বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ক্ষোভ-বিক্ষোভ অব্যাহত

বুয়েট শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি, আলটিমেটাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্ষোভ-বিক্ষোভ অব্যাহত

আবরার হত্যার বিচার দাবিতে গতকাল বুয়েটে বিক্ষোভ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারা দেশে ক্ষোভ-বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল তৃতীয় দিনেও উত্তাল ছিল বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এ হত্যাকান্ডের বিচার দাবিতে ছিল সোচ্চার। তাদের কণ্ঠে ছিল শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের বিচারের জোরালো দাবি। মানববন্ধন, মিছিল, সমাবেশ, বিক্ষোভে উত্তাল ছিল এসব শিক্ষাঙ্গন। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটের  শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক জাফর ইকবাল খান পদত্যাগ করেছেন। বুয়েট শিক্ষক সমিতি বৈঠক করে শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। একইসঙ্গে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার প্রত্যয়ও করেছেন তারা। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে বুয়েটের ভিসির পদত্যাগ দাবি করেছেন বুয়েট শিক্ষকসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাও। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবি জানিয়ে দিনভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। হত্যার বিচার, বুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ ও ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও। এ ছাড়া ছাত্রলীগও আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করেছে।

শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি : বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সকাল ১০টা থেকে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে বুয়েট শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা তাদের দশ দফা দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, অভিযুক্তদের ১১ অক্টোবরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার, আবরারের পরিবারের সব ক্ষতিপূরণ ও মামলার খরচ বুয়েটকে বহন করা, মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্বল্প সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য বুয়েট প্রশাসনের পদক্ষেপ নেওয়া, বুয়েট প্রশাসনকে সক্রিয় থেকে সব প্রক্রিয়া নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা এবং নিয়মিত ছাত্রদের আপডেট করা, অবিলম্বে চার্জশিটের কপিসহ অফিশিয়াল নোটিস দেওয়া, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে বুয়েটের সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা, বিলম্বে ক্যাম্পাসে আসার ব্যাপারে ভিসির জবাবদিহিতা করা, আবাসিক হলগুলোতে র?্যাগের নামে ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর সব প্রকার শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন বন্ধ করা, আগে ঘটা এমন ঘটনার প্রকাশ এবং পরে ঘটা এমন ঘটনা প্রকাশের জন্য কমন প্ল্যাটফর্মের ব্যবস্থা করা এবং নিয়মিত প্রকাশিত ঘটনা রিভিউ করে দ্রুততম সময়ে বিচারের ব্যবস্থা করা, শেরেবাংলা হলের প্রভোস্টকে ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে প্রত্যাহার করা ও দাবি না মানলে বুয়েটের সব ভর্তি পরীক্ষাসহ একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা। এসব দাবিতে শিক্ষার্থীরা দিনভরই ছিল সোচ্চার।

ঢাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ : ছাত্রলীগের নৃশংসতার শিকার বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ করেছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘নিপীড়নবিরোধী অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকে’র ব্যানারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সংহতি জানান ঢাকা, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক। এ ছাড়া বিভিন্ন ছাত্র রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সমাবেশে সংহতি জানানো হয়। সমাবেশে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, সরকার ছাত্রলীগকে লাইসেন্স দিয়েছে ছাত্রদের মারার। ভিন্নমতের মানুষ কথা বললে, তাকে হয়রানি করা হয়, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ ছাড়াও এদিন ঢাবি শিক্ষার্থীরা কালো পতাকা মিছিল, সাদা দলের শিক্ষকদের মৌন অবস্থান, ছাত্রদলের মৌন মিছিল, কয়েকশ শিক্ষার্থীর  মোমবাতি হাতে নিয়ে আবরারকে স্মরণ, বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ-মানববন্ধনসহ সারা দেশে বিক্ষোভ-অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর