বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সিঙ্গাপুরে আরও এক বাংলাদেশি আক্রান্ত করোনাভাইরাসে

চীনে ফিরে গেলেন ১৭ নাবিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম

সিঙ্গাপুরে আরও এক বাংলাদেশি কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকা আরেক বাংলাদেশি শ্রমিকের শারীরিক পরিস্থিতির এখনো উন্নতি হয়নি। করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতার অংশ হিসেবে ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীদের হেলথ স্ক্রিনিংয়ের (স্বাস্থ্য পরীক্ষা) ব্যবস্থা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আকাশপথ, সমুদ্রপথ, স্থলপথের পাশাপাশি রেলপথেও নেওয়া হয়েছে সতর্কতা। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) চীনফেরত আরেক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। চীন থেকে আসা জাহাজের ১৭ নাবিককে আবার চীনে পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশে আসার পর গত পাঁচ দিন তাদের জাহাজেই কোয়ারেন্টাইন (পর্যবেক্ষণ) করে রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে জাহাজ থেকে নামিয়ে মাইক্রোবাসে করে তাদের বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

সিঙ্গাপুরে এ নিয়ে দুই বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। তারা দুজন একই জায়গায় কাজ করতে যেতেন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ৪৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম বাংলাদেশির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি বলে জানা গেছে। ওই বাংলাদেশিকে ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজ বা এনসিআইডির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম বাংলাদেশির মতো দ্বিতীয়জনেরও চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নেই। ৬ ফেব্রুয়ারি করোনাভাইরাসের উপসর্গ পাওয়ার পর তিনি পরদিন একটি সাধারণ ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে যান। ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি এনসিআইডিতে যান স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে। সেখানে তার করোনাভাইরাসে সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুরের বিশেষায়িত হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে (পর্যবেক্ষণ) আছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দ্বিতীয় বাংলাদেশি সেখানকার বীরাস্বামী এলাকায় থাকেন এবং সেলেটার অ্যারোস্পেস হাইটসে কাজ করতেন। ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথমজনও কাজ করতেন সেলেটার অ্যারোস্পেস হাইটসে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগের কারণে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কাকিবুকিত এলাকার ১৯ জনকে কোয়ারেন্টাইন করে। তাদের মধ্যে ১০ জন বাংলাদেশের নাগরিক।

গতকাল রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দরের পর এবার রেলস্টেশনেও বিদেশফেরত যাত্রীদের হেলথ স্ক্রিনিং হচ্ছে। মঙ্গলবার থেকে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে মৈত্রী এক্সপ্রেসে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং শুরু হয়েছে। মৈত্রী এক্সপ্রেস বেনাপোল হয়ে এলেও সেখানে কোনো যাত্রী নামেন না। তারা ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে নামেন।’ ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে সপ্তাহে পাঁচ দিন চলাচল করে মৈত্রী এক্সপ্রেস। আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, ‘কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকা ওই ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস ছিল না। আমরা বলেছিলাম তার মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণও নেই। এর পরও আমরা অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে তাকে আইসোলেশনে রেখেছিলাম। তার নমুনা পরীক্ষা করেছিলাম।’ এ পর্যন্ত আইইডিসিআরে ৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে কারও শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি বলে জানান অধ্যাপক ফ্লোরা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরে যে দুই বাংলাদেশি করোনাভাইরাস নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, ‘তাদের মধ্যে একজনের সংস্পর্শে থাকা ১৯ জনকে কোয়ারেন্টাইন (পর্যবেক্ষণ) করা হয়েছে। ওই ১৯ জনের মধ্যে ১০ জন বাংলাদেশি। সিঙ্গাপুরে যেহেতু দুজন বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন, সে কারণে সেখানে আমাদেরও বিশেষ নজর রয়েছে। তাদের চিকিৎসার ব্যয় সিঙ্গাপুর সরকার বহন করবে।’

চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নতুন এ করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে; আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ৪৫ হাজার মানুষ। এত দিন এ ভাইরাসটিকে বলা হয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। এ ভাইরাস যে সংক্রামক রোগের কারণ ঘটাচ্ছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার আনুষ্ঠানিক নাম দিয়েছে ‘কভিড-১৯’।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেভ্রিয়েসেস মঙ্গলবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নতুন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পেতে আরও অন্তত ১৮ মাস সময় লাগতে পারে। সে প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, ‘আমাদের হাতে ভ্যাকসিন আসতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। তার মানে প্রতিরোধের যে কার্যক্রমগুলোর কথা আমরা বলে আসছিলাম- সচেতনতা, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা, কাশি, থুথু ফেলার ভদ্রতা এ রোগ প্রতিরোধের অন্যতম উপায়।’

দেশেই ফিরে যাচ্ছেন চীনা ১৭ নাবিক : করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পাঁচ দিন জাহাজে কোয়ারেন্টাইন থাকার পর দেশে ফিরে যাচ্ছেন চীনা ১৭ নাবিক। গতকাল মাইক্রোবাসে করে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। ঢাকা থেকে রাতের ফ্লাইটে থাইল্যান্ড হয়ে চীন যাওয়ার কথা রয়েছে তাদের। এর আগে করোনাভাইরাস সচেতনতায় চীনা নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দেন চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায়। তিনি বলেন, চীনা নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় করোনাভাইরাস ধরা পড়েনি। তাই তাদের জাহাজ ছাড়ার বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। জানা যায়, শনিবার চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের কদমরসুল এলাকায় জাহাজ ভাঙার পুরনো কারখানায় আমদানি করা একটি জাহাজে অবস্থান করছিলেন তারা। শনিবার চীনের একটি সমুদ্রবন্দর থেকে জাপানের পতাকাবাহী ৯ হাজার টন ওজনের ইউনি হারভেস্ট কার্গো নামক এই জাহাজ আমদানি করা হয়। এতে চীনের ১৭ জন নাবিক ছাড়াও অন্যান্য দেশের আরও নাবিক ছিলেন।

চীন ফেরত আরেক শিক্ষার্থী রমেক হাসপাতালে ভর্তি : আমাদের রংপুর প্রতিনিধি জানান, চীনফেরত আরেক শিক্ষার্থীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল বিকালে তাকে রমেক হাসপাতালের আইসোলেশন বিভাগে ভর্তি করা হয়।

আইসোলেশন বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক হুমায়ুন কবির জানান, ওই শিক্ষার্থী চীনের ইয়াংহু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। তিন দিন আগে তিনি চীন থেকে দেশে ফিরে বাড়ি আসেন। মঙ্গলবার থেকে তিনি জ্বর, সর্দি ও বুকে ব্যথা অনুভব করেন। গতকাল থেকে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রমেক হাসপাতালে করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাকে পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর