শুক্রবার, ১০ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

ভিয়েতনামে মানব পাচারকারী চক্রের তিনজন গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পল্টন থেকে ভিয়েতনামে মানব পাচারকারী চক্রের প্রধানসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এরা হলেন চক্রের মূল হোতা জামাল উদ্দিন ওরফে সোহাগ, কামাল হোসেন ও জামাল হোসেন। তাদের কাছ থেকে ২৪৫টি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার বিকালে পুরানা পল্টনের মাশ ক্যারিয়ার সার্ভিস ও দি জে কে ওভারসিজ লিমিটেডে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব বলছে, এরা অবৈধভাবে ভিয়েতনাম গিয়ে আটকে পড়া ২৭ জন ও ভিয়েতনাম-ফেরত ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিক পাচারের সঙ্গে জড়িত। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রকিবুল হাসান জানান, ভিয়েতনামে আটকে পড়া ও ভিয়েতনাম-ফেরতের সঙ্গে মাশ ক্যারিয়ার সার্ভিস, দি জে কে ওভারসিজ লিমিটেড, অ্যাডভেন্ট ওভারসিস লিমিটেড, মেসার্স সন্ধানী ওভারসিস লিমিটেড, আল নোমান হিউম্যান রিসোর্স লিমিটেডসহ স্থানীয় দালাল এবং ভিয়েতনামে বাংলাদেশি দালাল আবদুল জব্বার, মোস্তফা, গোলাম আজম সুমন, কল্পনা, আজমির, মিলন, শোভন, আতিকের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সত্যতা পাওয়া যায়। গ্রেফতার ব্যক্তিরা ৩৮ জনকে পাচারের কথা স্বীকার করেছেন। তারা একাধিকবার ভিয়েতনামে গিয়ে সেখানকার দালালদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ভিয়েতনামের দালালরা জানান, বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায়িক উদ্যোক্তাদের ভিয়েতনামে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এজেন্সিগুলো বাংলাদেশের সাধারণ লোকজনকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা বেতনে ভিয়েতনামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে আয় করা সম্ভব বলে প্রলোভন দেখায়।

প্রলুব্ধ হয়ে নিরীহ সাধারণ লোকজন ভিয়েতনামে যেতে আগ্রহ দেখান। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক ভিয়েতনামগামী ব্যক্তির কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা করে নেয় তারা। ওই টাকার বিনিময়ে গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের পাসপোর্ট বানানো হয় এবং পাসপোর্টের তথ্যসমূহ ভিয়েতনামের দালালদের কাছে পাঠানো হয়। ভিয়েতনামের দালালরা ওই পাসপোর্টের তথ্যানুযায়ী ভিয়েতনাম থেকে অফার লেটার (ভিয়েতনামের ভাষায়) বাংলাদেশের এজেন্সিগুলোয় পাঠায়। অফার লেটারের মাধ্যমে ভিয়েতনাম অ্যাম্বাসি থেকে ভিসা সংগ্রহ করা হয়। সাধারণত বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ভিয়েতনাম সরকার স্বল্প মেয়াদে (সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য) বিনিয়োগকারীকে ডিএন ভিসা দিয়ে থাকে।

ডিএন ভিসায় ভিয়েতনামে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে নগদ অর্থ নিয়ে যেতে হয়। ওইসব প্রতিষ্ঠান প্রত্যেক অভিবাসীকে ২ হাজার মার্কিন ডলার নিয়ে যেতে বাধ্য করে। ভিয়েতনামে যাওয়ার পর সেখানকার দালালরা তাদের বিমানবন্দরে রিসিভ করে পাসপোর্ট নিজেদের জিম্মায় নিয়ে আটক রাখে। পরে তাদের জিম্মি করে পরিবারের কাছে টাকা দাবি করে। তাদের কোনো স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে বিভিন্ন সময় ছোট ছোট কাজ দেওয়া হয়। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তিদের পক্ষে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন সম্ভবপর হয় না। তারা ভিয়েতনামে মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকেন। কুমিল্লার নাজমুল হাসান মার্চের মাঝামাঝি অসুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় ৩ এপ্রিল ভিয়েতনামে মারা যান। নাজমুলের স্বজনরা স্থানীয় দালাল ও দি জে কে ওভারসিজ লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি। ২৭ জুন ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটির মুসলিম কলোনিতে নাজমুলের দাফন সম্পন্ন হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান র‌্যাব-৩ অধিনায়ক।

জানা গেছে, দি জে কে ওভারসিজ লিমিটেড ২০১৯ সালের নভেম্বরে ডিএন ভিসার মাধ্যমে ১৪ বাংলাদেশিকে ভিয়েতনামে পাঠায়, যাদের আজ পর্যন্ত কাজের সুযোগ মেলেনি। ফলে এসব শ্রমিক অর্ধাহার-অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মাশ ক্যারিয়ার সার্ভিস, যাদের কোনো নিজস্ব রিক্রুটিং লাইসেন্স নেই, দীর্ঘদিন ধরে অন্য এজেন্সির লাইসেন্স ব্যবহার করে স্থানীয় পর্যায়ে দালাল নিয়োগের মাধ্যমে ভিয়েতনামে অভিবাসী পাঠিয়ে আসছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর