রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ভোট প্রস্তুতি

ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন, রাজধানীতে মোট ১৩২ ওয়ার্ড, উত্তরে ৫৭ ও দক্ষিণে ৭৫ এবং চট্টগ্রামে ৪১, তিন সিটিতেই আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী

মাহমুদ আজহার, রফিকুল ইসলাম রনি ও সাইদুল ইসলাম

ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ভোট প্রস্তুতি

সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে শুরু হয়েছে ভোট প্রস্তুতি। ঢাকা মহানগরে মোট ১৩২টি ওয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৭৫টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনে ৫৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। ওয়ার্ড পর্যায়ে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও দেখা মিলছে তাদের। দিবসভিত্তিক কর্মসূচিতেও শোডাউন করছেন কেউ কেউ। বিভিন্ন দিবসের শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে স্থানীয়ভাবে পোস্টার সাঁটানো হচ্ছে। এখন ওয়ার্ড পর্যায়ে ভোটের হাওয়া লেগেছে। গত সিটি নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছিলেন তারা এবারও প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। আবার অনেক ওয়ার্ডে নতুন মুখও আসতে পারে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফোরকান আওয়ামী লীগ মনোনীত। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দল চাইলে আবারও আমি প্রার্থী হতে চাই। বিশাল এলাকাজুড়ে আমার ওয়ার্ড। এক মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে সব সমস্যার সমাধান করা যায় না। সে জন্য ধারাবাহিকতা দরকার। আমি সেভাবেই কাজ করছি। বাকিটা আমার দল ও এলাকার জনগণের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নেব।

এদিকে বর্তমান কাউন্সিলরের পাশাপাশি সমানতালে কাজ করছেন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরাও। ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে গতবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। এবার তিনি সার্বিক বিবেচনায় এগিয়ে থাকবেন বলে মনে করেন। তার মতে, দীর্ঘদিন এই ওয়ার্ড ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করেছি। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না হয়েও তাদের জন্য রাত-দিন কাজ করছি। আশা করছি, বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাকে যথাযথ মূল্যায়ন করবেন। উত্তর সিটির ৬ নং ওয়ার্ডে গেল বছর বিএনপির প্রার্থী ছিলেন মাহফুজুর রহমান সুমন। এবারও তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে ওই ওয়ার্ডে বেল্লাল হোসেন, মাহবুব আলম মন্টু, হাবিবুর রহমান হাবিব ও ইকবাল হোসেন নামে আরও চারজন বিএনপি নেতা নিজেদের প্রার্থী হিসেবে জানান দিচ্ছেন। সবাই তাকিয়ে আছেন দলের সিদ্ধান্তের দিকে। বেল্লাল হোসেন বলেন, আমি এলাকার জনগণের পাশে আছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাব। দক্ষিণ সিটির ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত দুই প্রার্থী সাব্বির আহমেদ আরিফ ও মোজাম্মেল হক মুক্তা ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দল কাকে মনোনয়ন দেবে তা নিশ্চিত নয়। এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ পেলে ধানের শীষের যে কোনো প্রার্থীই বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। কিন্তু সরকারের কর্মকাে  মনে হয় না, দেশে আর সুষ্ঠু ভোট হবে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বর্তমান কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাছিম মিয়া বলেন, গত নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ করছি। অনেক উন্নয়ন কাজ বর্তমানে চলমান। সেগুলো বাস্তবায়ন ও সুন্দর একটি ওয়ার্ড গঠনে আবার প্রার্থী হতে চাই। তবে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ঢাকা দক্ষিণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড হচ্ছে শাহবাগ থানার ২১ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়সহ অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ। তিনি জানালেন, আবারও তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মডেল ওয়ার্ড গঠনের জন্য অনেক কাজ চলমান। সেগুলো সমাপ্ত করতে আগামীতেও এ ওয়ার্ডের প্রার্থী হতে চান। এখন দলের দিকে তাকিয়ে আছেন। জানা গেছে, ৪ নং ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর হিসেবে মনোনয়নপ্রত্যাশী আশরাফুল রহিম ও গোলাম হোসেন। এ ছাড়া ৭ নং ওয়ার্ডে দেলোয়ার হোসেন দুলু, রবিউল আউয়াল, গোলাম  রব্বানী, জাকির হোসেন ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে আতাউর রহমান  চেয়ারম্যান ও আজহারুল ইসলাম সেলিম, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে এম এস আহমাদ আলী ও শাহাবুদ্দিন মুন্না, ২ নম্বর ওয়ার্ডে সাজ্জাদ হোসেন কমিশনার ও গোলাম মোস্তফা মাস্টার ৩১ নং ওয়ার্ডে  ফরিদ উদ্দিন ফরহাদ, হাসিনা মোর্শেদ কাকলী, সাজেদুল হক খান ৩২ নং ওয়ার্ডে আতিকুল ইসলাম মতিন, বজলুর রহমান, আলমগীর হোসেন লাবু ও নাসির আহমেদ, ৪৮ নং ওয়ার্ডে আলী আকবর আলী ও শহীদুল ইসলাম, ৩৪ নং ওয়ার্ডে হাজী ইউসুফ, ওসমান গনি শাহজাহান ও মাসুম খান রাজেশ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পল্টন থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তবা জামান পপি বলেন, শুনেছি আগামী ডিসেম্বরে সিটি ভোট হবে। সে অনুযায়ী আমি নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছি। ভোটারদের ঘরে ঘরে যাচ্ছি। এলাকাকে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও মাদকমুক্ত করতে অনেক কাজ চলমান। সেগুলো বাস্তবায়ন এক মেয়াদে সম্ভব নয়। এ জন্য আমি আবারও দলের মনোনয়ন চাইব। দল যে সিদ্ধান্ত দেবে তা-ই চূড়ান্ত।

চট্টগ্রাম : সিটি করপোরেশনের ৭ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম ষোলশহরের বর্তমান কাউন্সিলর নগর যুবলীগ নেতা মো. মোবারক আলী। তিনি আবারও নির্বাচন করবেন। এই ওয়ার্ডে যুবলীগের জসিম উদ্দিনেরও নাম শোনা যাচ্ছে। এখানে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন নগর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা এসকান্দর মির্জা ও নগর বিএনপি নেতা আর ইউ চৌধুরী শাহীনও। ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও নগর যুবলীগ নেতা মো. মোবারক আলী বলেন, কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালনকালীন এলাকায় বহু উন্নয়নমূলক কাজ করেছি, এখনো অব্যাহত রয়েছে। ওয়ার্ডের প্রতিটি এলাকায় পরিষ্কার ও ময়লা-আবর্জনামুক্ত রাখতে বাড়ি বাড়ি সচেতনতামূলক ব্যাপক কর্মসূচি ও সভা-সমাবেশ চলছে প্রতিনিয়ত। এলাকা সন্ত্রাসমুক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে বিভিন্ন উঠোন বৈঠকও অব্যাহত। ১৮ নং পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ, নগর বিএনপি নেতা সাবেক কাউন্সিলর আবু তৈয়ব, ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো. মহিউদ্দিন। ৬ নং ওয়ার্ড পূর্বষোলশহর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম ও ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাসান লিটনের নাম শোনা যাচ্ছে। ১৫ নং বাগমনিরিয়াম ওয়ার্ডের টানা তিনবারের বর্তমান কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন এবারও নির্বাচন করবেন। এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপির উল্লেখযোগ্য কোনো প্রার্থী নেই। এর আগের নির্বাচনে গিয়াস উদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে থেকেই উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছি। এবারও নির্বাচনে অংশ নিয়ে আগামীতেও সবার পাশে থাকতে চাই। তবে অর্থবহ নির্বাচন আশা করছেন বলে জানান তিনি। ৩ নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের প্রার্থী নগর বিএনপি দফতর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী, ছাত্রদলের সাবেক ওয়ার্ড সভাপতি মো. ইসমাইল, বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের কপিল উদ্দিন খান। ৮ নং শুলকবহর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক জমির উদ্দিন নাহিদ, আওয়ামী লীগের বর্তমান কাউন্সিলর মোরশেদ আলম। ২ নং জালালাবাদ ওয়ার্ডের প্রার্থী হচ্ছেন ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হাজী মো. বেলাল, বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের সাহেদ ইকবাল বাবু। ৩ নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও নগর বিএনপি দফতর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, নির্বাচন করতে আমরা আগ্রহী। তবে অতীতের নির্বাচন বা ডিসেম্বরের নির্বাচনের মতো হলে জাতি কী আশা করবেন? সাধারণ মানুষ ভোট দিতে চায়। সরকার নিজেদের গি র মধ্যে রেখে কৌশলী কাজ করে আসছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিলে সবাই অংশগ্রহণ করবেন।

সর্বশেষ খবর