শনিবার, ৭ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

মক্কা-মদিনায় বন্ধের পথে বাংলা কমিউনিটি স্কুল

শফিকুল ইসলাম সোহাগ, সৌদি আরব থেকে ফিরে

সৌদি আরবের মক্কা-মদিনায় বাঙালি কমিউনিটি স্কুল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আর্থিক সংকটে ইতিমধ্যে মক্কা ও মদিনার দুটি স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ করে পুনরায় ভাড়া বাসায় চালু রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সৌদি আরবে ব্যয় বৃদ্ধির ফলে প্রবাসীদের দেশে ফিরে আসার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ জন্য শিক্ষার্থী কমে আসায় স্কুলগুলোর আয়হ্রাস পেয়ে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহযোগিতা না পেলে দুটি স্কুল বন্ধ করে দিতে হবে।

সৌদি আরবে সর্বমোট ৯টি বাংলাদেশি কমিউনিটি স্কুলের মধ্যে রয়েছে রিয়াদ বাংলা মিডিয়াম ও ইংলিশ ভার্সন স্কুল, জেদ্দা বাংলা ও ইংলিশ ভার্সন স্কুল, দাম্মাম ইংলিশ ভার্সন স্কুল, আল কাছিম বুরাইদা বাংলা স্কুল, তাবুক বাংলা স্কুল, মক্কা বাংলা স্কুল ও মদিনা বাংলা স্কুল। সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলেন, সৌদি আরবে ৯টি স্কুলের মধ্যে বর্তমানে মক্কার বাংলা স্কুলটি সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। পাঠদানের অনুমতি থাকলেও স্কুলটিকে এখনো সরকারি আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া যায়নি। মক্কা ও মদিনার বাংলা স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম যে কোনো মূল্যে অব্যাহত রাখার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী দূতাবাসের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। সৌদি আরবে বাংলা স্কুলগুলোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রবাসী কল্যাণ তহবিল থেকে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। মক্কায় বাংলা কমিউনিটি স্কুলের প্রধান পরিচালক ও পৃষ্ঠপোষক আবদুল জব্বার বলেন, মক্কার বাংলা কমিউনিটি স্কুলটির ছাত্রসংখ্যা ২০১৮ সালেও এক হাজার ১০০ জন ছিল। ভাড়া করা বাসায় কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু সেখানে নানা ধরনের করারোপ হওয়ায় অনেক প্রবাসী পরিবার সৌদি আরব ত্যাগ করায় ছাত্র সংখ্যা কমে আসে। যারা পৃষ্ঠপোষকতা দিতেন তারাও সহযোগিতা দিতে অপারগ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় আর্থিক সংকটের কারণে স্কুলটির কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়ে আবার নতুন করে ভাড়া বাসায় চালু করতে হয়। অনেক শিক্ষককে বিদায় করে দিতে হয়। আর ছাত্রসংখ্যাও প্রায় দুই তৃতীয়াংশ কমে গেছে। স্কুলটির কার্যক্রম ঘুরে দেখা যায়, দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় তিনটি ভাড়া বাসায় পর্যায়ক্রমে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের এ পরিবেশে পড়ালেখা করতে কষ্ট হয়। গত বছরও অষ্টম ও ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় স্কুলটির শিক্ষার্থীরা জেদ্দায় গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষার ফলাফলও ভালো। আবদুল জব্বার জানান, স্কুলের শিক্ষকদের বেতন এবং বাসা ভাড়া পরিশোধের টাকাও শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি থেকে আসছে না। সরকারের আর্থিক সহায়তা না পেলে স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি জানান, অন্য স্কুলের সঙ্গে যৌথভাবে স্কুল পরিচালনার ব্যাপারে সৌদি সরকারের অনুমোদন পাওয়া গেছে। এখন বাংলাদেশ সরকার আর্থিক সহযোগিতা নিশ্চিত করলে মক্কার স্কুলটির কার্যক্রম আগের মতোই পরিচালনা করা সম্ভব হবে। মদিনায় বাংলা কমিউনিটি স্কুলটির নাম মদিনা বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। স্কুলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুসা আবদুল জলিল জানান, স্কুলটিতে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল। বর্তমানে ১০০-তে ঠেকেছে। মদিনার শোরান রোডে আররা ওধাবিতে একটি আরবি স্কুলেই বাংলা স্কুলটির পরিচালিত হচ্ছে বিকালের শিফটে। এ জন্য বছরে দেড় লাখ সৌদি রিয়াল পরিশোধ করতে হচ্ছে। গত বছর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভাড়ার অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু এ বছর স্কুল পরিচালনাকারীদের পক্ষে অর্থ পরিশোধ করা দুঃসাধ্য বলে তিনি জানান। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সৌদি আরবের স্থানীয় স্কুলেই শ্রেণিকক্ষে বাংলাদেশি স্কুলটির পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্কুলটির ছাদে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলাসহ বিনোদনের সব ব্যবস্থা রয়েছে। স্কুলটিতে প্লে থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী রয়েছে। ছাত্র ও ছাত্রীদের আলাদাভাবে পাঠদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সংকটের কারণে একই সঙ্গে একাধিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বসিয়ে পাঠদান করতেও দেখা গেছে। মুসা আবদুল জলিল জানান, বাংলা স্কুলটির পরীক্ষা কেন্দ্রেরও অনুমোদন রয়েছে। ২০১৯ সালে অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৩ জন। ২০০৯ সাল থেকে স্কুলটি পরিচালিত হয়ে আসছে। রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ জানান, মক্কা-মদিনার বাইরে বাংলাদেশি স্কুলগুলোর অবস্থা তুলনামূলক ভালো। প্রায় সবগুলো স্কুলকেই প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বরাদ্দকৃত টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছে। মক্কা-মদিনার স্কুল দুটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য পরিচালনাকারীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর