রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সরকারি চার ব্যাংকের শেয়ার ছাড়া হচ্ছে বেসরকারি খাতে

সোনালী রূপালী অগ্রণী জনতার সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বৈঠক আজ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

এবার রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালীর সরকারি শেয়ার বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। মৃতপ্রায় পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে এত দিন সময় সময় নির্দেশনা দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কিনতে বাধ্য করা হয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলোকে। এখন সরকারের হাতে থাকা শেয়ার ছেড়ে দেওয়া হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য।

এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও এমডিদের সঙ্গে আজ অর্থ মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেখানে ব্যাংকগুলোর মূলধন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর শেয়ার অফলোডের বিষয়ে তাদের মতামত জানতে চাওয়া হবে। সূত্রগুলো জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বর্তমানে শুধু রূপালী ব্যাংকের শেয়ার রয়েছে বেসরকারি খাতে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ ব্যাংকটির ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুর মোট ৩৭ কোটি ৬৫ লাখ ১৬ হাজার ৯৩৯ শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ, আর সরকারের হাতে আছে ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার। এ ব্যাংকের আরও শেয়ার ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। আর শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন অন্য তিন বাণিজ্যিক ব্যাংকেরও শেয়ার পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে চলমান সংকটজনক পরিস্থিতিতে সরকারি ব্যাংকগুলোর শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া কতটা যৌক্তিক হবে তা ভেবে দেখার বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন অগ্রণী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান বিআইডিএসের রিসার্চ ডিরেক্টর ড. জায়েদ বখত। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমাদের এ বিষয়ে আগের অভিজ্ঞতা তো রয়েছে। রূপালী ব্যাংকের কিছু শেয়ার ছাড়া হয়েছে। এখন পুঁজিবাজারের যে ক্রাইসিস দেখা যাচ্ছে, এ অবস্থায় চার ব্যাংকের শেয়ার ছাড়া হলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তা কিনবেন কিনা ভেবে দেখতে হবে।’ অবশ্য অর্থ মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরকারি মালিকানাধীন চার ব্যাংকের শেয়ার একযোগে পুঁজিবাজারে ছাড়া হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য ভালো মৌল ভিত্তির কোম্পানির শেয়ার অফলোডের কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো শেয়ার ছাড়লে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বাজারে ফিরে আসবেন বলে আমরা মনে করি। কারণ ব্যাংকগুলোর মালিক রাষ্ট্র। যে কোনো ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতিতেও এসব ব্যাংকের গ্যারান্টার রাষ্ট্র নিজেই। ফলে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়া হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা কিছুটা ফিরে আসতে পারে।’ দীর্ঘ সময় ধরে ধুঁকতে থাকা পুঁজিবাজারে সূচক বাড়াতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাবে সংকটে থাকা পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। গত মাসে দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নীতিনির্ধারণী সভায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি ছিল- বাজারে মানসম্পন্ন আইপিও বাড়াতে বহুজাতিক ও সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তকরণের উদ্যোগ নেওয়া। আর এ উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করতেই এখন সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ব্যাংকের শেয়ার বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। যদিও এর আগে আরও একাধিকবার এসব ব্যাংকের শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকায় ব্যাংকগুলোর শেয়ার বেসরকারি খাতে ছাড়ার বিষয়ে এবার সিদ্ধান্ত ভিন্ন হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর