রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

জনপ্রতিনিধি সরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা পাচ্ছেন না ডিসিরা

সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা না মানারও অভিযোগ

নিজামুল হক বিপুল

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামজিক দূরত্ব বজায় রাখার কাজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাচ্ছেন না জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে তাদের রীতিমতো নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে। অনেক জেলার ডিসিরা অভিযোগ করেছেন, অনেক জায়গায় জনপ্রতিনিধিরা সামাজিক দূরত্বের নিয়ম ভাঙছেন। আবার অনেক জায়গায় সরকারি কর্মকর্তারাই নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করছেন। এমন অভিযোগ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানিয়েছেন একাধিক জেলা প্রশাসক। জবাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট ডিসিদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা নিতে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। করোনাভাইরাস ইস্যুতে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মাঠ প্রশাসনের কাজ নিয়মিত তদারক করছে। সাধারণ ছুটি ঘোষণা হলেও সপ্তাহের প্রতিদিনই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি করে টিম নিয়মিত অফিস করছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিনই ডিসিদের কাছ থেকে তারা মাঠের পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে নিচ্ছেন। ডিসিরাও নিজ উদ্যোগে সময়ে সময়ে সার্বিক পরিস্থিতি জানাচ্ছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ইতিমধ্যে ডিসিদের চারটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে সব ধরনের অনিয়ম শক্ত হাতে দমন করা; সামাজিক দূরত্ব শতভাগ নিশ্চিত করা;  আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং দ্রব্যমূল্যের বাজার মনিটরিং করা। একই সঙ্গে মাঠ প্রশাসন চালাতে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিলেটের ডিসি জানিয়েছেন, প্রবাসীরা সামাজিক দূরত্বের বিষয় মানতেই চাইছেন না। তাদের ঘরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে সুনামগঞ্জের ডিসি সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে গলি-মহল্লার মুদিদোকান বন্ধ রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, অনেক মুদিদোকানেই চা বিক্রি হয়। ফলে এসব দোকানে পণ্য কিনতে গিয়ে ক্রেতারা আড্ডা জমিয়ে ফেলছেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে মন্ত্রিপরিষদে জানানো হয়েছে, কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য বিপুলসংখ্যক লোকের উপস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণ করছেন। সরকারি ত্রাণ ব্যক্তি উদ্যোগের ত্রাণ বলেও প্রচারের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে তিনি কোনো সমন্বয় করছেন না। মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) নিজে থেকেই ত্রাণ বিতরণ করছেন। ডিসির সঙ্গে কোনো রকম সমন্বয় করছেন না বলে অভিযোগ এসেছে। সাতক্ষীরার ডিসি জানিয়েছেন, সদর উপজেলার ভোমরা স্থলবন্দরটি জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করা দরকার। কারণ ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে। লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে লক্ষ্মীপুরে টহল দলের অবস্থান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। কুমিল্লা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি টহল দল তার এলাকায় প্রতিদিন এসে ডিউটি করে রাতেই চলে যায়। নারায়ণগঞ্জের ডিসি জানিয়েছেন, তার প্রশাসনিক চেইনের লোকজন ও পুলিশের উপস্থিতি ঠিক থাকলেও অন্য দফতরের সরকারি কর্মকর্তাদের জরুরি প্রয়োজনের সময় পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি ছুটিতে সব সরকারি দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিজ নিজ কর্মস্থল না ছাড়ার নির্দেশ থাকলেও অনেকেই সেটি মানছেন না। এ রকম আরও অসংখ্য অভিযোগ এসেছে বিভিন্ন জেলা থেকে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আসা এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর