মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

জেলায় জেলায় ধর্মঘট নৈরাজ্য

ঘোষণা ছাড়াই বাস বন্ধ, জনদুর্ভোগ চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি বিধান সংশোধনের দাবিতে খুলনা বিভাগের অধিকাংশ জেলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০ জেলায় হঠাৎ অনির্দিষ্টকালের বাস ধর্মঘট শুরু করেছেন মালিক-শ্রমিকরা। গতকাল সকাল থেকে ধর্মঘটের কারণে এ অঞ্চলের বিভিন্ন রুটে বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ধর্মঘটে বন্ধ হয়ে গেছে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য লোড-আনলোডও। নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা জানান, পরিবহন শ্রমিক নেতারা বলছেন, দুর্ঘটনার মামলা জামিনযোগ্যসহ সড়ক আইনের কয়েকটি ধারায় সংশোধন চান চালকরা। তাদের দাবি, আইন সংশোধনের পরই এটি কার্যকর করা হোক। খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম বলেন, নতুন পরিবহন আইনে কোনো কারণে দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে চালকদের মৃত্যুদন্ড এবং আহত হলে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই এবং বাস চালিয়ে তারা জেলখানায় যেতে চান না। এ কারণে নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের প্রতিবাদে শ্রমিকরা বাস চালাচ্ছেন না। তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছেন। তিনি আরও বলেন, রবিবার সকালে ঝিনাইদহে মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশনের একটি বৈঠক ছিল। ওই বৈঠক শুরুর আগে থেকেই চালকরা কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন। এদিকে গতকাল ভোরে ঈগল পরিবহনসহ কয়েকটি পরিবহনের বাস মহানগরীর রয়্যাল কাউন্টার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তবে সকাল ৯টার পর থেকে সব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় গতকাল বেনাপোল বন্দর থেকে কোনো মালামাল লোড-আনলোড হয়নি। ফলে শত শত খালি ট্রাক পণ্য লোড করার জন্য বন্দরের সামনে অবস্থান করছে।

তবে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যসহ পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত ছিল স্বাভাবিক। বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি না হওয়ায় আমদানি পণ্য বন্দরে আনলোড করা সম্ভব হয়নি। নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের প্রতিবাদে যশোর থেকে এই ধর্মঘট শুরু হয় রবিবার। গতকাল তা ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোর্তজা হোসেন জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় পরিবহন শ্রমিকরা ‘স্বেচ্ছায়’ বাস চালাচ্ছেন না। জেলাগুলো হলো- যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা।

শ্রমিকরা কাউকে ইচ্ছা করে হত্যা করে না জানিয়ে মোর্তজা হোসেন বলেন, অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনার জন্য নতুন সড়ক আইনে তাদের ‘ঘাতক’ বলা হচ্ছে। তাদের জন্য এমন আইন করা হয়েছে যা সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ২০১৮ সালে পাস হওয়া এ আইনের প্রজ্ঞাপন জারি হয় গত ১ নভেম্বর। তবে আইনটি প্রণয়নের পর থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহের স্থানীয় সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে বাস শ্রমিকরা। রবিবার সকাল থেকে ঝিনাইদহ-যশোর, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া, মাগুরা ও চুয়াডাঙ্গার অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে তারা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বাস না পেয়ে অনেকে ইজিবাইক ও মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ ৩ চাকার যানবাহনে চলাচল করছেন। ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না চাকরিজীবীরা। স্থানীয় সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও ঢাকাসহ দূরপাল্লার বাস ও ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে।

নড়াইল প্রতিনিধি জানান, সড়ক আইন সংশোধনের দাবিতে নড়াইলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল সকাল থেকেই নড়াইল-যশোর, কালনা-নড়াইল-খুলনা, নড়াইল-লোহাগড়া-ঢাকাসহ অভ্যন্তরীণ পাঁচ রুটে কোনো ঘোষণা ছাড়া বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছাদেক আহম্মেদ খান বলেন, বাস বন্ধ রাখার ব্যাপারে সংগঠন থেকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের সঙ্গে আলাপ না করে বাস চালক-শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় নড়াইল থেকে ছেড়ে যাওয়া খুলনা, যশোর, ঢাকাসহ পাঁচ রুটে বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন। 

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের প্রতিবাদে সাতক্ষীরার সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে চালকরা। গতকাল সকাল থেকে শুরু হওয়া এই ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। পরিবহন শ্রমিক নেতাদের দাবি, আইন সংশোধনের পর এটি বাস্তবায়ন করা হোক। এটা না করা পর্যন্ত তাদের এ ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।

এদিকে হঠাৎ করেই বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় হাজার হাজার যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছেন। তারা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে নসিমন, করিমন ও ইজিবাইক যোগে গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।

শেরপুর প্রতিনিধি জানান : শেরপুর থেকে সব ধরনের দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সকাল থেকে শহরের বাগরাকসা ও নবীনগর এলাকার দুটি বাস টার্মিনাল থেকেই ঢাকা-শেরপুরসহ সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল হঠাৎ বন্ধ করায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রী সাধারণ। জেলা বাস-কোচ মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সুজিত ঘোষ জানান, মূলত ড্রাইভাররাই গাড়ি নিয়ে যেতে চাচ্ছেন না। ড্রাইভার ও অন্য শ্রমিকরা গাড়ির মালিকদের কাছে চাবি জমা দিয়ে দিয়েছেন। ফলে গাড়ি চলছে না।

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর ধামইরহাটে বাস শ্রমিকরা সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পরিবহন ধর্মঘটের কারণে যাত্রীরা বেকায়দায় পড়েছেন। বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে পিইসি পরীক্ষার্থীদের। মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত ছাড়াই শ্রমিকরা নিজ উদ্যোগে এ কর্মবিরতি পালন করছেন। জানা গেছে, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কার্যকর করতে চাইলেও তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গতকাল সকাল থেকে নওগাঁ-নজিরপুর-ধামইরহাট-জয়পুরহাট রুটে সব প্রকার বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে শ্রমিকরা। হঠাৎ বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি পড়তে হয়েছে।

বিআরটিসি বাস বন্ধের দাবি : নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট জানান, বিআরটিসি বাস বন্ধের দাবিতে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়কে অনির্দিষ্টকালের বাস ধর্মঘট চলছে। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-গোয়াইনঘাট-হাদারপাড় বাস মিনিবাস সমিতির ডাকে গতকাল সকাল থেকে ধর্মঘট শুরু হয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে বলে জানিয়েছেন সমিতির সভাপতি রিমাদ আহমদ রুবেল। ধর্মঘটের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার যাত্রীরা।

বিশেষ করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানুষের যাতায়াতের জন্য বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় তারা পড়েছেন মহাবিপাকে।

সর্বশেষ খবর