সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা ভাইরাস ভয়াবহ রূপে

স্থগিত হতে পারে বাংলাদেশ-চীন আসা যাওয়া । এখনো রোগী মেলেনি : স্বাস্থ্য অধিদফতর

প্রতিদিন ডেস্ক

করোনা ভাইরাস ভয়াবহ রূপে

ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস আরও ভয়াবহ রূপে ছড়াচ্ছে। চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন কয়েকটি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে। চীনে মৃতের সংখ্যাও ১২ ঘণ্টার মধ্যে বেড়েছে ১৫ জনে। আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই হাজারে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে ব্যাপক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বিমানবন্দরে চীন থেকে আসা ১ হাজার ৭৮৩ জন যাত্রীকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতর কাউকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি শামাল দিতে বাংলাদেশ-চীন গমনাগমন স্থগিত করার কথা ভাবা হচ্ছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে চীন এবং চীন থেকে বাংলাদেশে সব ধরনের ভ্রমণ সাময়িক স্থগিত করার চিন্তা করছে সরকার। আগামীকাল আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। গতকাল সকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জরুরি সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, চীন-বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেক গভীর। দেশের বহু মানুষ বাণিজ্যিক কারণে চীনে যাতায়াত করেন। সুতরাং এ ভয়াবহ করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে যে কোনো উপায়ে চলে এলে সেটি বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। তিনি জানান, আগামী ২৮ জানুয়ারি আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে চীনে ও চীন থেকে বাংলাদেশে সব ধরনের ভ্রমণ সাময়িকভাবে স্থগিত করা যায় কি-না, সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর গতকাল জানিয়েছে, দেশের বিমানবন্দরগুলোতে চীন থেকে আসা ১ হাজার ৭৮৩ জন যাত্রীকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাউকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়নি। গত শুক্রবার চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের পাশাপাশি বেনাপোল স্থলবন্দরে স্ক্যানার বসিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর আগে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চটগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর ও সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে স্ক্যানার বসানো হয়।

চীনে মৃত ৫৬ : গতকাল সকালে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চীনে করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় দুই হাজারেরও বেশি মানুষ। যদিও বেসরকারিভাবে বলা হয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষাধিক। চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে উৎপত্তি হওয়া এ ভাইরাস এরই মধ্যে রাজধানী বেইজিংসহ ২৯টি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের সঙ্গে বাকি বিশ্বের সরাসরি বিমান যোগাযোগ থাকার কারণে ভাইরাসটি চীনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, নেপাল, ফ্রান্স ও সৌদি আরবসহ অন্তত ১৩টি দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে।

নিয়ন্ত্রণ হারানোর শঙ্কা : আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশে ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বিশ্বব্যাপী। যুক্তরাজ্যের এমআরসি সেন্টার ফর গ্লোবাল ইনফেকশাস ডিজিস অ্যানালাইসিসের বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই ভাইরাসের সংক্রমণ চীনের পক্ষে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে না। দ্রুতই চীনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। পাশাপাশি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্বকে। তিনি বলেছেন, তার দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস আগের চেয়ে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি চীনা নতুন বছর উপলক্ষে মন্ত্রিসভার এক বৈঠক শেষে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, তার দেশ ‘গুরুতর পরিস্থিতি’ মোকাবিলা করছে।

বিভিন্ন দেশে রোগী : গত শনিবার কানাডার রাজধানী টরেন্টোর এক হাসপাতাল থেকে দেশটিতে করোনা ভাইরাসে একজন আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়। কর্মকর্তারা জানান, আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স পঞ্চাশোর্ধ্ব। সম্প্রতি তিনি উহান ভ্রমণ করে ২৩ জানুয়ারি টরেন্টো পৌঁছান। এ ছাড়া প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে ফ্রান্সে তিনজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তি রয়েছেন, যিনি সম্প্রতি উহান ভ্রমণ করেছেন। অন্য দুই ব্যক্তিও সম্প্রতি চীন ভ্রমণ করেছেন। জাপানে নতুন করোনা ভাইরাসে এ পর্যন্ত তিনজন আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। তিনজনই সম্প্রতি উহান ভ্রমণ করেন। অস্ট্রেলিয়ায় শনিবার প্রথমবারের মতো একজন ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। আক্রান্ত ব্যক্তি সম্প্রতি উহান ভ্রমণ করেন। পরে গতকাল সিডনিতে আরও তিনজনের মধ্যে ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার লক্ষণ দেখা গেছে বলে নিশ্চিত করে কর্তৃপক্ষ। মালয়েশিয়ায় তিনজন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনজনই সম্প্রতি উহান ভ্রমণ করেন। নেপালে ৩২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, যিনি উহান থেকে দেশটিতে গিয়েছিলেন।

সিঙ্গাপুরে অন্তত তিনজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ৬৬ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ ও তার ছেলে (৩৭) এবং ৫২ বছর বয়সী এক নারী। তারা সবাই সম্প্রতি উহান ভ্রমণ করেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় দুজন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। দুজনই উহান ভ্রমণ করে দেশটিতে গিয়েছিলেন। তাইওয়ানে এ পর্যন্ত তিনজন নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। থাইল্যান্ডে পাঁচজন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন চীনা নাগরিক যারা উহান থেকে এসেছেন এবং অপর একজন সম্প্রতি উহান ভ্রমণ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত দুজন আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। ভিয়েতনামে এক ব্যক্তি ও তার ছেলে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ওই ব্যক্তি সম্প্রতি উহান ভ্রমণ করেছেন। তার সংস্পর্শে এসেই তার ছেলেও ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। ম্যাকাওয়ে মরণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে অন্তত দুজন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর