বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন ও অববাহিকা ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বিশদ ‘কাঠামো চুক্তি’ স্বাক্ষরের চেষ্টা চলছে। দিল্লি ও ঢাকার কূটনীতিকরা এখন চুক্তির চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার কাজ করছেন। চুক্তিটি হলে সীমান্তের উভয় দিকে নদীভিত্তিক জীবিকার লোকজনের জীবনমান উন্নয়নের সুযোগ তৈরি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে এ চুক্তি সই হবে কিনা, তা পরিষ্কার নয়। তবে দুই দেশের আলোচ্য সূচিতে বিষয়টি স্থান পেতে পারে। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ওপর একটি চুক্তি সই হবে; এতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর বিষয়টিও থাকবে। সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ জলপথ ব্যবহার প্রশ্নে খ-িত উপায় অবলম্বনের বদলে এই কাঠামো চুক্তিতে সীমান্তের দুই দিকে বহমান ৫৪ নদীর সবকটিকে একটা ব্যবস্থাপনাভুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে। অভ্যন্তরীণ জলপথের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধনের পাশাপাশি এ চুক্তিতে থাকবে বিদ্যমান প্রতিবেশ ও সামাজিক সুবিধাদির অধিকতর সমন্বিত উন্নয়ন আর সুরক্ষার ব্যবস্থা। বিশ্বজুড়ে প্রতিবেশ সমীক্ষা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ‘কাট্স ইন্টারন্যাশনাল’ তাদের সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন সীমান্ত ৪ হাজার ৯৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১ হাজার ১১৬ কিলোমিটার সীমান্ত নদীর মধ্যে পড়েছে। সীমান্তের দুই দিকে বহমান ৫৪টি নদী নানাভাবে পরিবেশ-প্রতিবেশ সেবার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করে যার অন্যতম হলো কৃষি, মাছ চাষ ও পর্যটনসংক্রান্ত জীবিকা। সীমান্তের প্রবল নদী যেমন গঙ্গা/পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র/যমুনা ও বরাক/মেঘনা সব সময়ই দ্বিপক্ষীয় সীমান্ত সহযোগিতাসংক্রান্ত আলোচনা অনুষ্ঠানের অপরিহার্য অংশ হয়ে আসছে। আসামে ব্রহ্মপুত্রের যোগী ঘোপা নামক জায়গায় এবং পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গা-পদ্মার হলদিয়ায় বহুমুখী সুযোগ-সুবিধাবিশিষ্ট টার্মিনাল স্থাপনের জন্য ভারত ও বাংলাদেশ সরকার সচেষ্ট রয়েছে। ভুটান থেকে ১ হাজার টন পাথর বহন করে প্রথমবারের মতো একটি ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজ আসামের ধুবড়ি এবং বাংলাদেশের চিলমারী হয়ে গত ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জ পৌঁছেছে।
এতে পরিবহন সময় বেঁচেছে ৮ দিন এবং খরচ বেঁচেছে ৩০ শতাংশ। ধুলিয়ান (পশ্চিমবঙ্গ) থেকে রাজশাহী (বাংলাদেশ) পর্যন্ত পদ্মা নদীতে প্রটোকল রুট চালুকরণ ত্বরান্বিত করার জন্য সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এ রুট চালু হলে তাতে ঝাড়খে র সাহেবগঞ্জ টার্মিনাল এবং উত্তর প্রদেশের বারানসি টার্মিনালের মাধ্যমে পূর্ব ও উত্তর ভারতের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের সংযোগ স্থাপিত হবে।
সাবরুমে ফেনী নদীতে ‘মৈত্রী সেতু’ নির্মাণ সম্পন্ন হলে সোনামুড়া (ত্রিপুরা) থেকে দাউদকান্দি (বাংলাদেশ) পর্যন্ত জনপথকে গোমতী নদীর প্রটোকল রুট ঘোষণা করা হতে পারে। অববাহিকা ব্যবস্থাপনার উন্নততর পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের জন্য বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনকে একটি পদ্ধতিগত প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে চলেছে। সূত্র জানায়, ভারত এ বিষয়ে এবার ইতিবাচক সাড়া দিতে পারে।