পদ ছেড়ে দল গোছাতে কাজ করেছেন বঙ্গবন্ধু। সারা বাংলাদেশ ঘুরে তিনি দল গড়ে তুলেছেন। শেখ হাসিনা দলের নেতা-কর্মীদের অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস যদি দেখি আমার মনে হয় না কোনো রাজনৈতিক দল, একটা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য এত আত্মত্যাগ করেছে, যতটা আওয়ামী লীগ করেছে। এরপর ভাঙাগড়ার খেলা তো আছেই। এ প্রসঙ্গে এক-এগারোর সময়কার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেশি দিন দূরে যেতে হবে না। ২০০৭ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলো। এর আগে ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। সাধারণত আমরা দেখি যখন এ রকম মার্শাল ল’ আসে বা কোনো ইমারজেন্সি হয় বা কেউ ক্ষমতায় আসে, ইমিডিয়েট পাস্ট (ঠিক আগের সরকার) তাদের ওপরই আঘাত আসার কথা। কিন্তু সবার আগে আঘাত এলো আওয়ামী লীগের ওপর। আমাকে দেশে আসতে দেবে না। আমি যখন জোর করে এলাম, আমাকে আগে গ্রেফতার করা হলো। আমার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হলো। তার অর্থ এখানেই বোঝা যায়? তিনি বলেন, আমরা যেহেতু জনগণের কাজ করি, কাজেই জনগণের অধিকার যারা কেড়ে নেয়, তাদের একটা শ্যান দৃষ্টি থাকে আওয়ামী লীগের ওপর যে এই দলটাকে ধ্বংস কর। আর যতই তারা ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে, এই দলটা তত বেশি শক্তিশালী হয়েছে। সেটা প্রমাণ হয়েছে ২০০৮ সালের নির্বাচনে। শেখ হাসিনা বলেন, এই বাংলাদেশে হতদরিদ্র বলে কিছু থাকবে না। জাতির পিতা মানুষকে ভালোবাসতেন। কাজেই দেশের মানুষের কল্যাণ করাই একমাত্র লক্ষ্য। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরও মনে রাখতে হবে, আমাদের উত্তরসূরি যারা, তারা যেভাবে আত্মত্যাগ করে গেছেন, ঠিক প্রত্যেকটি নেতা-কর্মীকে জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। তিনি বলেন, আমরা ছোটবেলায় কী শিখেছি, আমাদের বলেছেন, সিম্পল লিভিং হাই থিঙ্কিং অর্থাৎ উচ্চমানের চিন্তা-ভাবনা করবে সাধারণ জীবনযাপন করবে। তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর ২১ বছর বঞ্চনার ইতিহাস। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমরা ক্ষমতায় আছি। দশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের চিত্র বদলে গেছে। আজকের বাংলাদেশ সারা বিশে^ সম্মান পাচ্ছে। কারণ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি বলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ ভাগে উন্নীত করতে পেরেছি। সামনে আমাদের টার্গেট ৮ দশমিক ২ ভাগে উন্নীত করা। আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ ডলারে উন্নীত করতে পেরেছি। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রতিজ্ঞা হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ ঘর পাবে। কত মানুষ এখনো গৃহহারা বা ভূমিহীন সেই হিসাব করে প্রত্যেকটি মানুষকে ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। যার জমি আছে, ভিটা আছে, ঘর নাই তাকেও ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি, একটি মানুষ যদি কষ্ট পায়, আমার আব্বার আত্মা কষ্ট পাবে। কাজেই আমাকে এমনভাবে কাজ করতে হবে, এদেশের প্রত্যেকটি মানুষের যেন ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। অন্তত তার জীবনের ন্যূনতম চাহিদা যেন পূরণ করতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। খাদ্যের ব্যবস্থা করছি। দেশের মানুষের কল্যাণ হচ্ছে। দেশের মানুষের জীবন মান উন্নত হচ্ছে। এই উন্নয়নের গতিধারাটা অব্যাহত থাকবে। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত ও উত্তরের সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ। সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

 

সর্বশেষ খবর