মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভারতের রপ্তানি বন্ধে অস্থির পিয়াজের বাজার

কেজি ১২০ টাকা, ১০ জেলায় যাচ্ছে টিম, চট্টগ্রাম বন্দরে তিন জাহাজ পিয়াজ । কারসাজি করলে ব্যবস্থা : সচিব

প্রতিদিন ডেস্ক

ভারতের রপ্তানি বন্ধে অস্থির পিয়াজের বাজার

পিয়াজের জন্য দীর্ঘলাইন : খুচরা বাজারে ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে পিয়াজের কেজি। পরিস্থিতি সামলাতে সরকার টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করছে খোলাবাজারে। কমদামের সেই পিয়াজ কিনতে বিভিন্ন স্থানে দেখা যায় দীর্ঘলাইন। ছবিটি গতকাল রাজধানীর প্রেস ক্লাব এলাকা থেকে তোলা

পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়াই রবিবার বাংলাদেশে ভারতের পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় গতকাল সকাল থেকে বেনাপোল ও হিলি বন্দর দিয়ে কোনো পিয়াজ আমদানি হয়নি। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সীমান্ত এলাকার খুচরা বাজারে যে পিয়াজ আগে ৪৭-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছিল তা একলাফে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। আর দেশের কোনো কোনো স্থানে দাম উঠেছে ১২০ টাকা কেজি। এদিকে অস্থির পিয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে গতকালই সচিবালয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করে বাণিজ্য সচিব বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্বান্ত নিয়েছেন। সেই সঙ্গে আজ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির মাধ্যমে ৩৫টি ট্রাকে পিয়াজ বিক্রি শুরু করবে। তবে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে শতাধিক পিয়াজভর্তি ট্রাক। অন্যদিকে রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর হিলি বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা পিয়াজের ট্রাকগুলো ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্র জানায়, বন্দর দিয়ে রবিবার ১৪টি ট্রাকে ২৬৮ টন পিয়াজ আমদানি হয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, পিয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের ১০ জেলায় শক্তিশালী মনিটরিং টিম পাঠাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জেলাগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, ফরিদপুর, পাবনা, রাজবাড়ী, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর ও শরীয়তপুর। আটজন যুগ্মসচিব ও দুজন উপসচিবের নেতৃত্বে প্রতিটি টিম সংশ্লিষ্ট জেলায় পিয়াজের মজুদ পরিস্থিতিসহ আনুষঙ্গিক বিষয় খতিয়ে দেখবে। পাশাপাশি বাজারে পণ্যটির সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতিও তদারকি করবে। মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের টিম বন্দরে পিয়াজ খালাসের বিষয়টি দ্রুত করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। আর কক্সবাজারের টিম মিয়ানমার থেকে টেকনাফে পিয়াজ আমদানির বিষয়টি মনিটরিং করবে। যশোর, সাতক্ষীরা ও দিনাজপুরের টিম যথাক্রমে বেনাপোল, ভোমরা ও হিলি বন্দরে আনা পিয়াজ সরবরাহের বিষয়টি মনিটরিং করবে। আর ফরিদপুর ও পাবনায় দেশি পিয়াজের মজুদ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে সংশ্লিষ্ট মনিটরিং টিম। এ ছাড়া শরীয়তপুরের টিম মাওয়া-জাজিরা ফেরিঘাট, রাজবাড়ীর টিম পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ ঘাট ও সিরাজগঞ্জের টিম উত্তরবঙ্গ থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যাতে দ্রুত পণ্যটি ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে পৌঁছানো যায় সে বিষয় তদারকি করবে। তদারকির সময় পণ্যটির অবৈধ মজুদ বা মূল্য কারসাজির প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট টিম জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সারা দেশে মনিটরিং টিম পাঠানোর বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যুগ্মসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা এসব টিমে নেতৃত্ব দেবেন। জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে। এ ছাড়া রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোয়ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চারটি নিয়মিত মনিটরিং টিম পরিদর্শন কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে জানান সচিব। এদিকে পিয়াজ নিয়ে গতকাল সকালেই জরুরি বৈঠক করেন বাণিজ্য সচিব। সভা শেষে তিনি বলেন, পিয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। রপ্তানি বন্ধের কথা জেনে অনেকে হয়তো আতঙ্কিত হয়ে পিয়াজ কিনতে যাচ্ছেন। এটি বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সচিব জানান, এ মুহূর্তে সরকারের কাছে যথেষ্ট পিয়াজ মজুদ আছে। যারা পিয়াজের দাম নিয়ে কারসাজি করবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাণিজ্য সচিব জানান, মঙ্গলবার (আজ) টিসিবির মাধ্যমে ৩৫টি ট্রাকে পিয়াজ বিক্রি শুরু হবে। মিয়ানমার থেকে দুটি জাহাজ বন্দরে এসেছে। একটির পণ্য খালাস হয়েছে। মিসর ও তুরস্ক থেকে শিগগিরই এলসি করা পিয়াজ দেশে পৌঁছাবে বলেও জানান তিনি।

তিন লাখ ৬৪ হাজার কেজি পিয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে : ভারতের পিয়াজ রপ্তানি বন্ধের পরপরই চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে তিন লাখ ৬৪ হাজার কেজি পিয়াজ। কনটেইনারে করে আমদানি করা এসব পিয়াজ খালাসের প্রক্রিয়া চলছে। এই পিয়াজ এসেছে মিসর ও চীন থেকে। বন্দর সূত্রে জানা গেছে, তিন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান  জেনি এন্টারপ্রাইজ, এন এস ইন্টারন্যাশনাল, হাফিজ করপোরেশন এই পিয়াজ এনেছে। কনটেইনারবাহী জাহাজ এমভি কালা পাগুরো, জাকার্তা ব্রিজ ও কোটা ওয়াজারে করে এসব চালান এসেছে। এই তিন জাহাজে পিয়াজবাহী কনটেইনারের সংখ্যা ১৪টি। এর আগে মিয়ানমার থেকে আরও দুটি জাহাজ পিয়াজ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে। এর মধ্যে একটি জাহাজ খালাস করা হয়েছে। আরেকটি জাহাজের খালাস প্রক্রিয়া চলছে।

বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, বেনাপোলের আমদানিকারক হামিদ এন্টারপ্রাইজের মালিক আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘ভারতের রপ্তানিকারকের কাছে আমাদের অনেক এলসি পড়ে আছে। এখন রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় বাধ্য হয়ে এলসি বাতিল করতে হচ্ছে আমাদের।’ ভারতের পেট্রাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় পেট্রাপোল বন্দরে শতাধিক পিয়াজ-বোঝাই ট্রাক আটকা আছে।’

বরিশাল : এক দিনের ব্যবধানে পিয়াজের দাম দিগুণ হয়েছে। রবিবার বরিশালের পিয়াজপট্টিতে প্রতি কেজি পিয়াজ ৫২ টাকা দরে বিক্রি হলেও গতকাল হয়েছে ৯৫ টাকায়। আর খুচরা দোকানগুলোয় বিক্রি হয়েছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।

এতে বেকায়দায় পড়েছেন ক্রেতারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর