বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন

দিন যতই এগোচ্ছে পৃথিবীর পরিস্থিতি ভয়াবহ থেকে আরও ভয়াবহ হচ্ছে। সবচেয়ে ভয়ের কথা হলো- বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর খারাপ হচ্ছে। অন্যান্য দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর চেয়ে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা বেশি। আর আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে সুস্থ হওয়ার চেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এতে করে জনমনে আতঙ্কও বাড়ছে। অথচ পরিস্থিতি যেমনই হোক, আতঙ্কিত হওয়া কোনো সমাধান নয়। যার সঙ্গেই কথা বলি, এক ধরনের ভয়, হতাশার সুরই শুনতে পাই। অথচ এই যে মৃত্যুর মড়ক লেগেছে এতেও কিন্তু আল্লাহ বিশ্বাসী একজন বান্দার বিচলিত হওয়া কিংবা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যেহেতু আমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করি, ভালো-মন্দ যা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় এটাও বিশ্বাস করি এবং এও বিশ্বাস করি যে, আমাদের নির্ধারিত সময়ের এক মুহূর্ত আগেও মৃত্যু হবে না তাহলে এত আতঙ্ক কেন। কেন আমাদের কণ্ঠে হতাশার সুর।

এ মুহূর্তে আতঙ্কিত না হয়ে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। আফসোস! সচেতন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। সরকার থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সবাই হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। হোম কোয়ারেন্টাইন অর্থ স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী থাকা। বাইরে চলাফেরা থেকে বিরত থাকা। এ ধরনের নির্দেশ রসুল (সা.)ও দিয়েছেন। আম্মাজান আয়েশা (রা) বলেন, আমি মহানবী (সা.)কে মহামারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, মহামারী হলো খোদার এক ধরনের আজাব। কোনো ব্যক্তি যদি মহামারী আক্রান্ত এলাকায় থাকে এবং নিজ ঘরে ধৈর্যের সঙ্গে সাওয়াবের নিয়তে এ বিশ্বাস বুকে নিয়ে অবস্থান করে যে, আল্লাহতায়ালা তাকদিরে যা রেখেছেন তার বাইরে কিছুই হবে না; তাহলে সে আলাহর কাছে শহীদি মর্যাদা পাবে। (মুসনাদে আহমাদ)। যেসব এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ ওইসব এলাকা সরকারিভাবে লকডাউন করে দেওয়া হেয়েছে। আমরা লকডাউনও মানছি না। অথচ লকডাউন মানাও ইসলামের একটি বিধান। লকডাউন মানে বন্ধব্যবস্থা। এটা প্রশাসনিক বা সরকারি ব্যবস্থা। এর মানে হলো বিমান বন্ধ, সীমানা বন্ধ, চলাচল বন্ধ, রাস্তাঘাট বন্ধ। মহামারী আক্রান্ত এলাকায় প্রবেশ করতে মহানবী (সা.) নিষেধ করেছেন। আবার মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে মৃত্যুর ভয়ে নিজ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতেও নিষেধ করেছেন। তিনি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যদি কোথাও মহামারীর সংবাদ শোনো তাহলে কিছুতেই সেখানে যাবে না। আর যদি তোমাদের বসবাসের শহরে মহামারী দেখা দেয় তাহলে সেখান থেকে পালিয়ে যেও না।’ (মুসলিম শরিফ।) মহামারী অঞ্চলে প্রবেশ করা কিংবা মৃত্যুর ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়া শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম। (আউনুল মাবুদ।) যারা নিজেদের অসুস্থ মনে করবে কিংবা মনে হবে শরীরটা খারাপ লাগছে, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আইসোলেশনে থাকো। আইসোলেশন-এর অর্থ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন থাকা। এর মানে অকারণে বাইরে যাওয়া যাবে না। গণপরিবহনে পারতপক্ষে ওঠা যাবে না। আর যারা সম্ভাব্য রোগীদের সংস্পর্শে ছিলেন বা নিশ্চিতভাবে করোনায় আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে মিশেছেন, তারা নিজেকে ঘরে আলাদা রাখবে। নিজের স্বাস্থ্য নিজে পর্যবেক্ষণ করবে। জনবিচ্ছিন্ন এসব কর্মকৌশল ও নির্দেশনা সাহাবিদের যুগেও পাওয়া যায়। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) এর সময় ফিলিস্তিনে মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তখন মিসর বিজেতা হজরত আমর ইবনে আস (রা.) সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এ মহামারী মোকাবিলায় সবাইকে ছোট ছোট দলে ভাগ করে নির্দেশ দেন- তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পাহাড়ে চলে যাও। তিনি সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং জারি করে বলেন যে, কেউ কারও সঙ্গে মিশতে পারবে না। আলাদা আলাদা দলে বিভক্ত হয়ে তারা দীর্ঘদিন পাহাড়ে আইসোলেশনে থাকেন। (তারিখে দিমাশক) এসব নির্দেশনা মেনে চলা নিজেদের জন্য যেমন সেফটি আবার আখিরাতের জন্যও সওয়াবের উৎস। আসুন সরকারের এ নির্দেশনাগুলো আমরা মেনে চলি। নিজে সুস্থ থাকি, সবাইকে সুস্থ রাখি। লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কুরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি। www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর