বৃহস্পতিবার, ১৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

মৃত্যুর মিছিল আট হাজার ছাড়িয়েছে

আক্রান্ত দুই লাখ, ইতালির অবস্থা ভয়াবহ

প্রতিদিন ডেস্ক

করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিল চলছে বিশ্বজুড়ে। অন্তত ১৬৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাস। এখন পর্যন্ত এতে মারা গেছেন ৮ হাজার ২৭২ জন, আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ২ লাখ ৬ হাজার ৯০০ জন। বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে ইউরোপের দেশ ইতালিতে। সূত্র : ওয়ার্ল্ডওমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ইতালিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৭৫ জন, নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ২০৭ জন। সেখানে এ পর্যন্ত মারা গেছেন মোট ২ হাজার ৯৭৮ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ হাজার ৫০৬ জন। দেশটিতে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রবাসীরা সুযোগ পেলেই সেখান থেকে পালাচ্ছেন। খবরে বলা হয়েছে, অস্বাভাবিক এ মৃত্যুর ফলে মর্গে লাশ রাখা নিয়ে বিপাকে পড়েছে ইতালি। একের পর এক বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা কিন্তু সে অনুযায়ী জায়গার সংকুলান হচ্ছে না মর্গে। স্থানীয় একটি চার্চের ধর্মযাজক বলেন, করোনার কারণে প্রতিদিন যেসব মানুষ মারা যাচ্ছে তাদের নিরাপদে রাখার জায়গা নেই। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দাবি, রোগীর তুলনায় হাসপাতালের সংখ্যা সীমিত। হাসপাতালের বেডে রোগীদের রাখার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। চীনের পর ইতালিই এখন করোনাভাইরাসের নতুন কেন্দ্রস্থল হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। দেশটিতে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সিনেমা হল, থিয়েটার স্টুডিও, খেলাধুলা, যে কোনো ইভেন্ট সবকিছুই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ সব বার, রেস্তোরাঁ, সেলুন, বিউটি পারলার, দোকানপাট। শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সুপার মার্কেট, খাবারের দোকান, ওষুধের দোকান খোলা আছে। নাগরিকরা কার্যত ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ। শহরের রাস্তাঘাট সব ফাঁকা হয়ে গেছে। কোয়ারেন্টাইন থেকে কেউ বের হলে শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে।

ইতালির পর খারাপ অবস্থায় রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। দেশটিতে গতকাল এক দিনে মারা গেছেন ১৩৫ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৭৮ জন। সেখানে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৮৮-তে, আর আক্রান্ত ১৬ হাজার ১৬৯ জন।

ইতালির পর ইউরোপের মধ্যে স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্সের অবস্থাও ভয়াবহ। স্পেনে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৯১ জন, নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৮৪ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮২৬-এ, মৃত্যু ৫৩৩ জনের। জার্মানিতে নতুন নয়জনসহ মোট মৃত্যু ২৬ জনের। এক দিনেই দেশটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ২ হাজার ৯৫-এ। এ নিয়ে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯ হাজার ৩৬৭-এ। ফ্রান্সে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ২৭ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজারের বেশি। দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা ১৭৫, আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৭৩০ জন। যুক্তরাষ্ট্রেও দ্রুত বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মারা গেছেন আরও ১৭ জন। এদিন দেশটিতে নতুন করে আরও ৬ হাজার ৪০০ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। আর মারা গেছেন অন্তত ১১০ জন। আমেরিকার ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবখানেই এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। রাজধানী ওয়াশিংটনে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন। সেখানে এ পর্যন্ত ৫০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এরপর বেশি মানুষ মারা গেছে নিউইয়র্কে। সেখানে মারা গেছেন ১২ জন। এ ছাড়া করোনায় গতকাল পাকিস্তানে মারা গেছেন একজন। তিনি লাহোরের বাসিন্দা। এইসঙ্গে দেশটিতে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ছুঁয়েছে ১৯৩-এ। শুধু সিন্ধু প্রদেশেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৫ জন। এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খাইবার পাখতুনখাওয়ায় ১৫, বালুচিস্তানে ১০, গিলগিট-বালটিস্তানে ৫, ইসলামাবাদে ২ ও পাঞ্জাবে ৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ভারতেও সেনাবাহিনীর এক সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ৩৪ বছর বয়সী ওই সেনা লাদাখের লেহ এলাকায় কর্মরত ছিলেন। তাকে বর্তমানে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই সেনা সদস্যের বাবা ইরান থেকে দেশে ফেরেন। এ সময় তিনিও ছুটি নিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত ভারতে ১৪৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন তিনজন। এদিকে উল্টো অবস্থা বিরাজ করছে চীনে। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কেউ মারা যাননি, আক্রান্তের সংখ্যাও খুবই সামান্য। আস্তে আস্তে দেশটির সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছে। খুলে দেওয়া হচ্ছে স্কুল-কলেজ-প্রতিষ্ঠান। দক্ষিণ কোরিয়াও করোনা সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৪ জন, মারা গেছেন ছয়জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩২০-এ, মৃত্যু ৮১ জনের।

সর্বশেষ খবর