শুক্রবার, ১০ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা ল্যাব বাড়লেও টেস্ট বাড়েনি

কিট সংকট বড় কারণ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

করোনা ল্যাব বাড়লেও টেস্ট বাড়েনি

দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্তে প্রতিদিনই ল্যাব বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় বাড়ছে না নমুনা টেস্টের সংখ্যা। কিটের সংকটে অনেক ল্যাবের সক্ষমতা সত্ত্বেও শনাক্ত কাজ চলছে ঢিমেতালে। পুরনো মডেলের মেশিন কেনায় মিলছে না কিট। এর সঙ্গে রয়েছে স্বাস্থ্য খাতের সিন্ডিকেটের যোগসাজশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ জুন দেশের ৫৯টি ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৭ হাজার ৫২৭টি। শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গতকাল ৭৫টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৫ হাজার ৬৭২টি। শনাক্তের হার ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ। ১৬টি ল্যাব বাড়লেও নমুনা শনাক্তকরণ কমেছে ১ হাজার ৮৫৫টি। তাই নতুন ল্যাব বাড়ালেও নমুনা শনাক্ত বৃদ্ধিতে কোনো কাজে আসছে না। অধিকাংশ ল্যাবে তিন শিফটে কমপক্ষে ২৭০টি নমুনা শনাক্ত করা সম্ভব। অথচ কিটের অভাবে প্রায়ই বন্ধ থাকছে বিভিন্ন ল্যাব। গতকাল বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের ল্যাবে, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি ল্যাবে কোনো নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে গতকাল নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র ১৩১টি। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৩৬টি। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ল্যাবে ৪৬টি, রংপুর মেডিকেল কলেজের ল্যাবে ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। অথচ এসব হাসপাতালে উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের লাইন সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন নমুনা নিয়ে রেখে পরীক্ষা করতে না পারায় নষ্ট হচ্ছে এর গুণগত মান। দীর্ঘদিনের রেখে দেওয়া নমুনা থেকে ফল না আসায় অনেক সময় পুনরায় নমুনা সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অধিকাংশ হাসপাতালে এর চেয়ে বেশি নমুনা শনাক্তে সক্ষমতা ও জনবল থাকলেও মিলছে না চাহিদামাফিক কিট। ফলে নমুনা সংগ্রহ করলেও পরীক্ষা হচ্ছে কম। দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা। এ সময় করোনা পরীক্ষায় কিটের স্বল্পতা এই মহামারী নিয়ন্ত্রণে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিটের সংখ্যা বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান নিম্নে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ক্রান্তিকালে কিটের সংকট ভীষণ উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। কেননা, এর কারণে শুধু আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করাই বিলম্বিত হচ্ছে তা নয়, কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠেছেন কিনা তাও জানা যাচ্ছে না।

তারা বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেশের জনসংখ্যার বিচারে যথেষ্ট সংখ্যক মানুষের করোনা পরীক্ষা করছে না। এখনো প্রতিদিন করোনা পরীক্ষা ১৬ হাজারের মধ্যে রয়েছে, যা অন্তত ২০ হাজার হওয়া উচিত। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের হিসাবে, গতকাল পর্যন্ত দেশে ৮ লাখ ৮৯ হাজার ১৫২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাবে বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখ লোকের মধ্যে ৫ হাজার ৪১৬ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার প্রতি ২৫০ জনে একজনকে পরীক্ষা করতে পারছে। দেশে করোনা মহামারীর প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। দেশে করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে করোনা প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার নমুনা পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। নমুনা পরীক্ষার তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এক দিনে সর্বোচ্চ ১৮ হাজারের কাছাকাছি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। কয়েকদিন ধরে তা আবার কমে আসছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে ব্যবহৃত আরটিপিসিআর মেশিনে লাল এবং হলুদ দুই ধরনের কিট ব্যবহার হয়। হলুদ মেশিনের কিট সঠিক সময়ে আমদানি না করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। কিছু মেশিন পুরনো মডেলের হওয়ায় সেগুলোর কিট পাওয়াও মুশকিল হয়ে পড়েছে। কিট ও মেশিন আমদানিতে নির্দিষ্ট কিছু ঠিকাদারের যোগসাজশও রয়েছে। ভাইরাস বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে টেস্টের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এজন্য ল্যাব বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু ল্যাব বাড়ানোর পরও যদি টেস্ট না বাড়ে তাহলে লাভ নেই। যত দ্রুত আক্রান্ত শনাক্ত করে তাদের আলাদা করা যাবে তত দ্রুত আমাদের সংক্রমণের হার কমবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর