বুধবার, ১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

ত্রাণ অনিয়মে জড়িতদের কাউকে ছাড় দিইনি

নিজামুল হক বিপুল

ত্রাণ অনিয়মে জড়িতদের কাউকে ছাড় দিইনি

তাজুল ইসলাম

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, এই করোনাকালে আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মানুষকে সচেতন করে তোলাসহ নানারকম উদ্যোগ নিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব মো. জহিরুল ইসলামকে প্রধান করে আমরা একটা সেল গঠন করেছি। করোনাকালে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম তদারকির জন্য দুজন যুগ্ম-সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একইভাবে সারা দেশে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে তদারকি করার জন্য একজন যুগ্ম-সচিব ও একজন উপসচিবকে  নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব রাজাবাজার এলাকাকে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে লকডাউন করেছিলাম। এ কাজে উত্তর সিটির মেয়র ও ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। এখান থেকে আমরা একটা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। সেটিকে এখন কাজে লাগানো হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারীর যেসব এলাকায় করোনা রোগীদের উপস্থিতির মাত্রা বেশি সেরকম কিছু এলাকাকে লকডাউন করতে সোমবার আমাদের চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠির আলোকে আমরা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে দায়িত্ব দিয়েছি। সিটি করপোরেশন সব সংস্থার সঙ্গে পরামর্শ করে ওয়ারীতে আগামী ৪ জুলাই থেকে লকডাউন কার্যকর করবে।  

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের মধ্যে কিছু অসঙ্গতি আছে। জনপ্রতিনিধিদের মধ্যেও ত্রুটিযুক্ত লোক আছে। ভালো লোকও আছে। করোনাকালে সারা দেশে ত্রাণ নিয়ে যেসব জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সেই সংখ্যা খুবই নগণ্য। পয়েন্ট ৫ শতাংশের বেশি না। তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে ত্রাণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর কাউকে কাউকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন। কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। আমরা আগেই বলেছিলাম, ত্রাণ নিয়ে কোনো রকম অনিয়ম সহ্য করা হবে না। রাজধানীর খাল প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে সভাপতি করে খাল ও নদী উদ্ধার, দখল ও দূষণমুক্ত করা ও নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে একটি কমিটি করা হয়েছে। সেখানে নৌ পরিবহন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় যুক্ত আছে। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরীতে ৩৯টি খাল আছে। সেগুলো নিয়ে একটা মাস্টারপ্ল্যান আছে। এর মধ্যে ২৬টি খাল উদ্ধার, দূষণ ও দখলমুক্ত করে স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে ঢাকা ওয়াসা কাজ করছে। বাকি ১৩টি খাল নিয়ে দুই সিটি করপোরেশন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত অধিদফতর কাজ করছে। ইতিমধ্যে অনেক খাল উদ্ধার ও সংস্কার করা হয়েছে। আমি ইতিমধ্যে এসব খাল পরিদর্শন করেছি। কোথাও কোনো খালে কচুরিপানাসহ অন্য কোনো কারণে দূষিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাই সবাই খাল পরিষ্কর-পরিচ্ছন্ন রাখতে তৎপর রয়েছে। ঢাকার প্রধান সমস্যা মশা এবং ডেঙ্গু সম্পর্কে তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে ১১৪ প্রকারের মশা রয়েছে বলে গবেষকরা বলেছেন। এর মধ্যে এডিস, কিউলিস ও এনাপলিস মশার আধিক্য সবচেয়ে বেশি। এই তিন প্রকার মশার মধ্যে এডিস মশা গত বছর ডেঙ্গু ছড়িয়ে আমাদের মাথাব্যথার কারণ হয়েছে। তিনি বলেন, এ বছর আমরা মশার মৌসুম শুরুর আগেই অর্থাৎ গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস থেকেই মশা নিধনে প্রস্তুতি নিয়েছি। গুণগত মানসম্পন্ন কীটনাশকের ব্যবস্থা করেছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, এ বছর শুরু থেকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মশার ব্যাপারে সতর্ক করেন। এ জন্য আমরা শুরু থেকেই মশা দমনে মাঠে সক্রিয় হই। দুই সিটি করপোরেশনে কীটনাশন মজুদ করি। ফগার মেশিনের ব্যবস্থা করা হয়। দুই সিটিতে তিন হাজার করে লোক নিয়োগ দেওয়া হয় ফগার মেশিন চালানোর জন্য। দুই সিট মেয়রেরও আন্তরিক ভূমিকা ছিল। শুধু তাই নয়, দুই সিটিতে ১০ জন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য। ম্যাজিস্ট্রেটরা বাসাবাড়িতে গিয়ে অভিযান চালান। শুধু উত্তর সিটি করপোরেশনে ১ লাখ ৮৪ হাজার বাড়ি পরিদর্শন করেন। এর মধ্যে ২০ হাজার বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। তাদের বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও যখন অনেক বাড়িওয়ালা নিজেরা লার্ভা নির্মূলের পদক্ষেপ নেননি তখন মোবাইল কোর্ট বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, আমরা এডিস মশার বিরুদ্ধে টিভিসি নির্মাণ করেছি। ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছি। তিনি বলেন, ৯৫ শতাংশ মশা বাসাবাড়িতে জন্ম নেয়। এ জন্য আমি এটিকে এলিট মশা বলি। বাসাবাড়ির ছাদে, ফুলের টবে, ফ্রিজের নিচে জমা পানি, পরিত্যক্ত টায়ারের মধ্যে জমা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। তিনি বলেন, নির্মাণাধীন বাড়ির ১০ হাজার স্কয়ার ফুটের ছাদে মাত্র আড়াইশ গ্রাম কেরোসিন ঢেলে দিলেই এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। 

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারের অনেক মন্ত্রীই এবার সংকটকালে ব্যাপক কাজ করেছেন। বিশেষ করে আমাদের কৃষিমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ব্যাপক তৎপর ছিলেন। কৃষিমন্ত্রীর কাজ তো আমাদেরকে উৎসাহ দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি মানুষের কষ্ট লাঘবের। তাদের পাশে থাকার। এই করোনাকালেও আমি প্রতিদিন অফিস করছি, বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করেছি।

সর্বশেষ খবর