শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

কী হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটিতে

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নানামুখী আলোচনা, বিএনপি রয়েছে পর্যবেক্ষণে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

কী হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটিতে

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে নতুন করে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে। একদিকে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের তুমুল জনপ্রিয়তা, অন্যদিকে দলের একটি অংশের প্রার্থী পরিবর্তনের প্রচেষ্টা। সব মিলিয়ে নাটকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে। কিন্তু তৃণমূলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা সার্বিক পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে দৃষ্টিতে রাখছেন। অন্যদিকে প্রার্থী মনোনয়নে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। তাদের মনোনয়নে ডা. শাহাদাতই মোটামুটি চূড়ান্ত।

জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন ঘিরে নাটকীয় সংকট সৃষ্টি হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। মনোনয়ন নিয়ে নাটকের দৃশ্যপট পরিবর্তন হচ্ছে প্রতিটি ক্ষণে। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে নৌকার মাঝি হিসেবে উঠে আসতে পারেন আলোচনার বাইরে থাকা কেউ। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বিএনপির সাবেক মেয়র বেগম জিয়ার উপদেষ্টা এম মনজুর আলম মনজু হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে লবিং শুরু করেছেন। মনজুর মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে আ জ ম নাছির উদ্দিন ও তার সমর্থকরা নীরবে সব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমেদ চৌধুরীর ছেলে হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তুফান, খোরশেদ আলম সুজন, আবদুচ ছালাম, মেজর এমদাদুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগের ১৯ জন। এর বাইরে মনোনয়ন চান সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। এ কারণে এত দিন যারা আ জ ম নাছিরের বিরোধিতা করে এসেছেন তাদের মধ্যেই আলোচনা চলছে মনজুর আলমকে ঘিরে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ এ সংকট ঘিরে নৌকার কান্ডারি হিসেবে অন্য কেউ আসছেন কিনা তাও আলোচনা চলছে ভিতর-বাইরে। চট্টগ্রামের সাবেক জনপ্রিয় মেয়র প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পর আ জ ম নাছিরকে ঘিরে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বলয় তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে একদিকে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন আ জ ম নাছির, অন্যদিকে রয়েছেন প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী নেতা-কর্মীরা। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর যার একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করছেন তার ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এ কারণে মহিউদ্দিন অনুসারীদের একটি অংশ চেয়েছিল নওফেলকে সামনে এনে মেয়র নির্বাচন করাতে। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় সফল না হওয়ায় এখন প্রায় প্রত্যেক গ্রুপ থেকে সবাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন। তবে আ জ ম নাছির ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। তার ঘনিষ্ঠজনদের দাবি, মনোনয়ন যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যাবেন আ জ ম নাছির। তবে তার বিপক্ষ প্রার্থীগুলো শক্তিশালীভাবে মাঠে তৎপর। তাদের কেউ কেউ নৌকার মাঝি অন্য কাউকে করাতে চান।

অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে তুমুল আলোচনায় রয়েছেন মহানগর বিএনপি সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। এর বাইরে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন নগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর, কেন্দ্রীয় নেতা মীর হেলালসহ কয়েকজন।

জানা গেছে, আলোচিত-সমালোচিত এম মনজুর আলম মনজু ১৯৯৪ সাল থেকে টানা ১৬ বছর আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এক-এগারোসহ বিভিন্ন সময় ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র হিসেবে সমর্থন চান। না পেয়ে বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে প্রায় লাখ ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হন তিনি। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরপর বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন এবং বেগম জিয়ার উপদেষ্টা হন। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে ফের মেয়র নির্বাচন করেন। তবে কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেন। নির্বাচন বর্জন নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েন মনজু। এরপর রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। কিন্তু ২০১৬ সালে ফের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৪ ও চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে মনোনয়নপত্রও নেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়ন পাননি। এবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত সাবেক এই মেয়র। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে তৃণমূলে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

যদিও আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগদান করাকে ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এম মনজুর আলম। তিনি বলেন, ‘গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে আমি আওয়ামী লীগে সক্রিয় রয়েছি। দলের জন্য আমার ও আমাদের পরিবারের অনেক ত্যাগ রয়েছে। তাই বিশ্বাস করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ‘যদি চট্টগ্রাম মহানগর থেকে এ বিষয়ে ভূমিকা রাখা যেত অবশ্যই মনজুরের মনোনয়ন বিষয়ে বিরোধিতা করতাম। আশা করছি দল অতীতের সব কর্মকান্ড মূল্যায়ন করে মেয়র পদের জন্য প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নের ক্ষেত্রে ত্যাগকে মূল্যায়ন করা হবে এটা প্রত্যাশা করি দলের হাইকমান্ডের কাছে।’

ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো দলে কি নেতার এমন আকাল পড়েছে? একজন পল্টিবাজকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে! পদের লোভে দল ত্যাগ করা ব্যক্তিকে যদি ফের মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের জন্য?’

সর্বশেষ খবর