মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
চট্টগ্রাম

সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

টিকিটের কৃত্রিম সংকটে পড়ে নিকষ অন্ধকারে পতিত রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। বাংলাদেশ বিমানসহ বিভিন্ন বিমান সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও মিলছে না কাক্সিক্ষত টিকিট। যারা পাচ্ছেন তাদেরও স্বাভাবিক সময়ের কয়েকগুণ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে টিকিট। সংকটের কারণে কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি চট্টগ্রামের লাখো প্রবাসী। টিকিটের এ কৃত্রিম সংকটে দেশেই আটকা পড়ছেন প্রবাসীরা। এতে তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চাকরি হারানোর শঙ্কা। অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ বিমানের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বলেন, ‘টিকিটের কৃত্রিম সংকটের কোনো সুযোগ নেই বিমানে। কোনো সিন্ডিকেটও নেই। চাহিদার তুলনায় কম ফ্লাইট হওয়ার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন খান বলেন, ‘দেশে আটকে পড়া প্রবাসীদের আমিরাতে ফিরতে এখন বড় কোনো বাধা নেই। প্রবাসীরা এখন চাইলেই ‘আরআইসিএ’ ছাড়াই আসতে পারছে। দেশ থেকে দ্রুত প্রবাসীদের ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’ অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ (আটাব) চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতা আবদুল মান্নান বলেন, ‘সিন্ডিকেট করে তিনগুণ বেশি দামে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তার ওপর কৃত্রিম সংকট তৈরি করে টিকিটের মহাসংকট তৈরি করা হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার প্রবাসী ট্রাভেল এজেন্টের কাছে টিকিটের জন্য ধরনা দিলেও সংকটের কারণে টিকিট দেওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিমান উদ্যোগ নিলে সংকট কিছুটা হলেও নিরসন হবে।’ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা এম এ মুছা বলেন, ইউএই সরকার ঘোষণা দিয়েছে আবুধাবিতে অবতরণকারী রেসিডেন্স ভিসাধারী কাউকে রেসিডেন্সিয়াল আইডেন্টিটি অ্যান্ড সিটিজেনশিপ অ্যাপ্রুভালের (আরআইসিএ) প্রয়োজন পড়বে না। এতে করে দেশে আটকে পড়া প্রবাসীদের আমিরাতে ফেরা আরও সহজ হয়েছে। কিন্তু ফ্লাইট সংকটের কারণে আটকে পড়া অনেক প্রবাসী ফিরতে পারছে না। দ্রুত কর্মস্থলে ফিরতে না পারলে চাকরি হারা হবে হাজার হাজার প্রবাসী।’ জানা যায়, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে স্বাভাবিক সময়ে সপ্তাহে গড়ে ১৪০টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠা-নামা করত। ৯টি আন্তর্জাতিক রুটের সিংহভাগের গন্তব্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ। এ বিমানবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক রুটগুলোতে প্রতি মাসে যাত্রী পরিবহন হতো গড়ে ৮০ থেকে ৯০ হাজার। যার উল্লেখযোগ্য সংখক ছিল মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের প্রবাসী শ্রমিক। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার আগে কয়েক মাসে দেশে বেড়াতে এসেছে চট্টগ্রামের দেড় থেকে দুই লাখ প্রবাসী শ্রমিক। করোনা পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় তারা ফিরতে পারেনি কর্মস্থলে। ফলে তারা দেশেই আটকা পড়ে। বর্তমানে সীমিত পরিসরে বিমান চলাচল শুরু হলেও প্রবাসীদের কর্মস্থলে ফেরার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃত্রিম টিকিট সংকট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল না করা। এ দুই সংকটের কারণে দেশে আটকা রয়েছে চট্টগ্রামের লাখো প্রবাসী। এ সংকট চলতে থাকলে চাকরি হারা হতে পারে হাজার হাজার প্রবাসী। অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশ বিমানের কতিপয় কর্মকর্তা এবং কিছু ট্রাভেল এজেন্সি আঁতাত করে টিকিটের মহাসংকট তৈরি করেছে। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে একেকটি টিকিটে দাম বৃদ্ধি করেছে কয়েকগুণ। টিকিটে কৃত্রিম সংকট ও দাম বৃদ্ধি করায় সংকটে পড়েছে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। ইউএইর দুবাই প্রবাসী বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘স্বাভাবিক নিয়মে গিয়ে টিকিট নিতে পারিনি। পরে বাংলাদেশ বিমানের এক কর্মকর্তার কাছ থেকে টিকিট নিতে হয়েছে তাও এক লাখ টাকায়। অথচ স্বাভাবিক সময়ে রিটার্ন টিকিটের দাম আসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এখন এক পথের টিকিটের দাম নেওয়া হয়েছে লাখ টাকা।’ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যানেজার কমোডর সরওয়ার ই জাহান বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে মাসে গড়ে ৮০ থেকে ৮৫ হাজার আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রী পরিবহন হতো। বর্তমানে এটা শূন্য। চট্টগ্রাম থেকে যারা মধ্যপ্রাচ্য যাচ্ছে তারা মূলত ঢাকা থেকে ট্রানজিট নিয়ে যাচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর