রূপকথা আরব্য রজনীর আলাদিনের চেরাগের কথা সবাই জানি। সেখানে চেরাগ ঘষলে হো হো শব্দ তুলে দৈত্য এসে হাজির হন। মালিককে বলেন- হুকুম করুন মালিক। তখন মালিক যা চান তাই এনে দেন। কিন্তু এখানে চেরাগ ঘষে দৈত্য আনতে হয় না। ফেলে দেয়া এক্স-রে ফিল্ম ঘষলেই নগদ টাকা মেলে।
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ভৈষেরকোট গ্রামে পরিত্যক্ত এক্স-রে ফিল্মকে গার্মেন্টস পণ্য উপযোগী করতে দেখা গেছে। গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় একটি পুকুরপাড়ের একটি ভবনে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেন গ্রামের আবুল হোসেন। এছাড়া তাদের ঢাকায়ও কারখানা রয়েছে। তাকে সহযোগিতা করেন ভাইয়ের ছেলে শিক্ষানবিশ আইনজীবী মনিরুল ইসলাম। তারা প্রায় ২০ বছর ধরে এই ব্যবসা করেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা উপজেলা সংলগ্ন বাগুর বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে দেবিদ্বার উপজেলার নবীয়াবাদ হয়ে ভৈষেরকোট গ্রাম। নানা গাছের সারি, বাঁশ বাগান আর সোনালু ফুলের দোল দেয়া পথ মাড়িয়ে যেতে হয় কারাখানায়। কারখানায় ১২ জন তরুণ কাজ করেন। কেউ পরিত্যক্ত ফিল্ম পরিষ্কার করছেন, কেউ রোদে শুকাচ্ছেন।
মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন শুরু করি তখন মানুষ হাসহাসি করতো। পরিত্যক্ত ফিল্ম দিয়ে কি হবে? নানা রকম তিরষ্কার করতো। এখন আমাদের ব্যবসার বয়স প্রায় ২০ বছর। এই পণ্যের চাহিদা ভালো।
তিনি বলেন, তারা হাসপাতাল ও বিভিন্ন মাধ্যমে ফিল্মগুলো যোগাড় করেন। একজন শ্রমিক দিনে ৫০ কেজির মতো ফিল্ম পরিষ্কার করতে পারেন। একজন শ্রমিক প্রতিদিন আয় করেন ৯০০ টাকার মতো। তাদের দুইটি কারখানায় এলাকার ২২/২৪জন তরুণের কর্মসংস্থান হয়েছে। তারা কারখানার ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন। তিনি বিসিক কুমিল্লা অফিসে যোগাযোগ করেছেন। বিসিক কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
বিসিক কুমিল্লার ডিজিএম মুনতাসীর মামুন বলেন, পরিত্যক্ত এক্স-রে ফিল্ম পরিষ্কার করে তা গার্মেন্টস পণ্য হিসেবে কাজে লাগানোর বিষয়টি আমাদের ব্যতিক্রম মনে হয়েছে। আমরা তাদের রেজিস্ট্রেশন, প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করবো।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত